ভাইরাল ভিডিওয় খসে পড়ল তালিবানদের ভালোমানুষির মুখোশ। চোখ-হাত বেঁধে গুলিতে ঝাঝড়া করে দেওয়া হল আফগানিস্তানের বাদগিস প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে।
গত ১৭ অগাস্ট আফগানিস্তান দখলের পর প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করেছিল তালিবানরা। তালিবান মুখপাত্র জাবিবুল্লাহ জোর গলায় বলেছিলেন, ক্ষমতা বদলের পর তাদের প্রতিপক্ষের একজনের বিরুদ্ধেও কোনও প্রতিশোধমূলক আচরণ করা হবে না। 'এ টু জেড' সবাই নিরাপদ থাকবে। তালিবান বাহিনীর এই শুধরে যাওয়ার মুখোশ যে কত ঠুনকো, তা যত দিন যাচ্ছে ততই সামনে আসছে। এর আগে প্রতিবাদীদের উপর নির্বিচারে গুলিচালনা, স্বাধীনতা দিবস রক্তাক্ত করার ছবি ও ভিডিও সামনে এসেছিল। এবার একাবরে চোখ-হাত বেঁধে, ঠান্ডা মাথায় এক আঞ্চলিক পুলিশ প্রধানকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়ার ভয়ঙ্কর একটি ভিডিও ক্লিপ ফাঁস হয়ে গেল।
ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তির হাত এবং চোখ বাঁধা। তাঁকে হাঁটু মুড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর আল্লাহু আকবরের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে বেশ কয়েকটি গুলি চালানোর আওয়াজ পাওয়া যায়। কিছুটা সময় ধোঁওয়ায় ঢেকেছিল ক্যামেরার লেন্স। ধোঁওয়া কাটতে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে ওই ব্যক্তির নিথর দেহ। দাবি করা হয়েছে ভিডিওতে দেখা যাওয়া ওই হতভাগ্য ব্যক্তি আর কেউ নন, হেরাত সংলগ্ন বাদগিস প্রদেশের পুলিশ প্রধান জেনারেল হাজি মোল্লা আচাকজাই। ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের শেষদিকে তুর্কমেনিস্তান সীমান্তবর্তী বাগদিস দখলের সময়ই প্রবীন এই কমান্ডারকে বন্দী করেছিল তালিবানরা। ষাটোর্ধ্ব আচাকজাই, তালিবান এবং আফগান সরকারি সামরিক বাহিনীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘর্ষে একজন সুপরিচিত যোদ্ধা ছিলেন।
ভিডিও ক্লিপটির সত্যতা যাচাই না করা গেলেও, বিবিসি পারস্যের প্রাক্তন সাংবাদিক নাসরিন নাওয়া-ও এই ভিডিও ক্লিপটি টুইট করেছেন। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, বাদগিস প্রদেশের পুলিশ প্রধান হাজি মোল্লা আত্মসমর্পণ করার পরও তালিবানরা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এটাই বোধহয় তাদের ক্ষমা করার পদ্ধতি!
আরও পড়ুন - আমরুল্লা সালে - 'চিরকালের গুপ্তচর' এখন নিজেই আফগান প্রেসিডেন্ট, পঞ্জশির প্রতিরোধের মুখ
আরও পড়ুন - তালিবানদের উৎখাতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে 'পাঁচ সিংহে'র উপত্যকা - জড়ো হচ্ছে নর্দান অ্যালায়েন্স
আরও পড়ুুন- Afghanistan - 'পাকিস্তানের গ্রাস করার কিংবা তালিবানদের শাসনের পক্ষে অনেক বড় দেশ'
রাষ্ট্রসংঘকে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে নরওয়েজিয়ান সেন্টার ফর গ্লোবাল অ্যানালাইসিস। তাদের এক গোপন নথিতে দাবি করা হয়েছে, তালিবানরা মুখে প্রতিশোধ নেওয়া হবে না বললেও, কারা কারা মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, তা জানতে বর্তমানে আফগানিস্তান জুড়ে জোরদার অনুসন্ধান চালাচ্ছে। শুধু রাষ্ট্রসংঘের এই নথিতেই নয়, সংবাদ সংস্থা এএফপি-ও দাবি করেছে, তালিবানদের হাতে তাদের নিশানাদের একটি 'অগ্রাধিকার তালিকা'। সেখানে নাম থাকা ব্যক্তিদের তারা গ্রেফতার করতে চায়, এমনটাই জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ এবং এএফপি, দুজনেই সতর্ক করে বলেছে, আফগান সামরিক বাহিনী, পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগের বিবিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে। তালিবানরা এখন তাদের এবং তাদের পারিবারিক সদস্যদের ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। একইসঙ্গে খবর আদায়ের জন্য, তালিবানরা দ্রুত নিজস্ব চরবাহিনীও তৈরি করছে।