
Balochistan Unfinished Rebellion: ২৬ অগাস্ট, নবাব আকবর বাগটির হত্যার দিন। একাধিক আক্রমণ যেন বালুচিস্তানের রাস্তাগুলিকে রীতিমতো কাঁপিয়ে তুলেছিল। যার ফলে, ৭০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছিলেন। বালুচিস্তান প্রদেশের অনেকের কাছে, এই তারিখটি গভীরভাবে রাজনৈতিক এক তাৎপর্য বহন করে থাকে। কারণ, ২০০৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মুশারফের নির্দেশে সামরিক অভিযানে বাগটির মৃত্যু তাঁকে বালুচ প্রতিরোধের এক শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে সম্মান করে।
২০২৪ সালের রক্তপাত যেন সেই রেখে যাওয়া আন্দোলনটিকেই আবারও মনে করিয়ে দেয়। কীভাবে তার উত্তরাধিকারকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে, তা বুঝিয়ে দেয়। বালুচিস্তানের উপর বরাবর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে গেছে এবং ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত স্থানীয় গোষ্ঠীরা বারবার তার প্রতিরোধও করেছে। এই হল সেখানকার উপাখ্যান।
সেই ১৯৪৮ সালে, কালাতের অন্তর্ভুক্তি থেকে শুরু করে ১৯৫০-এর দশকের অয়ান-ইউনিট নীতি এবং ১৯৭০-এর দশকে বিগ-স্কেল অভিযান পর্যন্ত, এই প্রদেশটি ধারাবাহিক বিদ্রোহ এবং দমন-পীড়নের মধ্য দিয়েই বেঁচে আছে।
বালুচিস্তানের মানবাধিকার কাউন্সিল ২০২৪ সালে, ৮৩০ জনকে বলপূর্বক নিখোঁজ এবং ৪৮০ জনকে হত্যার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। নিখোঁজদের মধ্যে শিক্ষার্থীরা সবথেকে বেশি। তারা জানিয়েছে, বিদ্রোহী হামলার পর বলপূর্বক নিখোঁজের ঘটনা অনেক বেড়ে যায়। বলপূর্বক নিখোঁজের বিষয়ে পাকিস্তানের সরকারি তদন্ত কমিশন ২০১১ সাল থেকে ১০,০০০-এরও বেশি মামলার রেকর্ড করেছে।
গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে, বালুচ ঐক্য কমিটির নেতৃত্বে নারীদের একটি মিছিল নিখোঁজ আত্মীয়দের মুক্তির দাবিতে ১,৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ হেঁটে ইসলামাবাদে পৌঁছয়। অন্যদিকে, চলতি বছরের শুরুতে যখন জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনা ঘটে এবং আন্দোলনকারীদের মৃতদেহ কোয়েটার সিভিল হাসপাতালে পৌঁছয়, তখনও পরিবারের সদস্যরা প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। যার ফলে কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং কর্মী ডাঃ মেহরাং বালুচকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়াদার এবং অন্যান্য জেলায় ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পাকিস্তানের জন্য চ্যালেঞ্জ শুধুমাত্র নিরাপত্তা নয়। বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মির মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো এবং চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের অধীনে চিনা-সমর্থিত প্রকল্পগুলির উপরেও আক্রমণ করছে। প্রতিক্রিয়া হিসেবে, নিরাপত্তা অভিযান আরও কঠোর হয়েছে পাকিস্তান সরকারের তরফে।
পাকিস্তান ২০১০ সালে, নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদন করেছে। তবে বলপূর্বক নিখোঁজের বিষয়ে, জাতিসংঘের কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি তারা। বলপূর্বক নিখোঁজের বিষয়ে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ এখনও তার প্রতিবেদনে পাকিস্তানের উল্লেখ করে থাকে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই প্রথা বন্ধ করতে ব্যর্থতার জন্য ইসলামাবাদের সমালোচনাও করেছে।
দশকের পর দশক ধরে রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিককরণ এবং অর্থনৈতিক শোষণ এমন অভিযোগ তৈরি করেছে, যা বলপূর্বক নিখোঁজ এবং বল প্রয়োগ করে মুছে ফেলা যায় না। প্রতিটি প্রতিবাদ, নিখোঁজ শিক্ষার্থী এবং বাগটির বার্ষিকী দেখায় যে, বালুচিস্তানের সংকট আসলে সেই দেশের ভুল নীতির ফলাফল। কোনও সুযোগের নয়।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।