উপসর্গহীন করোনাভাইরাস রোগীরা কি সত্যিই উপসর্গহীন
নাকি তাদের দেহে আছে অজানা উপসর্গ
বিজ্ঞানীদের মধ্যে উঠছে প্রশ্ন
বেশ কিছু অস্বাভাবিক উপসর্গের সন্ধান দিচ্ছেন তাঁরা
বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে কোভিড-১৯ এর অ্যাসিম্পটমেটিক বা উপসর্গহীন রোগীদের জন্য। দিন কয়েক আগেই আইসিএমআর থেকে জানানো হয়েছিল, ভারতে এখনও পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগী হিসাবে সনাক্তকৃত ৮০ শতাংশ রোগীর দেহেই রোগের কোনও লক্ষণ ছিল না। লক্ষণবিহীন হওয়ার কারণে তাঁদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আর তাদের মাধ্যমেই সমাজে আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা। তবে এখন ডাক্তাররা বলছেন, কোভিড-১৯ এর স্বাভাবিক উপসর্গ অর্থাৎ সর্দি-কাশি বা জ্বর ছাড়াও রোগী সনাক্তকরণের আরও একটি উপায় রয়েছে।
ইউরোপ এবং আমেরিকার চর্ম বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত কিনা, তা বলে দিতে পারবে তাদের পায়ের আঙ্গুল। বিশেষ করে বাচ্চা এবং অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রে। গত মার্চ মাসে, ইতালিতেই প্রথম কয়েকজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ লক্ষ্য করেছিলেন, অনেক অল্পবয়সী রোগী আসছে, যাদের পায়ের পাতা ও আঙুলে প্রদাহ রয়েছে এবং অঙ্গগুলির বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে। মেরু অঞ্চল বা অত্যন্ত ঠান্ডার দেশে বসবাসকারী লোকদের মধ্যে যেরকম 'ফ্রস্ট বাইট' হতে দেখা যায়, অনেকটা সেইরকম।
ডাক্তাররা দেখেছিলেন পায়ের আঙ্গুলের রক্তনালীগুলিতে প্রদাহ ক্রমে বেড়েছে, এবং পায়ের আঙ্গুলগুলির মধ্যে মারাত্মক খিঁচুনি ছিল। সেই সঙ্গে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা দেখেছিলেন ইতালির কোভিড-১৯ রোগীদের সংখ্যা যেসব অঞ্চলে বেশি, সেইসব অঞ্চল থেকেই এই রোগীরা আসছেন। এই কারণেই তাঁরা ওই অবস্থাটিকে 'কোভিড টোস' বা 'কোভিড পায়ের আঙুল' বলে ডাকতে শুরু করেছিলেন। তাঁরা বুঝতে পারছিলেন, যে পায়ের আঙুলের ওই অবস্থাটা কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ হতে পরে। কিন্তু এই বিষয়ে গবেষণা না করে কিছু জোর দিয়ে বলতে চাননি তাঁরা।
এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও একইরকম 'কোভিড পায়ের আঙ্গুল'-এর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বোস্টন শহর, আমেরিকার নভেল করোনাভাইরাস মহামারিতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ ঐএলাকাগুলির অন্যতম। এই শহরে প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় একে শিক্ষার্থীদের শহরও বলা হয়। এই শহরেই এখন প্রচুর সংখ্যায় 'কোভিড টোস' দেখা যাচ্ছে। ইতালির পর আমেরিকাতেও একই ঘটনা ঘটতে থাকায় মার্কিন অ্যাকাডেমি অফ ডার্মাটোলজির চিকিত্সকরা এখন তাদের কাছে এই পায়ের আঙ্গুলের ত্বকের সমস্যা নিয়ে আসা শিশু ও নাবালক-নাবালিকাদের করোনভাইরাস পরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ইতালিতে 'কোভিড টোস'-এর সমস্যা থাকা অল্পবয়সীদের দেহে কিন্তু, কোভিড-১৯'এর পরিচিত কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি। তবে অধিকাংশেরই কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল ইতিবাচক এসেছিল। তারপরই এটি আদৌ কোভিড-১৯ উপসর্গ কিনা তাই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও তার বাইরে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকদের তীব্র বিতর্ক হয়েছিল। বর্তমানে কিন্তু একে নভেল করোনভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য 'অ্যাটিপিকাল' অস্বাভাবিক লক্ষণ হিসাবে ধরা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, সম্বাব্য রোগী চিহ্নিত করতে এই উপসর্গের খোঁজ চালানো যেতে পারে। বা এটি সম্পর্কে তাদের উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে।
লাগবে একটা এক্স-রে স্ক্যান, ৫ সেকেন্ডেই কোভিড-১৯ রোগী ধরবে আইআইটির সফটওয়্যার
আইসিএমআর-এর অনুমোদন পেল দিল্লি আইআইটি, একধাক্কায় সস্তা হচ্ছে করোনা পরীক্ষা
করোনা-রহস্য উদঘাটনে আসরে 'ফেলুদা', কাগজ কুচিই জানান দেবে পজিটিভ না নেগেটিভ
ডাক্তারদের বক্তব্য যাঁদের উপসর্গহীন রোগী বলা হচ্ছে, সম্ভবত তাঁরা সত্যি সত্যি উপসর্গহীন নন। তাঁদের দেহে 'কোভিড পায়ের আঙুল'-এর মতো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে। ইফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গগুলির পাশাপাশি এই অস্বাভাবিক উপসর্গওয়ালা ব্যকক্তিদেরও কোভিড-১৯ পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। এই অস্বাভাববিক উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে, হঠাৎ খাদ্যের গন্ধ বা স্বাদ না পাওয়া, চোখের রং সাদা থেকে গোলাপী হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। আর স্বাভাবিক উপসর্গগুলি শুকনো কাশি, জ্বর, গলা খুস খুস, শারীরিক ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা।