আপন মেয়ের চোখ উপড়ে নিতেও কসুর করেনি তালিবানি বাবা, পুলিশ হতে চেয়েছিল খাতেরা হাশেমি

পুলিশ হিসাবে দেশের সেবা করতে চেযেছিলেন আফগান মহিলা খাতেরা হাশেমি। তালিবানি বাবাই লোক লাগিয়ে তাঁর চোখ উপরে নিয়েছে। 

ছোট থেকেই দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করতে চাইতেন খাতেরা হাশেমি। ২০২০ সালের মার্চ মাসে এসেছিল সেই সুযোগ। আফগান মহিলা পুলিশ বাহিনীর সদস্য হয়েছিলেন তিনি। যোগ দিয়েছিলেন গজনি শহরের অপরাধমূলক তদন্ত বিভাগে। তবে, তিনমাস যেতে না যেতেই ভেঙে গিয়েছিল হাশেমির স্বপ্ন। ২০২০ সালের জুন মাসে, কাজ শেষ করে থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তালিবানরা। তাঁকে গুলি করা হয়েছিল, ও ধারালো চাকু দিয়ে উপরে নেওয়া হয়েছিল তাঁর দুই চোখ। 

প্রায় দেড় বছর পরও সেই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার স্মৃতি খাতেরার মনে একেবারে দগদগে হয়ে রয়েছে। বহর্তমানে স্বামী মহম্মদ নবির সঙ্গে তিনি নয়াদিল্লিতে আছেন, চিকিৎসার জন্য। এক পশতু সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, তাঁকে যারা আক্রমণ করেছিল, তাদের দুজনের কাছে বন্দুক ছিল। প্রথমে তাদের ছোঁড়া দুটি বুলেট খাতেরার পিঠে এবং হাতে লেগেছিল। তারপরও তিনি দাঁড়িয়ে আছেন দেখে, তালিবানরা তৃতীয় গুলিটি করেছিল তাঁর মাথায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন ৩২ বছরের আফগান মহিলা। তালিবানি বর্বরতা সেখানেই শেষ হয়নি। হামলাকারীরা এরপর একটি ছুরি নিয়ে তার উপর চড়াও হয়। উপরে নেওয়া হয় তাঁর দুই চোখ। 

Latest Videos

"

সেই সময় দুই মাসের অন্তসত্ত্বা ছিলেন খাতেরা। সৌভাগ্যক্রমে সেই হামলায় শুধু খাতেরা একা নন, তাঁর গর্ভের সন্তানটিও বেঁচে গিয়েছিল। অবশ্য, জটিলতার কারণে ভারতে এসে তাঁকে অপারেশন করাতে হয়েছিল। বস্তুত, খাতেরা পুলিশের চাকরিতে ঢোকার পর থেকেই তাঁকে তো বটেই, তাঁর স্বামী মহম্মদ নবিকেও ক্রমাগত হুমকি দিত তালিবানরা। এমনকী গজনির পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দারাও খাতেরা ডেকে সতর্ক করেছিলেন, বলেছিলেন কাবুলে চলে যেতে। 

আরও ভয়ঙ্কর বিষয় হল, আফগান পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করে জানতে পেরেছিল, খাতেরার উপর হামলার ঘটনার পিছনে মূল চক্রী ছিলেন খোদ খাতেরার বাবা! সে একজন প্রাক্তন তালিবান যোদ্ধা। এখন নিজে লড়াই করতে না পারলেও, স্থানীয় তালিবানি যোদ্ধাদের সঙ্গে ভালই যোগাযোগ ছিল। সে-ই, তালিবান যোদ্ধাদের পাঠিয়েছিল খাতেরাকে বাড়ির বাইরে কাজ করার শাস্তি দিতে। আফগান পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল।  

২০২০ সালের নভেম্বর মাসে খাতেরা তাঁর স্বামী এবং শিশুকে নিয়ে নয়াদিল্লিতে এসেছিলেন চোখের চিকিৎসা করাতে। সেই থেকে তাঁরা ভারতেই আছেন। ডাক্তাররা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, দৃষ্টি ফিরে পাওয়া খাতেরার পক্ষে কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এরমধ্যেই তাদের দেশ চলে গিয়েছে তালিবানদের দখলে। দেশে তাঁদের আরও ৫ সন্তান রয়েছে। তাঁরা প্রায়ই হুমকি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাতেরা। তাঁর দাবি, তাঁর চোখ গেলেও পা এখনও আছে। তিনি চলাফেরা করতে পারেন। এবার আফগানিস্তানে গেলে তালিবানরা তাঁর পা কেটে নেবে।   

তিনি আরও বলেছেন, আসলে তালিবানরা মনে করে, মহিলারা মানুষের মতো শ্বাস নেয় ঠিকই, কিন্তু কোনও জীবিত প্রাণী নয়। শুধুমাত্র কয়েকদলা মাংস, তাই সেই মাংসের দলাকে যথেচ্ছ পেটানো যায়। তিনি জানিয়েছেন এরকম নির্মম নির্যাতন করে মহিলাদের দেহগুলি রাস্তায় ফেলে দেয় তালিবানরা। কখনও কখনও সেই সব দেহ খাওয়ানো হয় কুকুরদের।

আরও পড়ুন - আমরুল্লা সালে - 'চিরকালের গুপ্তচর' এখন নিজেই আফগান প্রেসিডেন্ট, পঞ্জশির প্রতিরোধের মুখ

আরও পড়ুন - তালিবানদের উৎখাতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে 'পাঁচ সিংহে'র উপত্যকা - জড়ো হচ্ছে নর্দান অ্যালায়েন্স

আরও পড়ুুন- Afghanistan - 'পাকিস্তানের গ্রাস করার কিংবা তালিবানদের শাসনের পক্ষে অনেক বড় দেশ'

 এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত, তালিবানি আফগানিস্তানে মহিলাদের বাড়ির বাইরে কাজ করার অনুমতি ছিল না, স্কুলে যাওয়ার অনুমতি ছিল না, সবসময় মুখ ঢেকে রাখতে হতো এবং বাড়ি থেকে বের হতে গেলে সঙ্গে কোনও পুরুষ সঙ্গী থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। ইসলামের নামে এই ধরণের বিধি নিষেধ তারা আরোপ করেছিল মহিলাদের উপর। ফের ক্ষমতায় ফেরার পর তারা, 'পাল্টে গেছি' বলে দাবি করে যাচ্ছে। তবে এমন আশা মানবাধিকার কর্মীরা কেউ খুব একটা দেখতে পাচ্ছেন না।ো


Share this article
click me!

Latest Videos

'একত্রিত হতে হবেই, ওরা ৫০ পেরলেই শরিয়া আইন চালু করবে' গর্জে উঠলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | News
'Mamata Banerjee-র জন্যই অভয়ার এই অবস্থা' বলতে গিয়ে এ কী বললেন Suvendu Adhikari, দেখুন
শুভেন্দুর বিরাট ঘোষণা! সোনাচূড়ার আড়াই বিঘা জমিতে হবে বিশাল Ram Mandir | Suvendu Adhikari
'সনাতনী সম্মেলন'-এ Suvendu Adhikari-র বিশেষ বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘RG Kar-র তথ্য প্রমাণ Mamata Banerjee-র নির্দেশে লোপাট হয়েছে’ বিস্ফোরক Adhir Ranjan Chowdhury