গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের একটি হল হংকং। অপর অঞ্চলটি হল মাকাও। ২৬০ টিরও বেশি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত হংকং পার্ল নদীর বদ্বীপের পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর উত্তরে চীনের কুয়াংতুং প্রদেশ এবং পূর্ব, পশ্চিম আর দক্ষিণে রয়েছে দক্ষিণ চীন সাগর। দীর্ঘ ব্রিটিশ শাসনের পর ১৯৯৭ সালে এই অঞ্চল চিনের অধীনে আসে।
হংকং চিনের 'বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল', যেখানে 'এক দেশ, দুই ব্যবস্থা' নীতি চালু রয়েছে। কিন্তু সেই হংকং-এর মানুষই এখন চিনের উপর ক্ষুব্ধ। কারং, হংকংবাসীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে দিয়েছে চিনা সরকার। হংকং চিনের অধীনস্ত হলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা তাঁদের নিয়ম কানুন মানতে নারাজ। বেশ কয়েকটি নিয়ম জারি করে হংকংবাসী নিজেদের মধ্যে চালু রেখেছিল। কিন্তু বর্তমানে কোণঠাসা চীন সরকার তাঁদের সেইসব স্বাধীনতা খর্ব করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
গত বছরের জুন মাসে চিনের প্রস্তাবিত একটি অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় হংকংয়ে। পরে চিন এই বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। তারপরও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে পর্যন্ত গণতান্ত্রিক হংকংয়ের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গণতন্ত্রপন্থীদের এই লাগাতার বিক্ষোভে প্রভাব পড়তে থাকে চিনের অর্থনীতিতেও।
গত দু'দশকে চিন তাদের এই বিশেষ অঞ্চল থেকে দারুণ উপকৃত হয়েছে, যেটি এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র। কারণ বাণিজ্য ও আর্থিক দুদিক থেকেই হংকং চীনের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭-১৮ সালে চিন ১২৫ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ পেয়েছে এর মধ্যে ৯৯ বিলিয়ন ডলারই এসেছে হংকংয়ের মাধ্যমে। তাই স্বশাসিত হংকংয়ে নিজেদের রাশ টেনে ধরতে গত মে মাসে পার্লামেন্টে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করে চিন। তার পরেই নতুন করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে হংকং। সেই সময় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন চলছিল সেখানে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই চিনের খসড়া আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন শয়ে শয়ে বিক্ষোভকারীরা।
করোনা সংক্রমণ নিয়ে গোটা বিশ্ব নাজেহাল।আর এর মধ্যেই হংকংয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে চিন। এ নিয়ে সে দেশের আইনসভার বার্ষিক অধিবেশনে নয়া প্রস্তাব পেশও হয়ে গিয়েছে। তার প্রতিবাদে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে হংকংয়ে। মিছিল থেকে ‘স্বাধীন হংকং’-এর পক্ষে স্লোগান তুলছেন বিক্ষোভকারীরা। চলছে রাস্তাও অবরোধ। আর বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কোমর বেঁধে নেমেছে চিনা পুলিশ।
আরও পড়ুন: চিনের দাদাগিরি সহ্য করছে তাইওয়ানও, ভারতীয় সেনাকে প্রকাশ্যে সমর্থন এবার তাই মিডিয়ার
বেজিংয়ের আগ্রাসী মনোভাব দেখে ফুঁসছে হংকংয়েক বাসিন্দারা। কারণ চিনের সুরক্ষা পরিষদ হংকং পরিচালনা করবে, চাইছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এর মাঝেই গত মাসে হংকংয়ের জন্য যে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন আনার কথা ঘোষণা করেছিল চিন, ২ দিন আগে তারই বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আনল বেজিং।
নতুন নিরাপত্তা আইনের হংকংয়ের উপরে চিনের রাশ আরও দৃঢ় হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ পশ্চিমী দেশগুলি। কিন্তু বেজিং বারবার দাবি করে এসেছে যে, বিচ্ছিন্নতাবাদ, দেশদ্রোহ, সন্ত্রসাবাদ ও বিদেশি হস্তক্ষেপের হাত থেকে হংকংকে বাঁচাতেই এই নতুন আইন আনা হচ্ছে। নতুন আইনে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আন্তর্জাতিক লগ্নিকারী ও কূটনীতিকেরাও। চিন প্রতি পদক্ষেপে নাক গলালে হংকংয়ে তাদের ব্যবসা করা মুশকিল হবে বলে মনে করছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী। চিন অবশ্য অভয় দিচ্ছে, নতুন আইন মেনে চললে ভয়ের কিছুই নেই।
চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, নতুন আইন প্রণয়নের জন্য নতুন দফতর খোলা হবে হংকংয়ে। আইন লঙ্ঘনকারীদের বিচারের জন্য হংকংয়ের প্রশাসক ক্যারি ল্যাম নতুন বিচারকও নিয়োগ করবেন খুব শীঘ্রই। ৬ সেপ্টেম্বর হংকংয়ে আইনসভার ভোট। তার আগেই নতুন আইন চালু হবে বলে মনে করা হচ্ছে।