- Home
- World News
- International News
- আমরুল্লা সালে - কয়েক দশক ধরে লড়ছেন তালিবানদের বিরুদ্ধে, আফগানদের স্বপ্ন এখন তিনিই
আমরুল্লা সালে - কয়েক দশক ধরে লড়ছেন তালিবানদের বিরুদ্ধে, আফগানদের স্বপ্ন এখন তিনিই
গত রবিবার, ১৫ অগাস্ট প্রাক্তন আফগান রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানি ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়ার পর তাঁরও দেশত্যাগের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। কিন্তু, বরাবরের যোদ্ধা এবং চরম তালিবান বিরোধী হিসাবে পরিচিত আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রধান, আমরুল্লা সালে কিন্তু দেশ ছাড়েননি। জানা গিয়েছে, তিনি বর্তমানে আফগানিস্তানের একমাত্র তালিবান-মুক্ত, পঞ্জসের প্রদেশে তালিবান বিরোধী শক্তিদের একত্রিত করছেন প্রতিঘাতের জন্য। সেখান থেকে তিনি নিজেকে দেশের কেয়ারটেকার প্রেসিডেন্ট বা তত্ত্বাবধায়ক রাষ্ট্রপতি বলেও ঘোষণা করেছেন। কে এই সালে, আসুন চিনে নেওয়া যাক -
| Published : Aug 18 2021, 11:37 PM IST / Updated: Aug 24 2021, 02:34 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
অল্প বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়েছিলেন আমরুল্লা সালে। তাঁর মেন্টর হয়ে উঠেছিলেন পঞ্জশের প্রদেশের নায়ক তথা গেরিলা কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদ। ১৯৯০-এর দশকে মাসুদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তালিবান বিরোধী যুদ্ধ করেছিলেন তিনি।
একসময় সরকারের আওতায় চাকরি করতেন তিনি। পরে তাঁর বোনকে তালিবানদের যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ওই ঘটনা, তালিবানদের সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি চিরতরে বদলে দিয়েছিল।
এরপর তালিবানরা কাবুল দখল করলে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর ২০০১ অবধি প্রতিরোধ চালিয়ে যান। ৯/১১ হামলার পর সিআইএর জন্য অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠেছিলেন সালে।
এরপর ২০০৪ সালে আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের পর সিআইএ তাঁকে নবগঠিত আফগানিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডাইরেক্টরেট বা এনডিএস (NDS)-এর প্রধান হিসাবে নিযুক্ত করেছিল। এনডিএস প্রধান হিসাবে সালে তালিবানদের দলের ভিতরে এবং আফগান-পাক সীমান্ত জুড়ে ইনফর্মার এবং গুপ্তচরদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন। পশতুভাষী এজেন্টদের তালিবানদের দলে পাঠাতেন, নেতাদের উপর নজর রাখার জন্য।
সালে যে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন, তা একসময় ভারতের জন্যও সহায়ক হয়েছিল। তিনি স্পষ্ট প্রমাণ বের করেছিলেন যে পাক সামরিক বাহিনী তালিবানদের বরাবর সমর্থন দিয়ে এসেছে। যার ভিত্তি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ঘানি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে একহাত নিয়েছিলেন।
সালের এই উত্থানের পথে তাঁকে অবশ্য বড় হোঁচটও খেতে হয়েছিল। ২০১০ সালে কাবুলে শান্তি সম্মেলনে সরকারকে অপমানজনক আক্রমণের পর তাঁকে আফগানিস্তানের গুপ্তচর প্রধানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তারপরেও টুইটারে তিনি নিয়মিত তালেবান এবং ইসলামি চরমপন্থার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই বজায় চালিয়ে গিয়েছিলেন।
২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে মিটমাট হয় তাঁর। তাঁকে আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বসান ঘানি। ২০১৯-এর জানুয়ারিতেই তাঁকে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট করা হয়েছিল।
মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান থেকে পাত্তারি গোটানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থেকে এখনও পর্যন্ত তালিবানরা বারবার সালেকে হত্যার চেষ্টার করেছে। সর্বশেষ হামলা হয়েছিল ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে। কাবুলে তাঁর কনভয় লক্ষ্য করে একটি বিশাল বোমা ছুঁড়েছিল তালিবানরা।
ওই বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে এতটুকু না গুটিয়ে গিয়ে ওই হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, সালে বাঁ হাতের ব্যান্ডেজ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ক্য়ামেরার সামনে। বলেছিলেন, 'আমরা লড়াই চালিয়ে যাব'।
সেই প্রতিশ্রুতি তিনি সম্প্রতি আবার দিয়ে বলেছেন, তালিবানদের সঙ্গে এক ছাদের তলায় ঘর করা সম্ভব নয়। আপাতত তিনি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষার জন্য খ্যাত, পঞ্জশের উপত্যকায় আফগান বাহিনী ও নর্দান অ্যালায়েন্সের যোদ্ধাদের একত্রিত করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গিয়েছে। এই উপত্যকা এখনও পর্যন্ত কোনওদিন তালিবান বা কোনও বিদেশী শক্তি দখল করতে পরেনি।
পঞ্জশেরের তালিবান বিরোধী নেতা তথা সালের একসময়ের মেন্টর আহমদ শাহ মাসুদের পুত্র আহমদ মাসুদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন তিনি। তাঁদের দুজনের বৈঠকের একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। মাসুদ নর্দান অ্যালায়েন্সের যোদ্ধাদের পঞ্জশেরে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে পঞ্জশেরের এক বাসিন্দা বলেছেন, 'আমরা তালিবানদের পঞ্জশেরে প্রবেশ করতে দেব না। আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করব, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।' পারস্য পঞ্জশের শব্দের বাংলা করলে হয় পাঁচটি সিংহ। সিংহহৃদয় যোদ্ধাদের কাজে লাগিয়ে তালিবানদের কি উৎখাত করতে পারবেন সালে, সেটাই এখন দেখার।