১৮৮১ সালে আবিষ্কার হলেও এতদিন খোলা যায়নি মিশরীয় (Egypt) ফারাও প্রথম আমেনহোতেপ-এর (Amenhotep I) মমি। সম্প্রতি ডিজিটাল পদ্ধতিতে, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের (Cairo University) একদল গবেষক মমিটি উন্মোচিত করলেন।
অবশেষে সমাধান হল মিশরীয় (Egypt) ফারাও প্রথম আমেনহোতেপ-এর (Amenhotep I) মমি-রহস্য। ১৮৮১ সালে এই মমিটি (Mummy) খুঁজে পাওয়াগিয়েছিল। কিন্তু, প্রায় ৩৫০০ বছরের পুরোনো মমিটি এতটাই খারাপ অবস্থায় ছিল, যে এর আগে সেটি খুলে, আমেনহোতেপের দেহাবশেষ বের করার সাহস পর্যন্ত করেননি প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। ফলে ১৯ এবং ২০ শতকে মিশরীয় রাজ পরিবারের যতগুলি মমি আবিষ্কৃত হয়েছিল, তারমধ্যে এই মমিটির রহস্যই এতদিন সমাধান হয়নি। এবার খোলা হল। তবে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে। কী পাওয়া গেল তার ভেতর থেকে, আসুন জেনে নেওয়া যাক -
ফারাও প্রথম আমেনহোতেপ-এর মমিটি, মিশরের প্রাচীনতম মমিগুলির অন্যতম। মমিটি খুলে দেহাবশেষ বের করতে গেলে, সেটি পুরোই নষ্ট হয়ে যাবে, এই আশঙ্কায় এতদিন এই মমিটি নিয়ে কোনও গবেষণাই করা যায়নি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির উন্নতি ঘটেছে। এখন, মমিটিকে নষ্ট না করেই তার রহস্য সমাধান সম্ভব। সম্প্রতি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের (Faculty of Medicine at Cairo University) রেডিওলজির অধ্যাপক এবং মিশরীয় মমি প্রকল্পের (Egyptian Mummy Project) রেডিওলজিস্ট ড. সাহার সেলিম এবং তাঁর দল ত্রি-মাত্রিক কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি স্ক্যানিং বা সিটি স্ক্যানিং (CT Scanning) ব্যবহার করে মমিটির সব মোড়ক অনাবৃত করেছেন। মঙ্গলবার ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেডিসিন (Frontiers in Medicine) জার্নালে, তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন - পিরামিডের সামনে উপচে পড়ছে যৌবন - 'অনুপযুক্ত' ফটোশ্যুট করে আটক মডেল, আলোড়ন নেটদুনিয়ায়
আরও পড়ুন - যৌন কামনা বশে রাখতে যৌনাঙ্গচ্ছেদ, বাবা-মা-এর কুসংস্কারের বলি ১২ বছরের কিশোরী
আরও পড়ুন - তাঁর রূপের খ্যাতি ভূবনজুড়ে, তবে ক্লিওপেট্রার জীবনের থেকে মৃত্যু অনেক বেশি রহস্যময়
মমিটির উপরে ব্যান্ডেজ ছিল, তারও উপরে ছিল কাঠের তৈরি মুখোশ। নয়া প্রযুক্তির ফলে সেগুলির কোনওরকম ক্ষতি না করেই ফারাওকে প্রথম আমেনহোতেপ-এর মমিটির বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করা গিয়েছে। সেলিম এবং তার সহকর্মীরা জানতে পেরেছেন, মৃত্যুর সময় প্রথম আমেনহোটেপের বয়স ছিল প্রায় ৩৫ বছর। উচ্চতা ছিল ৫.৫ ফুট। তাঁর দাঁত ছিল সু-উন্নত এবং কোনও রকম ক্ষয় ছিল না। উপরের পাটির দাঁত একটু প্রসারিত ছিল। চিবুক ছিল সরু। ছোট, কিন্তু টিকোলো নাক। মাথার চুল কোঁকড়ানো।
১৫২৫ থেকে ১৫০৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - অর্থাৎ, প্রায় ২১ বছর মিশর শাসন করেছিলেন প্রথম আমনহোতেপ। তিনি ছিলেন মিশরের ১৮তম রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা। তাঁর শাসনকাল ছিল শান্তিপূর্ণ, তিনি মিশর জুড়ে বহু মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তবে, বিভিন্ন হায়ারোগ্লিফিক্স (Hieroglyphics) অনুযায়ী প্রাচীন সমাধি লুঠেরারা তাঁর মমিটির ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। চার শতাব্দীরও পরে, ২১তম রাজবংশের শাসনের সময়, পুরোহিত এবং এমব্লেমাররা, প্রথম আমনহোটেপের মমিটির মেরামত করেছিলেন। তাঁকে ফের সমাধিস্থ করা হয়েছিল।
মমিটি অধ্যয়নের আগে, সেলিম এবং অন্যান্য গবেষকরা ভেবেছিলেন, ওই পুরোহিত এবং এ্যাম্বালমাররা পরবর্তী ফারাওদের জন্য ব্যবহার করার জন্য মমিটি থেকে তাবিজ ও সোনার অলঙ্কারের মতো কিছু জিনিস খুলে নিয়েছিলেন। সেই সময় অনেক ক্ষেত্রেই এরকমটা করা হত। কিন্তু, এই ক্ষেত্রে তা হয়নি। মমিটির মোড়কের মধ্য থেকে প্রায় ৩০ টি সোনার তাবিজ এবং একটি অনন্য সোনার কোমরবন্ধ পাওয়া গিয়েছে। দেহাবশেষে সমাধি লুঠেরাদের একাধিক আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু, এমন কোনও ক্ষত বা বিকৃতি তাঁরা ফারাওয়ের দেহে পাননি, যা থেকে বোঝা যায়, কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। তাই সেই রহস্য, রহস্যই থেকে গিয়েছে।