কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসে খুন হলেন বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম। তদন্ত যতই এগোচ্ছে, ততই যেন রহস্য দানা বাঁধছে।
কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসে খুন হলেন বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম। তদন্ত যতই এগোচ্ছে, ততই যেন রহস্য দানা বাঁধছে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, ৫৬ বছর বয়সি আনোয়ারুল আজিম খুনে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, 'কলকাতায় তাঁর আবাসনে রীতিমতো পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে আজিমকে। ভারত এবং বাংলাদেশ পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত করছে এই বিষয়ে। আততায়ীদের আসল উদ্দ্যেশ্য কী ছিল, সেই বিষয় জানার জন্য তদন্তকারীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। অবশ্যই আমরা আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনগুলি মেনে চলার চেষ্টা করছি।'
আসাদুজ্জামান খান আরও যোগ করেছেন, 'আমাদের দেশের দুষ্কৃতিরাই জড়িত রয়েছে এই ঘটনায়।' সেইসঙ্গে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই খুনের ঘটনায় রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনবারের জয়ী ঝিনাইদহের আওয়ামি লিগ সাংসদ গত ১২ মে কলকাতায় আসেন চিকিৎসার জন্য। কলকাতার সিঁথির মোড় অঞ্চল নিবাসী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। জানা যাচ্ছে, তাঁর সঙ্গে আজিমের পরিচয় বহুদিনের। পরের দিন গাড়িতে বেরোন তিনি। কিন্তু তারপর থেকেই আর খোঁজ পাওয়া যায়নি আজিমের।
তাঁর বন্ধু গোপাল বিশ্বাস এবং পরিবার আজিমের সঙ্গে টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। শেষপর্যন্ত গত ১৮ মে বরানগর থানায় মিসিং ডায়েরি করেন গোপাল বিশ্বাস। এর পরই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফ থেকে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়।
সেই সঙ্গে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর যোগাযোগ করে দিল্লি ও কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের সঙ্গে। বুধবার বিধাননগর পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, নিউটাউনের একটি আবাসনে খুন করা হয়েছে বাংলাদেশের সাংসদকে। এই ফ্ল্যাটটির মালিকানা রয়েছে সঞ্জীব ঘোষ নামে একজন ব্যক্তির নামে। যিনি নিজে সেন্ট্রাল এক্সাইজ সংস্থায় কর্মরত।
গত বুধবার বিধাননগর এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের বিশেষ দল, এসটিএফ এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তকারীরা নিউটাউনের সেই আবাসনে যান। তাঁরা রক্তের দাগ পেলেও, দেহ উদ্ধার করতে পারেননি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। গত ১৩ থেকে ১৫ মে-র মধ্যে বিভিন্ন সময়ে দুজন পুরুষ এবং একজন মহিলাকে সেই আবাসন থেকে হাতে বড় ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি-র আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী জানিয়েছেন, পুলিশ নিশ্চয়ই তাঁর দেহ দ্রুত উদ্ধার করবে।
গোপাল বিশ্বাস জানিয়েছেন, গত ১৩ মে তিনি আজিমের তরফ থেকে একটি মেসেজ পান, যে তিনি দিল্লি যাচ্ছিন। সেই একই মেসেজ পান আজিমের মেয়ে মুমতারিম ফিরদৌস এবং সাংসদের পার্সোনাল সহকারী।
গোপাল বিশ্বাস বলেন, “সাংসদের সহকারীর কাছে একটি ফোন আসে আজিমের তরফ থেকে। সেই ফোনটি সেই সময় তিনি ধরতে পারেননি। পরে যখন আবার তিনি ফোন করতে যান, তখন আর ফোনে পাননি। তার পর গত ১৭ মে আনোয়ারুল আজিমের মেয়ের ফোন পাওয়ার পরই বরানগর থানায় মিসিং ডায়েরি করি আমি।”
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত ১৩ মে নিউটাউনের এক আবাসনেই সম্ভবত শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাঁকে। শুধু তাই নয়, খুনের পর দেহকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। তারপর তিনদিন ধরে সেই দেহাংশ অন্য জায়গায় সরিয়ে ফেলা হয়। কিছু অংশ ওই ফ্ল্যাটের ফ্রিজে রাখা হয়েছিল বলেও জানা যাচ্ছে। আবাসন থেকে কিছু প্লাস্টিক ব্যাগও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারিদের অনুমান, প্লাস্টিক ব্যাগে করেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে। তবে সেই দেহাংশ কারা ফেলে রেখেছে এবং কোথায় ফেলেছে তা এখনও স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না।