রবিবার মাঝ আকাশে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল তারা এয়ারের টুইন ইঞ্জিনের একটি বিমানে। এতে ২২ যন যাত্রী ছিলেন। যারমধ্য়ে ৪ জন আবার ভারতীয়। তুষারপাত এবং আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় উদ্ধার কাজ বন্দ করে দিতে হয়েছিল। সোমবার ফের উদ্ধার কাজ শুরু হয়।
অবশেষে মিলল নিখোঁজ তারা এয়ারের বিমানের ধ্বংসাবশেষ। সোমবার সকালে নেপালের সেনাবাহিনী মুস্তাঙ্গে-তে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে পর্বেতর গায়ে ভেঙে পড়া তারা এয়ারের বিমানটির খোঁজ মেলে। বিমানের কোনও যাত্রী বেঁচে নেই। এমনকী তাদের দেহাবশেষও বিমানের আগুনে প্রায় পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে বিমানটি ভেঙে পড়ার পর বিকট বিস্ফোরণ হয় এবং তা থেকে বিমানে আগুন লেগে যায়। একে ছোট্ট বিমান, যার ফলে আগুন দ্রুত গ্রাস করে নেয় সমস্তকিছু। বাঁচার কোনও সুযোগই পাননি বিমানের যাত্রীরা।
সোমবার সকালে একটি বিবৃতি জারি করে নেপাল সেনাবাহিনী। সেখানে তারা উল্লেখ করে যে সোমবার সকালে তারা এয়ারের নিখোঁজ বিমানটির ধ্বংসাবশেষ মুস্তাঙ্গে এলাকার পর্বতের চূড়াতে মিলেছে। রবিবারই বিমান নিখোঁজ হওয়ার পর অনুমান করা হয়েছিল যে মুস্তাঙ্গে-ই হয়তো বিমানটি ভেঙে পড়েছে। সেই মতো তল্লাশি অভিযানও শুরু করেছিল নেপাল সেনাবাহিনী। কিন্তু, আবহাওয়া দ্রুত খারাপ হওয়ায় সেনাবাহিনীর উদ্ধার হেলিকপ্টারকে ফিরে আসতে হয়েছিল। আবহাওয়া খারাপ হওয়ার সঙ্গে তুষারপাত নেমেছিল। ফলে সেনাবাহিনীর উদ্ধার হেলিকপ্টারের পাইলট কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না এবং এমন তুষারপাতের মধ্যে হেলিকপ্টার চালাতে গিয়ে বিপদের সম্ভাবনা বাড়তে থাকায় তা এয়ারবেসে ফিরে যায়। সোমবার সকাল হতেই তড়িঘড়ি তল্লাশি অভিযানে নেমেছিল নেপাল সেনাবাহিনী। এরপরই মুস্তাঙ্গ এলাকার থাসাং টু-এর সানসোয়ারে বিমানের ধ্বংসাবশের খোঁজ মেলে।
রবিবার সকাল ১০টায় তারা এয়ারের বিমানটি পোখরা থেকে আকাশে ওড়ে। গন্তব্য ছিল জমসম। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। কিন্তু, এর কিছুক্ষণ পরেই বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়। বিমানে ২২ জন যাত্রী ছিলেন। যারমধ্যে আবার ৪ জন ভারতীয়। জানা গিয়েছে তারা এয়ারের ৯এন-এইটি বিমানটি কানাডায় তৈরি হয়েছিল।
তারা এয়ারের পক্ষ থেকে যে যাত্রী তালিকা প্রকাশ হয়েছে, তাতে ৪ ভারতীয়র নাম রয়েছে। এরা সকলেই একই পরিবারের সদস্য। মুম্বই-এর কাছে থানের বাসিন্দা অশোককুমার ত্রিপাঠী পরিবার নিয়ে নেপালের জমসমে যাচ্ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এই তালিকায় অশোককুমার ত্রিপাঠী ছাড়াও তাঁর স্ক্রী বৈভবি ত্রিপাঠী এবং তাঁদের দুই সন্তান ধনুষ এবং ঋতিকার নাম রয়েছে। বৈভবি ত্রিপাঠীর দিদি তারা এয়ার-কে অনুরোধ করেছেন যাতে ঘূণাক্ষরে তাঁদের মা-এর কাছে যেন এই খবর না দেওয়া হয়। কারণ বৈভবির মা প্রচণ্ড অসুস্থ এবং তিনি এই শোক নেওয়ার মতো জায়গায় নেই।
মুস্তাঙ্গ হল হিমালয়ের কোল্ড ডেজার্ট মাউন্টেন এলাকার অনুর্ভুক্ত। এটি অবস্থানের দিক থেকে তিব্বত পার্বত্যভূমির কাছ ঘেষা। মুস্তাঙ্গ শব্দটি এসেছে তিব্বত থেকে। এর অর্থ উর্বর সমতল। বিশ্বের সবচে গভীর গিরিখাত যা ধৌলাগিরি এবং অন্নপূর্ণার মাঝখানে অবস্থিত তা এই পার্বত্য় এলাকার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। নেপালে বিশ্বের সেরা ১৪টি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ রয়েছে। আর এই অঞ্চলে বিমান দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে। এর কারণ এর আবহাওয়া এবং খামখেয়ালি বৃষ্টি ও তুষারপাত। আর অবশ্যই ভয়ঙ্কর এক পুরো পার্বত্য এলাকার উপর দিয়ে বিমান নিয়ে যাওয়ার সময় বরফের উপরে পড়া রোদের ঝলক পাইলটেদর চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। ফলে দুর্ঘটনা যে কোনও মুহূর্তে এখানে ঘটতে পারে।