যতই নিজেদের পাল্টে ফেলার দাবি করুক, মহিলাদের উপর ইতিমধ্যেই অত্যাচার শুরু করেছে তালিবানরা। এমনটাই অভিযোগ করলেন আফগানিস্তানের প্রাক্তন মহিলা বিচারপতি।
কথাতেই আছে, 'স্বভাব যায় না মলে'। আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের আগে থেকেই তালিবানরা এমন একটা ভাব করছে, যে মনে পড়ছে সেই বিজ্ঞাপনের লাইন - 'উল্টে দেখুন, পাল্টে গেছি'। তা যে স্রেফ বিজ্ঞাপনী চমক ছাড়া কিছুই না, তা যতই দিন যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে। ইসলামি কাঠামোর মধ্যে মহিলাদের অধিকার রক্ষার আশ্বাস দেওয়ার পরও, কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সদস্যরা আফগান মহিলাদের উপর যারপরনাই নির্যাতন চালাচ্ছে এবং তাঁদের হত্যা করছে। স্কাই নিউজকে এমনই জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের প্রাক্তন বিচারপতি নাজলা আইয়ুবি।
তাঁর দাবি, বর্তমানে আমেরিকাতে থাকলেও তিনি আফগানিস্তানে থাকা মহিলাদের সঙ্গে কথা বলছেন। দেশে যে মহিলাদের প্রতি খারাপ আচরণ এবং হিংসা শুরু হয়ে গিয়েছে, তার উদাহরণ তিনি পেয়েছেন। নাজলার অভিযোগ, তালিবানরা সাধারণ আফগান পরিবারগুলিকে তাদের খাবার সরবরাহ করতে এবং তাদের জন্য রান্না করে দিতে বাধ্য করছে। শুধু তাই নয়, শুধুমাত্র রান্নার স্বাদ ভাল লাগেনি বলে, সম্প্রতি এক মহিলাকে তারা জীবন্ত অবস্থায় গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যা করেছে বলেও জানতে পেরেছেন তিনি।
এছাড়াও, গত কয়েক সপ্তাহে বহু যুবতী নারীকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করার জন্য তুলে নিয়ে গিয়েছে তালিবানরা, এমন খবরও পেয়েছেন প্রাক্তন আফগান বিচারপতি। এই যুবতিদের কফিনের মধ্যে ঢুকিয়ে বন্দি অবস্থায় প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে তারা তাদের কমবয়সী মেয়েদের তাদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য করছে। এই মেয়েদের, তালিবান যোদ্ধাদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে নাজলা আইয়ুবি, 'এভরি উওম্যান ট্রিটি' নামে একটি বৈশ্বিক কর্মসূচির প্রধান। এই প্রকল্প মহিলাদের প্রতি হিংসার অবসানের লক্ষ্যে প্রচার করে। তবে তাঁর জন্ম হয়েছিল আফগানিস্তানেই। ১৯৯০ এর দশকের গোড়ায় তালিবানদের উত্থানের আগেই তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তালিবানদের হাতে দেশের ক্ষমতা চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি বিচারক হিসাবে কাজ করতেন। তাঁর প্রদেশে তিনিই ছিলেন প্রথম মহিলা বিচারক।
২০০১ সালে তালেবানরা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আফগানিস্তানের সংবিধান প্রণয়ণেও বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন নাজলা আইয়ুবি। নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়ার পরই তালিবানরা তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এরপর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় চেয়েছিলেন এবং দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন।
আফগানিস্তানে আর না ফিরলেও নাজলার মনে এখনও দগদগে তালিবানি শাসনের স্মৃতি। তালিবানদের অধীনে জীবনকে তিনি 'দুঃস্বপ্ন' বলে বর্ণনা করেছেন। তালিবানরা ক্ষমতা গ্রহণের আগের দিন পর্যন্ত দেশে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। কিন্তু একদিনের মধ্যে সমাজে তার আর কোনও গুরুত্বই ছিল না। প্রাক্তন বিচারপতি বলেছেন, তাঁকে মুদি দোকানে যেতে গেলে এক প্রতিবেশীর চার বছরের ছেলেকে নিয়ে যেতে হত। কারণ তিনি একজন মহিলা।
আরও পড়ুন - রান্না খারাপ বলেই জ্বালিয়ে দেওয়া হল আফগান মহিলাকে, কফিনে করে যৌনদাসী পাচার করছে তালিবান
আরও পড়ুন - Afghanistan - 'পাকিস্তানের গ্রাস করার কিংবা তালিবানদের শাসনের পক্ষে অনেক বড় দেশ'
আরও পড়ুন - আপন মেয়ের চোখ উপড়ে নিতেও কসুর করেনি তালিবানি বাবা, পুলিশ হতে চেয়েছিল খাতেরা হাশেমি
সেই অবস্থাটা এবারও বিশেষ বদলাবে বলে কেউ আশা করছেন না। বেশ কয়েকজন মহিলা সাংবাদিক জানিয়েছেন, তালিবানরা তাঁদের কাজ করতে বাধা দিয়েছে। রেডিও টেলিভিশন আফগানিস্তান-এর অ্যাঙ্কর শবনম খান দওরান, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি কাজে ফিরতে চাইলেও তালিবানরা তাঁকে কাজ করতে দেয়নি। তারা তাঁকে সাফ জানিয়ে দেয়, শাসনব্যবস্থা পাল্টে গিয়েছে। আপনি আর কাজ করতে পারবেন না। তবে মহিলা মানবাধিকার কর্মী ফারিহা এসার বলেছেন, মহিলাদের শিক্ষার অধিকার, কাজ করার অধিকার এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক অংশগ্রহণের অধিকারের লড়াই চলবেই।