
Bangladesh News: বাংলাদেশে দারিদ্র্যতার হার এখন প্রায় ২৭.৯৩%। অর্থাৎ, প্রায় ২৮ঁ% (bangladesh poverty rate 2025)। আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগে, অর্থাৎ ২০২২ সালে এই হার ছিল ১৮.৭০%। পরিসংখ্যান বলছে, তিন বছরের মধ্যেই সেই দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.২৩%। নিঃসন্দেহে অনেকটাই বেশি (bangladesh poverty line)।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিশিপেশন রিসার্চ সেন্টার তথা পিপিআরসি একটি গবেষণা চালায়। সেখানেই ওপার বাংলায় দারিদ্র্যতা বৃদ্ধির এই ছবিটা ধরা পড়েছে। ‘ইকনোমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেবেল ইন মিড ২০২৫’ শীর্ষক এই গবেষণার ফলাফল সোমবার প্রকাশ পেয়েছে।
পিপিআরসির সেই গবেষণা অনুযায়ী, অতি দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা একলাফে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকারি হিসাবেই ২০২২ সালের অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ৫.৬%। এরপর ২০২৫ সালে, সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৫%-তে। অর্থাৎ, এই পরিসংখ্যান একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিচ্ছে যে, গত তিন বছরে দেশে দারিদ্র্যতা একফোঁটা কমেনি! বরং, অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত মে মাসে, ৮০৬৭টি পরিবারের ৩৩,২০৭ জন ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে এই গবেষণাটি করা হয়। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি, পরিসংখ্যান ব্যুরো ‘পভার্টি ম্যাপ অব বাংলাদেশ ২০২২’ প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, দেশে দারিদ্র্যতার হার ১৮.৭০% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৯.২%-তে। তবে পিপিআরসি-র রিসার্চ রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি।
তারা সংসার চালাচ্ছেন রীতিমতো ধার-দেনা করে। তবে উচ্চবিত্তের আয়ের চেয়ে ব্যয় আআর খানিকটা কম। সেইসঙ্গে, পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বৈষম্য এবং হয়রানি। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আগের সরকারের আমলেও ঘুষ দিতে হত এবং এখনও তা দিতে হয়। অর্থাৎ, পরিস্থিতি কিছুই বদলায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গড়ে একটি পরিবারের মাসিক আয় ৩২,৬৮৫ টাকা এবং মাসিক ব্যয় ৩২, ৬১৫ টাকা। কিন্তু তার মধ্যে আবার অনেক ভাগ রয়েছে। যেমন নিচের দিকের ১০% মানুষের মাসিক আয় ৮,৪৭৭ টাকা । কিন্তু ব্যয় ১২,২৯৪ টাকা। এছাড়া মধ্যবিত্ত মানুষের ৪০% আয় করেন ২৮,৮১৮ টাকা। তবে তাদের ব্যয়ের পরিমাণ ২৯, ৭২৭ টাকা। তবে উচ্চস্তরে থাকা ১০% মানুষের আয় ১ লক্ষ ৯ হাজার ৩৯০ টাকা। তবে যাদের ব্যয় ১ লক্ষ ১ হাজার ১৬৩ টাকা।
এমনকি, সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ মানুষের মধ্যে ১২.২% মানুষ সপ্তাহে অন্তত একবেলা না খেয়ে থাকে। আর ৯% মানুষ মাসে অন্তত একদিন না খেয়ে থেকেছেন। মানে নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।”
পিপিআরসির গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে তিন ধরনের সমস্যা চলছে। সেগুলি হল কোভিড মহামারীর প্রভাব, মুদ্রাস্ফীতি এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। দেখা যাচ্ছে একটি পরিবারের মাসে মোট খরচের প্রায় ৫৫% চলে যায় খাবার কিনতে। এছাড়া প্রতি মাসে শিক্ষার পিছনে ১,৮২২ টাকা, চিকিৎসা খাতে ১,৫৫৬ টাকা, যাতায়াতে ১,৪৭৮ টাকা এবং আবাসনে ১০৮৯ টাকা খরচ হয়।
উল্লেখ্য, ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এখনও ব্যাপক আকারে দেখা যায়নি। তবে ধীরে ধীরে এটি বাড়ছে এবং যা সত্যিই উদ্বেগজনক একটা বিষয়। অন্যদিকে, ওপার বাংলায় স্মার্টফোনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ৮২.৫% স্মার্টফোন ব্যবহার হয় শুধুমাত্র গেম বা বিনোদনের জন্য।
অপরদিকে, গত এপ্রিল মাসে, প্রকাশিত বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বাড়বে বলে আগেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসার কোনওরকম সম্ভবনা নেই। বরং, এই বছর বাংলাদেশে আরও ৩০ লক্ষ মানুষ অতি দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে যাবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর বাংলাদেশে দারিদ্র্যতার হার ২২.৯০%-তে গিয়ে পৌঁছতে পারে। যা গত ২০২২ সালে ছিল ১৮.৭০%। এবার পিপিআরসি-র গবেষণায় যেন সেই তথ্যই উঠে আসছে। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যতার হার এখন প্রায় ২৭.৯৩%। অর্থাৎ, প্রায় ২৮%। আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগে, অর্থাৎ ২০২২ সালে এই হার ছিল ১৮.৭০%। পরিসংখ্যান বলছে, তিন বছরের মধ্যেই সেই দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.২৩%। নিঃসন্দেহে অনেকটাই বেশি।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।