কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন কার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশংসায় মেতেছিলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি নিজেও কয়েক ডোজ খেয়েছিলেন। তাঁর প্রচারের পরই যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ কোভিড-১৯ রোগীদের হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া শুরু করেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই ওষুধ কার্যকর নয়, বরং তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। তাই ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলো থেকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যেই বুধবার প্রকাশিত নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের একটি প্রতিবেদনে উঠে আসছে, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সুস্থ ব্যক্তিদের কোরনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারেনি।
ইউনির্ভাসিটি অব মিনেসোটা মেডিক্যাল স্কুল শরীরে প্রতিরোধমূলক অবস্থা গড়ে তুলতে এই ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছিল। তাতেই দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রিয় ওষুধ শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে কার্যকর হয়নি।
করোনাভাইরাস বিশ্বে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই যে কয়েকটি ওষুধ নিয়ে আলোচনা চলেছে তারমধ্যে অন্যতম হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। সম্প্রতি বিশ্বের বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটের প্রতিবেদনেও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কিছু দিন আগে দ্য ল্যানসেট এক প্রতিবেদনে জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহারে মৃত্যুহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সেইসঙ্গে রোগীদের মধ্যে হৃদপিণ্ডজনিত বিভিন্ন সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ১৫ হাজার রোগীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণা থেকে এসব তথ্যই পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা রোগীদের চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনে ব্যবহার সাময়িক ভাবে নিষিদ্ধ করে। ফলে বিশ্বে এই সংক্রান্ত বেশ কিছু গবেষণা বন্ধ হয়ে যায়। এর পরই এই প্রতিবেদনটি নিয়ে আপত্তি তোলেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গবেষক ও চিকিৎসক।
দ্য ল্যানসেটের ওই গবেষণাটি বিশ্বব্যাপী কয়েকশ হাসপাতাল থেকে তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। কিন্তু কিছু গবেষকরা সেসব তথ্যের মান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। বিখ্যাত এই মেডিক্যাল জার্নালের চিকিৎসা জগতের উপর ভালরকম প্রভাব রয়েছে। ফলে প্রথমে সহজেই প্রতিবেদনটি গ্রহণযোগ্য হয়। কিন্তু পরবর্তীতে গবেষণার ধরন, পদ্ধতি ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
ল্যানসেট মূলত তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্গিসফেয়ার কোম্পানি থেকে। এই সংস্থাটি প্রায় এক লাখ মানুষের ওপর ভিত্তি করে এই তথ্য তৈরি করেছিল। যেখানে তারা হাইড্রোক্লোরকুইনের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছে। তবে সম্প্রতি ল্যানসেটের তরফে বলা হয়েছে, তাদের প্রকাশিত ওই গবেষণায় কিছু ত্রুটি রয়েছে। সেই সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান করার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
এদিকে জানা যাচ্ছে, সার্গিসফেয়ার মূলত বৈজ্ঞানিক কাহিনী ও প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট লেখার কাজ করে থাকে। কোভিড-১৯ সর্ম্পকিত যে ডাটা এই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ করেছে, তার মেথডলজি নিয়ে কোনো ব্যাখা দিতে পারেনি সার্গিসফেয়ার। সেই কারণেই এই সংস্থার প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশের সরকার হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে কেনও নীতি পরিবর্তন করল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় বিতর্ক ধামাচাপা দিতে ফের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ট্রায়াল শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।