তালিবানদের নিয়ে অবস্থানে বিরাট বদল, প্রথমবারের মতো সঙ্গে সম্পর্ক গড়ছে ভারত

তালিবানরা আর অচ্ছুৎ নয় নয়াদিল্লির কাছে

প্রথমবারের মতো তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চলছে

মার্কিনীরা আফগানিস্তান ছাড়ার সময়েই এই অবস্থান বদল

তবে পাক মদতপুষ্ট গোষ্ঠীগুলিকে দূরেই রাখছে সাউথ ব্লক

amartya lahiri | Published : Jun 8, 2021 6:01 PM IST

আফগানিস্তান থেকে দ্রুত সরছে মার্কিন সেনাবাহিনী। গোটা বিশ্বই মনে করছে, কাবুলের ভবিষ্যত নির্ধারণে বড় ভূমিকা নিতে চলেছে তালিবানরা। আর এই পরিস্থিতিতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আফগান তালিবান গোষ্ঠী এবং মোল্লা বরদার-সহ বড়মাপের তালিবান নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করল ভারত। হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। যদি এমনটা সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে আফগান তালিবানদের নিয়ে আগের অবস্থান থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে সরে এল নয়াদিল্লি, এমনটাই বলতে হবে।

আফগানিস্তান থেকে দ্রুত সরছে মার্কিন সেনাবাহিনী। গোটা বিশ্বই মনে করছে, কাবুলের ভবিষ্যত নির্ধারণে বড় ভূমিকা নিতে চলেছে তালিবানরা। আর এই পরিস্থিতিতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আফগান তালিবান গোষ্ঠী এবং মোল্লা বরদার-সহ বড়মাপের তালিবান নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করল ভারত। হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। যদি এমনটা সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে আফগান তালিবানদের নিয়ে আগের অবস্থান থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে সরে এল নয়াদিল্লি, এমনটাই বলতে হবে।

ওই প্রতিবেদনে এক সরকারি সূত্রের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মূলত ভারতীয় নিরাপত্তা কর্তারাই তালিবান গোষ্ঠী এবং তাদের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার কাজ চালাচ্ছে। তবে, আফগান তালিবানদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ভারত যোগাযোগের জন্য বেছে নিয়েছে, তাদেরকেই যারা জাতীয়তাবাদী তালিবান হিসাবে পরিচিত, অর্থাৎ, পাকিস্তান বা ইরানের দ্বারা প্রভাবিত নয়। গত বেশ কয়েক মাস ধরেই এই চেষ্টা চললেও, আপাতত বিষয়টি সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। তবে কোনও অবস্থাতেই পাক সামরিক বাহিনীর মগতপুষ্ট 'হক্কানি নেটওয়ার্ক' বা 'কেট্টা শুরা'র সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবে না ভারত।

ভারত মূলত চাইছে আফগান তালিবান গোষ্ঠীর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বরাদারের সঙ্গেই যোগাযোগ গড়ে তুলতে। এখনও নিরাপত্তা কর্তাদের সঙ্গে  তাঁর কোনও বৈঠকের কথা  পাকা না হলেও দুইপক্ষেই বার্তা চালাচালি চলছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকার সঙ্গে তালিবানদের পক্ষে তিনিই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, যার ফলে বর্তমানে সেই দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করছে আমেরিকা। শুধু তাই নয়, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে আফগানিস্তান যখন তালিবান দখলে ছিল, সেই সময় এই মোল্লা বরদার দারুণ উচ্চপদে ছিলেন। পরে হামিদ কারজাই সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনাও শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে করাচিতে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই তাকে আটক করেছিল। ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দোহায় তালিবান কার্যালয়ের প্রধানের পদ পেয়েছিলেন। এইমাপের এক তালিবান নেতার কাছে পৌঁছনোটা সাউথ ব্লকের বডড় সাফল্য।

আবদুল ঘানি মোল্লা বরাদার

আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নের প্রচেষ্টায় ৩ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। তবে এতদিন তালিবানদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি নয়াদিল্লি। তাই এই ক্ষেত্রে রাশিয়া, চিন ও ইরানের মতো অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলির তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। মূলত পাকিস্তানের সঙ্গে তালিবানদের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কারণেই আফগান তালিবান গোষ্ঠীগুলিকে অচ্ছুৎ করে রাখা হয়েছিল। তাই এতদিন তালিবানদের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ না করে উত্তর আফগানিস্তানের তাজিক এবং অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলত দিল্লি।

তবে বর্তমানে সেই অবস্থানের বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। সাউথ ব্লকের অনেক কর্তাই মনে করেন, তালিবান নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ালে আখেরে ভারতের লাভই হবে। তবে এখনও নয়াদিল্লির কিছু কিছু বিষয় নিয়ে তালিবানদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কিন্তু-কিন্তু আছে। নারি ও সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং ইসলামিক আমিরশাহি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র তালিবানদের আগ্রাসী অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীতে আছে ভারত। তাই, তালিবানরা ক্ষমতায় বাড়লে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে আফগানিস্তানে যে সুবিধাগুলি এসেছিল, তা কতটা ধরে রাখা যাবে, তাই নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তবে, তালিবান নেতাদের কয়েকজন এখন বেশ বুঝতে পারছেন, আফগানিস্তানের পুনরগঠনে ভারতকে পাশে পাওয়া দরকার। বিশেষ করে পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা লাভের। তাই দুই পক্ষেই এক ধরণের বোঝাপড়া তৈরি হচ্ছে।

 

Share this article
click me!