চীনা শিক্ষাব্যবস্থায় লাভবান বাংলাদেশী পড়ুয়ারা, কোন লাভের আশায় চীনে ছুটছেন তাঁরা

চীনে যত সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে তার মধ্যে বাংলাদেশের রয়েছে  ১২ নম্বর স্থানে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী চীনে পড়াশুনা করছে। যে সমস্ত বিদেশি শিক্ষার্থীরা চীনে পড়াশুনোর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছেন সেই তালিকায় রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা যার সংখ্যা ৫০হাজারের বেশি। এছাড়াও থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত, আমেরিকা এবং রাশিয়ার শিক্ষার্থীরাও চীনে পড়াশুনা করছেন।
 

Kasturi Kundu | Published : Feb 17, 2022 2:31 PM IST

চীনের (China) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগ পর্যন্ত চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের (Bangladeshi Students) ভিড় বেড়েছে। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটির ১৩তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় উচ্চশিক্ষার পরিধি বিস্তৃতির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই মুহুর্তে চীনে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখের মতো।  জার্মান ভিত্তিক অনলাইন পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠানের মতে,  চীনে (china) যত সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী (Foreign Students) পড়াশুনা করছে তার মধ্যে বাংলাদেশ (Bangladesh) রয়েছে  ১২ নম্বর স্থানে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী চীনে পড়াশুনা করছে। যে সমস্ত বিদেশি শিক্ষার্থীরা চীনে পড়াশুনোর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছেন সেই তালিকায় রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা যার সংখ্যা ৫০হাজারের বেশি। এছাড়াও থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত, আমেরিকা এবং রাশিয়ার শিক্ষার্থীরাও চীনে পড়াশুনা করছেন।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের পাশে যেসব দেশ রয়েছে সেখান থেকে প্রায় ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী চীনে পড়াশুনা করতে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী চীনে পড়াশুনা করছে। উল্লেখ্য, আমেরিকার উইলসন সেন্টারের কিসিঞ্জার ইনিস্টিটিউট অব চায়না এবং দ্য ইউনাইটেড স্টেটস-এ এক বক্তব্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং তার দেশের উচ্চ শিক্ষার জন্য আগামী দিনের যে পরিকল্পনা সেই কথা তুলে ধরেন। চীনের প্রেসিডেন্ট ২০১৬ সালের ভাষণে বলেন, চীন তার নিজস্বতা বজায় রেখে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলাই প্রধান লক্ষ্য। সেই সঙ্গে আরও বলেন, পশ্চিমী ধারায় নয়, স্বতন্ত্র ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ চীন। 

এক শিক্ষার্থী, তাহেরা তমা বর্তমানে ইস্ট চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটিতে কমিউনিকেশন নিয়ে পিএইচডি করছেন। এর আগে তিনি উহান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে এমবিএ করেছেন। চীনে যাবার আগে একটি বিশেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল তাঁকে। সেই পরীক্ষায় ভালো ফল করার পরই চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ পান তিনি। তহেরা তমা আরও বলেন, স্কলারশিপের মাধ্যমে তাকে যে অর্থ প্রদান করা হত তাতে তাঁর  পড়াশুনা, থাকা-খাওয়ায় কোনও রকম অসুবিধা হত না। একই সঙ্গে পড়ুয়ারা অর্থ সঞ্চয়েরও সুযোগ পান ভালমতো। ব্যাচেলর পড়তে গেলে বাংলাদেশি মুদ্রায় মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা, মাস্টার্স পড়তে গেলে মাসে ২০ হাজার টাকা এবং পিএইচডি করতে গেলে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করা যায়, বললেন তহেরা। 

আরও পড়ুন-'শুধু বিরিয়ানি খাইয়ে হয় না', মোদী সরকারকে বেনজির আক্রমণ মনমোহন সিংয়ের

আরও পড়ুন-'গায়ে লাগানো আছে চিপ', এনএসএ অজিত ডোভালের বাড়িতে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির হানা

আরও পড়ুন-৫৪টি চিনা অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি কেন্দ্রের, রয়েছে কয়েকটি সেলফি অ্যাপও

অন্যদিকে আরেক বাংলাদেশী পড়ুয়া রাহমান সেজাদ চীনের ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছেন। ২০১৬ সালে চীনে শুরু হয়েছিল তাঁর পড়াশুনার যাত্রা। তিনি বলেন, চীনে জিনিসপত্রের দাম অনেক কম। ফলে স্কলারশিপ থেকে যে পরিমান অর্থ পাওয়া যায় তা থেকে বেশ কিছুটা অর্থ সঞ্চয় করা যায়। অর্থ সঞ্চয়ের যেমন সুযোগ রয়েছে তেমনই চাকরিরও প্রচুর সুযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সাল পর্যন্ত চীনে কোন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করতে গেলে সে রেস্টুরেন্ট, বার কিংবা অন্য কোথায় কাজ করার অনুমতি পেত না। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এখন থেকে শর্তসাপেক্ষভাবে বিদেশি শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি পেয়েছে। এর ফলে অর্থ উপার্জনেরো একটা বিরাট সুযোগ রয়েছে. 

এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক চীনা ভাষার কোর্স করতে হয়। তাতে চীনা ভাষায় যোগাযোগ চালিয়ে যাবার দক্ষতা তৈরি হয়। ফলে চীনের কোম্পানিগুলোতে চাকরি পেতে তাদের খুব একটা সমস্যা হয় না। চীন থেকে পড়াশুনা করলে চাইনিজ কোম্পানিগুলোতে কাজের সুবিধা অনেকটা বেড়ে যায়। চীনের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করার পর বাংলাদেশে ট্রান্সফার করা হয়। কারণ, চীনের অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে চীনের তরফে মোটা টাকা বিনিয়োগ করেছে। 

যারা সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের তাদের কাজের সুযোগ বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর চাকরি পেতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। চীনা ভাষা মোটামুটি জানা থাকলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় খুব একটা অসুবিধা হয় না বলে উল্লেখ করছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। ইউরোপ এবং আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে আবেদন করতে হয়, চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আবেদনের প্রক্রিয়া একই রকম। চীনের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশুনা এবং স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য, চীনের বেশ কয়েকটি ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে চীনে পড়াশুনার সুযোগ বেশি। বাংলাদেশে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় শতকরা ৬০ শতাংশ নম্বর পেলে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করা যায়। স্কলারশিপের জন্য আরো বেশি নম্বর পেতে হবে। 

Share this article
click me!