
বাংলাদেশের নিহত নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদির শেষযাত্রায় যোগ দিতে শনিবার ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা জড়ো হয়েছেন। ওসমান হাদিকে গুলিতে জখম করার পর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর মৃত্যু ঘিরে উত্তাল গোটা বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে শেষকৃত্য। তার আগে বাংলাদেশের রাজধানী ঘিরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। একটাই উদ্দেশ্যে যে কোনও অরাজক পরিস্থিতি যাতে নতুন করে তৈরি না হয় তার ওপর জোর দেওয়া।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণে অবস্থিত মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ওসমান হাদির শেষযাত্রার নামাজের প্রস্তুতি চলছে। স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় শেষযাত্রার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অনুষ্ঠান শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকায়, এলাকাটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয় নগর এলাকায় রিকশায় যাওয়ার সময় খুব কাছ থেকে গুলিবিদ্ধ হন। ১৫ ডিসেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর, কর্মীরা তাদের নিহত নেতার ন্যায়বিচারের দাবিতে ঢাকা জুড়ে বিক্ষোভ শুরু করে। শুক্রবার হাদীর মরদেহ রাজধানীতে ফিরিয়ে আনার পর বেশ কয়েক দফা বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
ইনকিলাব মঞ্চ তার সমর্থকদের জানাজার সময় শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানালেও ঢাকার পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ।
এই অস্থিরতার মধ্যে, বেশ কয়েকটি নাগরিক সংগঠন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে। তাদের অভিযোগ, হাদী হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী সহিংসতার পর তিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন।
শুক্রবার জারি করা এক যৌথ বিবৃতিতে, ১৬টি সংগঠন দেশের জননিরাপত্তার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিডি নিউজ জানিয়েছে, এই সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি, নেটওয়ার্ক ফর ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, নারীপক্ষ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ইউনিভার্সিটি টিচার্স নেটওয়ার্ক, নাগরিক কোয়ালিশন এবং ভয়েস ফর রিফর্ম।
বিবৃতিতে বলা হয়, "[জুলাই অভ্যুত্থানের] এক বছর পরেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং দেশ-বিদেশের অন্যান্য শক্তির হাত থেকে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।"
বাংলাদেশের সম্পাদক পরিষদ এবং নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য একটি গুরুতর হুমকি বলে অভিহিত করেছে।
এদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দাবি করেছে যে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনের আগে অনিশ্চয়তা তৈরির ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই হাদীর হত্যাকাণ্ডের পর এই সহিংসতা ঘটানো হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার গভীর রাতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
ফখরুল বলেন, "আমরা এই জঘন্য ঘটনার নিন্দা ও তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছি। এটি প্রমাণ করে যে, একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।"
ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা যখন জানাজার জন্য জড়ো হচ্ছেন, তখন রাজধানীতে শান্তি বজায় রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে।