
সালটা ২০১৬। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও নিপীড়ন শুরু হয়েছিল। এই নির্যাতন ও নিপীড়নের ফলে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। শত শত রোহিঙ্গা নিহত হয়, ঘরবাড়ি ও গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়, এবং অনেককে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন ও নিপীড়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। মায়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়।
রোহিঙ্গা জনগণের ওপর সামরিক অভিযান রাষ্ট্রসঙ্ঘ, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট, প্রতিবেশী বাংলাদেশ সরকার এবং মালয়েশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে সমালোচনার মুখে পড়ে। মায়ানমারের তৎকালীন সরকার প্রধান, আন সান সু কি সেই সময় তাঁর নিষ্ক্রিয়তা ও নীরবতার জন্য এবং এই সামরিক অপব্যবহার প্রতিরোধে বলতে গেলে কোন কাজ না করার জন্য ঘরে বাইরে তীব্র সমালোচিত হন।
সু কির নোবেল প্রত্যাহারের দাবি
মায়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনলাইন আবেদনে স্বাক্ষর করেন লক্ষাধিক মানুষ। দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার ব্যাপারে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই আবেদন জানানো হয়। নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটি, যারা এই পুরস্কার দেয়, তাদের প্রতি আবেদনে এই পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
জানা যায় ইন্দোনেশিয়া থেকে চেঞ্জ ডট অর্গে এই আবেদনটি করা হয়। আবেদনে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক শান্তি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদেরই নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। সু চির মতো যাঁরা এই পুরস্কার পান, তাঁরা শেষ দিন পর্যন্ত এই মূল্যবোধ রক্ষা করবেন, এটাই আশা করা হয়। যখন একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী শান্তি রক্ষায় ব্যর্থ হন, তখন শান্তির স্বার্থেই নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির উচিত এই পুরস্কার হয় বাজেয়াপ্ত করা, নয়তো ফিরিয়ে নেওয়া।’ তবে শেষ পর্যন্ত এই আবেদনের প্রেক্ষিতে নোবেল কমিটি জানিয়ে দেয় কোনও ভাবেই একবার দিয়ে দেওয়ার সম্মান ফেরত নিতে পারবে না তারা।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ ইউনুসও
আন সাং সু কির মতো একই রকম পরিস্থিতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মহম্মদ ইউনুসেরও। কার্যত তিনিও নীরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করে চলেছেন। উল্লেখ্য, পেশায় একজন অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকার, ইউনূসকে ২০০৬ সালে দরিদ্র মানুষদের, বিশেষ করে নারীদের সাহায্য করার জন্য ক্ষুদ্রঋণের ব্যবহারের পথিকৃৎ হিসেবে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেওয়া হয়। নোবেল শান্তি পুরষ্কার কমিটি ইউনূস এবং তার গ্রামীণ ব্যাংককে "নীচ থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন তৈরির প্রচেষ্টার জন্য" কৃতিত্ব দেয়।
প্রশ্ন উঠছে এখানেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর লাগাতার ও লাগামহীন অত্যাচারের পরেও বোবা দর্শক হয়ে ছিলেন ইউনুস। আদৌ কি তিনি তাঁর পাওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য? আদৌ কি তিনি শান্তি পুরস্কারধারীর যোগ্য কাজ করতে পেরেছেন। উত্তরটা একবাক্যে সকলেই বলবে যে না। পারেন নি। সবদিক থেকে প্রশাসক হিসেবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ইউনুস। তাহলে কেন এবার তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠবে না!