দিনের পর দিন ভয়ানক এক অমানবিক প্রথা চলে আসছে মহারাষ্ট্রের এই গ্রামে। খরাপ্রবণ এই গ্রামের মানুষের এক মাত্র রুজি রুটির পথ আখ চাষ। আর এই পেশায় অংশ নিতেই গ্রামের মহিলাদের ডিম্বাশয় কেটে বাদ দিতে হয়।
সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, এই গ্রামের প্রায় অর্ধেকের বেশি মহিলাকে কেটে ফেলতে হয়েছে তাঁদের ডিম্বাশয়। এই গ্রামে একমাত্র আখ চাষের উপরে মানুষকে নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। কৃষক একদিন ছুটি নেওয়া মানে ব্য়াপক ক্ষতি। তাই কোনও ঋতুমতী মহিলাকে এই কাজে নেওয়া হয় না। তাই রীতিমতো বাধ্য হয়ে ডিম্বাশয় কেটে বাদ দিতে হয় মহিলাদের।
গ্রামের মহিলারাই জানান, ঠিকাদাররা মনে করেন ঋতুস্রাব চলাকালীন মহিলাদের কাজ করার ক্ষমতা অনেক কমে যায়। দ্রুত কাজ করতে পারেন না। তাই ডিম্বাশয়-যুক্ত মহিলাকে কাজে নেওয়া হয় না। যাতে টানা ৬ মাস কাজ করতে পারেন মহিলারা তার জন্য ডিম্বাশয় কেটে বাদ দিতে রীতিমতো বাধ্য করা হয় তাঁদের।
দুই থেকে তিন সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরেই মহিলাদের ডিম্বাশয় কেটে বাদ দিতে হয়। বছরের পর বছর ধরে এমনই চলে আসছে। আর বেঁচে থাকার লড়াইয়ে মহিলাদেরও মেনে নিতে হচ্ছে এই নৃশংস নিয়ম। এমনকী এই প্রথা এতটাই ঘৃণ্য যে, ঠিকাদাররা প্রথমে মহিলাদের অস্ত্রপচার করে ডিম্বাশয় বাদ দেওয়ার টাকা দেয়। তার পরে সেই মহিলা কাজে যোগ দিলে পুরো টাকাটাই তাঁর রোজগারের থেকে আদায় করে। কয়েকজন মহিলা রয়েছেন যাঁরা মাত্র ২৫ বছর বয়সেই অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য় হয়েছেন।
অক্টোবর থেকে মার্চ এই সময় আখ কাটা হয়। ঠিকাদাররা একজন স্বামী-স্ত্রীর যুগলকে একজন হিসেবে গণ্য করে। দুজনকে মোট দিনে ২৫০ টাকা দেওয়া হয়। এই সময়ে একদিনও ছুটি নেওয়া যায় না। আখ কাটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রস না বের করলে আখ শুকিয়ে যায়। তাই একদিন ছুটি নিলেই ৫০০ টাকা জরিমানা নেওয়া হয়।
আখ কাটার মরশুমে ক্ষেতের পাশেই তাঁবু খাঁটিয়ে কৃষকরা থাকেন। শৌচালয় না থাকায় ঋতুমতী মহিলাদের অসুবিধায় পড়তে হতে পারে,এই সব ভেবেই ডিম্বাশয় বাদ দিতে বাধ্য হন মহিলারা। তবে এভাবে শরীর থেকে ডিম্বাশয় বাদ দিলে অদূর ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। কম বয়সে ডিম্বাশয় কেটে বাদ দিলে মহিলাদের হরমোন জনিত সমস্যা হয়। কিন্তু এসব কিছু নিয়েই ভাবিত নয় গ্রামের পুরুষরা।