পেন্টাগনের তরফে জানানো হয়েছে, সময়সীমার একদিন আগেই অর্থাৎ ৩০ অগাস্ট সব মার্কিন সেনাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শেষ সৈনিক হিসেবে সি-১৭ বিমানে ওঠেন মেজর জেনারেল ক্রিস ডোনাহিউ। গতকাল পাঁচটি বিমানে করে আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর শেষ ব্যাটেলিয়ন আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছে।
ডেডলাইন ছিল ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত। কিন্তু, তার আগেই আফগানিস্তানের মাটি থেকে সেনা প্রত্যাহর করে নিল আমেরিকা। আর এভাবেই শেষ হল ২০ বছরের যুদ্ধের। তালিবানরা আফগানিস্তান দখল করার পর কয়েক লক্ষ আমেরিকা ও আফগান নাগরিককে কাবুল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তারপরই সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করল আমেরিকা।
পেন্টাগনের তরফে জানানো হয়েছে, সময়সীমার একদিন আগেই অর্থাৎ ৩০ অগাস্ট সব মার্কিন সেনাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শেষ সৈনিক হিসেবে সি-১৭ বিমানে ওঠেন মেজর জেনারেল ক্রিস ডোনাহিউ। গতকাল পাঁচটি বিমানে করে আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর শেষ ব্যাটেলিয়ন আমেরিকায় পাড়ি দেয়।
উদ্ধার কাজ শেষ করার জন্য ৩১ অগাস্ট ডেডলাইন ছিল মার্কিন সেনার কাছে। তবে তার একদিন আগেই সেনা প্রত্যাহার করে পেন্টাগনের তরফে আমেরিকার সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি ঘোষণা করেন, "আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর কাজ শেষ হল। আমেরিকানদের উদ্ধারকাজও শেষ হয়েছে। আফগানিস্তানে আমেরিকার আর কোনও রাষ্ট্রদূত নেই। শেষ রাষ্ট্রদূত হিসেবে রোজ উইলসন সি-১৭ বিমানে আমেরিকায় ফিরেছেন। ওই অফিস কাতারের দোহায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরবর্তী স্তরে দোহা থেকেই কাবুলের সঙ্গে কূটনৈতিক দৌত্য চালানো হবে।"
৩১ অগাস্ট উদ্ধারকাজের শেষ দিন হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুধু আমেরিকান নয়, বহু আফগান যাঁরা মার্কিন সেনার জন্য কাজ করেছিলেন, তাঁদেরও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অনেকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি। তিনি জানান, যাঁরা আফগানিস্তান ছাড়তে চেয়েছিল, তাঁদের অনেকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে কাবুল বিমানবন্দর ছাড়ার সময় সেখানে আর কেউ বাকি ছিলেন না। যদিও তাঁরা সেখানে আরও ১০ দিন বেশি থাকলেও উদ্ধারকাজ সম্পূর্ণ হত না।
আফগানিস্তানে ISIS জঙ্গিদের জন্যই মার্কিন সেনার বিশেষ ড্রোন, জানুন আমেরিকার ভয়ঙ্কর অস্ত্রটি সম্পর্কে
বাইডেন জানিয়েছেন, ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি আমেরিকা, আফগানিস্তান ও অন্য দেশের নাগরিকদের কাবুল থেকে সরানো হয়েছে। তিনি বলেন,' আফগানিস্তানে আমাদের ২০ বছরের সামরিক উপস্থিতি শেষ হয়েছে।'
গত কয়েকদিন পর পর দুটি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে কাবুল বিমানবন্দরে। সেই হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনা প্রাণ হারান। এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল আইসিস। এরপর রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বাইডেন জানিয়েছিলেন, 'যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হবে।' তারপরই গতকাল রাতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে বিমানবন্দর ছাড়ে মার্কিন সেনা।
আরও পড়ুন- আফগানিস্তানে তালিবানদের জয় ভারতের কাছে বিপদ ঘণ্টা, পাক সীমান্তে বাড়ছে জঙ্গি আনাগোনা
তবে শুধুমাত্র আমেরিকা নয়, উদ্ধারকাজে সামিল হয়েছিল একাধিক দেশ। শুক্রবারই উদ্ধারকার্যে ইতি টেনেছে ফ্রান্স, জার্মানি। শনিবার রাতেই ব্রিটেনের শেষ উদ্ধারকারী বিমানও উড়ান নেয় হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। আর গতকাল রাতে বিমানবন্দর থেকে সেনা প্রত্যাহার করল আমেরিকাও। এদিকে তালিবান মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশজুড়ে কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও একবার সরকার দখল হয়ে গেলে সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
২০ বছর আগে তালিবানদের সরাতে আফগানিস্তানে পা রেখেছিল মার্কিন সেনা। আফগানিস্তান দখল করেছিল তারা। তারপর মাঝে কেটে গিয়েছে ২০টা বছর। এই সময় বদলে গিয়েছিল আফগানিস্তানের ছবিটা। কিন্তু, ১৫ অগাস্ট ফের আফগানিস্তান দখল করে তালিবান। দুঃস্বপ্ন নেমে আসে আফগানবাসীদের চোখে। ২০ বছর আগের ভয়ঙ্কর স্মৃতির কথা মাথায় রেখে দেশ ছাড়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন সবাই। হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন বিমানবন্দরে। অনেকেই দেশ ছাড়তে সফল হয়েছেন। অবশেষে সেই ২০ বছরের ইতিহাসকে পিছনে ফেলে গতকাল রাতের শেষ বিমানে কাবুল বিমানবন্দর ছাড়ে মার্কিন সেনা। এভাবেই ২০ বছরের যুদ্ধের ইতি ঘোষণা করা হয় পেন্টাগনের তরফে।