যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনে (Ukraine) একটি জাগুয়ার (Jaguar) এবং একটি ব্ল্যাক প্যান্থারের (Black Panther) সঙ্গে দিন কাটাচ্ছেন এক ভারতীয় ডাক্তার। কেন দেশে ফিরতে চাইছেন না অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) এই বাসিন্দা?
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেন (Ukraine) থেকে যখন সবাই পালাতে পারলে বাঁচে, তখন এক বেসমেন্টে লুকিয়ে দিন কাটাচ্ছেন ভারতীয় ডাক্তার গিরিকুমার পাতিল। মহাসমস্যায় পড়েছেন তিনি। দেশ থেকে তাঁর পরিবার, তাঁকে বারবার ফিরে আসার জন্য বলছে। কিন্তু, তিনি তাঁর পোষ্যদের ছেড়ে যেতে পারছেন না। পোষ্য বলতে সাধারণ বেড়াল কুকুর নয়, রয়েছে দুটি 'বিগ ক্যাট' (Big Cats) - একটি জাগুয়ার (Jaguar) এবং একটি ব্ল্যাক প্যান্থার (Black Panther)!
পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস (Donbas) অঞ্চলের ছোট্ট শহর সেভেরোডোনেৎস্ক-এ (Severodonetsk) থাকেন তিনি। এমনিতে বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) পশ্চিম গোদাবরী জেলার (West Godavari District) তানুকু'তে (Tanuku)। ২০০৭ সালে তিনি প্রথম ইউক্রেনে এসেছিলেন, ডাক্তারি পড়তে। আর ফেরেননি। ২০১৪ থেকে সেই দেশেই হাড়ের ডাক্তার হিসাবে কাজ করেন। বর্তমানে সেভেরোডোনেৎস্ক-এর এক সরকারি হাসপাতালে কর্মরত। গত, ছয় বছর ধরে এই শহরেই থাকেন। পোষ্যদের জন্যই এলাকায় তিনি 'জাগুয়ার কুমার' নামে পরিচিত। আশপাশে আমি আর কোনও ভারতীয় থাকেন না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ লাগতেই বেশিরভাগ প্রতিবেশীই ইতিমধ্যেই কাছের গ্রামগুলিতে পালিয়ে গিয়েছেন। শুধু জাগুয়ার কুমার থেকে গিয়েছেন তাঁর দুই পোষ্যকে নিয়ে।
আরও পড়ুন - একটি জাগুয়ার আর একটি প্যান্থারের সঙ্গে বাঙ্কারে, ইউক্রেন ছাড়তে নারাজ ভারতীয় ডাক্তার
আরও পড়ুন - 'আসতে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়', ইউক্রেন-ফেরত ছাত্রের মুখে যুদ্ধের ভয়াবহতা
আরও পড়ুন - রাশিয়ার যুদ্ধের প্রতীক কি 'Z', সোশ্যাল মিডিয়ায় পুতিনের তুলনা হিটলারের সঙ্গে
দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ ওয়ান নিউজের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই তাঁর পোষ্যদের নিয়ে এক বাঙ্কারে আশ্রয় নেন এই ভারতীয় ডাক্তার। বাঙ্কারে যেতে খুব একটা আপত্তি করেনি জাগুয়ার ও প্যান্থাররা। কিন্তু এখন তাদের পর্যাপ্ত মাংস সরবরাহ করতে পারছেন না গিরিকুমার পাতিল। বাঙ্কারটির চারপাশে প্রচুর রুশ (Russia) বোমা হামলা হচ্ছে বলে প্রাণীদুটি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছে। তারা খাচ্ছেও কম। তাই তাদের ছেড়ে আসতেও পারছেন না তিনি।
কিন্তু, কীভাবে এই বড় বিড়াল পোষা শুরু করলেন তিনি? গিরিকুমার পাতিল জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি একটি বেঙ্গল টাইগার (Bengal Tiger) বা একটি এশিয়াটিক সিংহ (Asatic Lion) পোষার কথা ভেবেছিলেন। তবে, ২০২০ সালে, এক স্থানীয় চিড়িয়াখানায় গিয়ে তিনি প্রথম জাগুয়ারটিকে দেখেছিলেন। সে বেশ অসুস্থ ছিল। এরপর, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে, তিনি তাকে একটি ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান। পরে ওই জাগুয়ার ও ব্ল্যাক প্যান্থারটিকে দত্তক নিয়েছিলেন। পুরুষ জাগুয়ারটির বয়স ২০ মাস এবং মহিলা প্যান্থারটির মাত্র ছয় মাস।
যুদ্ধের আগে তিনি তাদের নিয়ে জঙ্গলে বেড়াতে যেতেন। সেই দিনগুলিই 'জাগুয়ার কুমারে'র জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল। তাই এখন, নিজের জীবন বাঁচাতে পোষ্যদের ছেড়ে আসার কথা ভাবতেই পারছেন না তিনি। অবিবাহিত এই ভারতীয় ডাক্তার সাফ জানিয়েছেন, এই দুই পোষ্য তাঁর সন্তান। প্রতিদিন ভোরে কারফিউ শিথিল হলে, শুধুমাত্র তাদের খাবার কেনার জন্যই তাঁর ছোট্ট বেসমেন্ট থেকে বের হচ্ছেন। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তাদের রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করেছেন যে তিনি।