প্রত্য়াশা ছিল নাতি-নাতবৌকে তিনি আটবাকেন। কিন্তু সোমবার নাতির হ্য়ারির সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁর রাজপরিবার ছেড়ে যাওয়াকে কার্যত ইতিবাচকভাবেই নিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেইসঙ্গে অবশ্য় তাঁর সামান্য় আক্ষেপ, 'ওঁরা' রয়্যাল রয়ে গেলেই ভাল হত।
গত বুধবার খবরটা দাউদাউ করে ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্রিটেনের রাজপরিবার ছেড়ে বেরিয়ে দিতে চাইছেন প্রিন্স হ্য়ারি আর তাঁর স্ত্রী মেগান। এমনকি, রাজ অনুগ্রহ নিতেও তাঁরা অস্বীকার করছেন। নিজেরা স্বনির্ভর হয়েই বাকি জীবনটা কাটাবেন বলে যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন হ্য়ারি ও তাঁর অভিনেত্রী স্ত্রী মেগান।
এদিকে এই ঘোষণার পর ব্রিটেনের রাজ পরিবারে শুরু হয়েছিল সঙ্কট। যা মেটানোর জন্য নাতি হ্য়ারিকে নিয়ে সোমবার বৈঠকে বসেন স্বয়ং রানি নিজে। সেই সঙ্গে, হ্য়ারির বাবা যুবরাজ চার্লস, আর দাদা রাজকুমার উইলিয়ামস। প্রসঙ্গত, উইলিয়ামসের সঙ্গে হ্য়ারির মন কষাকষি নিয়ে নানারকম মুখরোচক খবর ছড়িয়েছে ব্রিটেনের খবরের কাগজগুলো। হ্য়ারি নাকি মিডিয়ার কাছে অভিযোগ করেছেন, দাদা উইলিয়াম তাঁদের সঙ্গে অপমানজনক আচরণ করেছেন। যার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন দুই ভাই-ই।
এই পরিস্থিতিতে মনে করা হয়েছিল, সোমবারের বৈঠকে হ্য়ারির রাজ পরিবার ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাঁকে বোঝাবেন তাঁর ঠাকুমা। মনে করা হয়েছিল, রানি তাঁর নাতিকে বলবেন, "কেন ছেড়ে যাচ্ছ রাজ পরিবার"। কিন্তু সে পথে না হেঁটে হ্য়ারির এই কাজে তিনি তাঁর 'পুরো সমর্থন' আছে বলে জানিয়েছেন রানি। তবে সেইসঙ্গে ৯৩ বছরের রানি এ-ও জানিয়েছেন, হ্য়ারি আর মেগান রাজ পরিবারে থেকে গেলেই ভাল লাগত তাঁর।
প্রসঙ্গত, প্রিন্স হ্য়ারি ও মেগান তথা সাসেক্সের ডিউক ও ডাচেস ইতিমধ্য়েই একটি দাতব্য সংস্থা তৈরি করেছেন। যা উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকায় মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করবে বলে জানা গিয়েছে। রাজ পরিবারের জীবনযাপন তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে দাবি করেছিল এই তরুণ দম্পতি।
বুধবার, হ্য়ারি ও মেগানের ওই বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর নানা মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা। রাজ পরিবারের একটি মহলের দাবি, পরিবারের কোনও সদস্যের কর্মজীবন বা ভূমিকায় কোনও পরিবর্তন ঘটলে সেখানে রানির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই হ্য়ারি ও মেগানের এই ঘোষণার পর আসরে নামেন স্বয়ং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
এই প্রসঙ্গে কেউ কেউ আবার মনে করছেন যুবরানি ডায়নার কথা। ১৯৯৭ সালে ভয়ঙ্কর এক গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান হ্য়ারির মা ডায়না। ডায়নার সঙ্গেও রাজ পরিবারের বিস্তর দূরত্ব তৈরি হয়। যুবরাজ চার্লসের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য় জীবন আদৌ সুখের ছিল না। ডায়না তাই খোলাখুলিই অনেক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন। ডায়নার সেই 'কেচ্ছা' সেই সময়ে ব্রিটিশ ট্য়াবলয়েডগুলোর কাছে দৈনন্দিনের খবর হয়ে দাঁড়াত। দুর্ঘটনায় ডায়নার মৃত্যুর পর রাজ পরিবারের দমবন্ধ করা পরিবেশ নিয়ে উঠে এসেছিল বেশ কিছু প্রশ্ন।