এবার একটু যেন সাবধানী চাল খেললেন কিম। নতুন যুক্তি দিয়ে তাঁর দাবি উত্তর কোরিয়া অস্ত্র তৈরি করছে শুধুমাত্র দেশের স্বার্থে
উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র তৈরি ও অস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে মাথাব্যাথার শেষ নেই পশ্চিমি দেশগুলোর। সেদেশের অবিসংবাদিত নেতা (leader of North Korea) কিম জং উন (Kim Jong-un)-ও সেই মাথাব্যাথায় ভালোই উস্কানি দেন। তবে এবার একটু যেন সাবধানী চাল খেললেন কিম। নতুন যুক্তি দিয়ে তাঁর দাবি উত্তর কোরিয়া অস্ত্র তৈরি করছে শুধুমাত্র দেশের স্বার্থে, দেশের সুরক্ষার জন্য(self-defence capabilitie)। কিমের বক্তব্য তাঁরা অস্ত্র তৈরি করছে যুদ্ধ (war) করার জন্য নয়। শুধু আত্মরক্ষা করার জন্য। তাহলে কি ভয় পেলেন এই যুদ্ধবাজ নেতা। সাফাইয়ের ভঙ্গী দেখে তো তেমনই মনে হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
এক সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে বক্তব্য রাখেন কিম। সেখানে পরিষ্কার জানান, উত্তর কোরিয়া যুদ্ধ চায় না, কিন্তু কোনও দেশের হুমকির কাছেও মাথা নোয়াবে না তাঁর দেশ। ঠিক কোনও দেশের কথা বলেন কিম। সেটাও পরের বক্তব্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। জানিয়ে দিয়েছেন কোনও দেশকেই ভয় পায় না উত্তর কোরিয়া। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাগাতার হুমকি বরদাস্ত করা হবে না। উত্তর কোরিয়া বিরোধী কোনও নীতি আমেরিকা নিলে, তার কড়া জবাব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তাদের।
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে যে ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য সামরিক হার্ডওয়্যার ছাড়াও সেলফ ডিফেন্স ২০২১ প্রদর্শনীতে বেশ কয়েকটি বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছে। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে এবং এর মধ্যে একটিকে একটি নতুন ভাবে তৈরি করা হাইপারসনিক এবং বিমানরোধী ক্ষেপণাস্ত্র বলে দাবি করা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কথা উল্লেখ করে কিম বলেন, উত্তর কোরিয়া তার প্রতিবেশীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করার লক্ষ্য রাখেনি। মনে করা যেতে পারে যে সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মধ্যে, দক্ষিণ কোরিয়া সাবমেরিন-উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্রের একটি সফল পরীক্ষা চালিয়েছিল। উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বর মাসেই দীর্ঘদিন চুপ করে বসে থাকার পর ফের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নামে বিশ্বকে নিজের শক্তির জানান দেয় পিয়ংইয়ং। দুদিন ধরে দীর্ঘ পাল্লার ক্রুস মিসাইলেরপরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া।
গত কয়েক মাস ধরে কোনও রকম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেনি উত্তর কোরিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার পর থেকে সেভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার পথে হাঁটেনি পিয়ংইয়ং। তবে চুপ করে যে তারা বসে ছিল না, এই পরীক্ষাই তার প্রমাণ। কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি জানায়, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি, যা দুই বছর ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষার আওতায় ছিল, শনিবার ও রবিবার ফ্লাইট পরীক্ষার সময় সফলভাবে ১৫০০ কিলোমিটার অর্থাৎ ৯৩২ মাইল দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। তবে এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার সেনার তরফে উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
সেই প্রেক্ষিতে কিমের দাবি তাদের দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই এই ধরণের অস্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে। ২০১৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কিমের মধ্যে একটি বৈঠক ভেঙে যাওয়ার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে আলোচনা থমকে গিয়েছে। কিমের সরকার এখন পর্যন্ত আলোচনার জন্য বাইডেন প্রশাসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ওয়াশিংটনের কাছে দাবি করা হয়েছে যে উত্তর কোরিয়ার স্বার্থ বিরোধী কোনও নীতি সামনে রেখে আলোচনা সম্ভব নয়।