আজ থেকে দু হাজার বছর আগের একটি মৃত্যু রহস্য এখনো ভাবিয়ে চলেছে গবেষকদের। ইতিহাস বিখ্যাত রানী, বিশ্বসেরা সুন্দরী সপ্তম ক্লিওপেট্রা ফিলোপেটর মৃত্যু। এ পর্যন্ত কোনও তথ্য-প্রমাণই যথেষ্ট নয়। ক্লিওপেট্রা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি কথা লিখেছেন রোমান লেখক প্লুটার্ক। তার কথার ভিত্তিতেই কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকর ক্লিওপেট্রাকে এঁকেছেন, তার সম্পর্কে লিখেছেন। ক্লিওপেট্রার সঙ্গে জুলিয়াস সিজার এবং মার্ক অ্যান্টনির প্রেমের গল্প নিয়ে একাধিক সিনেমাও তৈরি হয়েছে।
আসলে ক্লিওপেট্রার ৩৯ বছরের জীবন যতটা নাটকীয় ছিল তার থেকে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে তার মৃত্যু। যা আজও রহস্যময়। ক্লিওপেট্রার জীবদ্দশায় কেউ তাঁর ক্তহা লেখেনি। হতে পারে প্লুটার্ক যা লিখেছেন তা সে সময়ের জনশ্রুতি থেকে রানীকে স্মরণীয় করে রাখতেই। বাস্তবে হয়ত চরিত্রটি প্রচলিত এই কাল্পনিক চরিত্র, সৌন্দর্য এবং মৃত্যু রহস্যের একেবারেই বিপরীতে ছিল।
এই সময়ের অনেক লেখক ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্য, জীবনযাপন, শাসনকার্য, প্রেম এবং মৃত্যু নিয়ে প্লুটার্কের তথ্যগুলোকে শুধুমাত্র কল্পনা হিসেবে দেখেন। কিন্তু ক্লিওপেট্রা নামে যে মিশরে একজন প্রভাবশালী রানী ছিলেন তা কেউই অস্বীকার করেন না।
বছর দশ আগে ক্লিওপেট্রার সম্পূর্ণ জীবনী লিখেছেন মার্কিন লেখিকা স্ট্যাসি মেডেলিন শিফ। তাঁর বইতে অক্টিয়াম যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মার্ক অ্যান্টনি এবং ক্লিওপেট্রা দলবল নিয়ে আলেকজান্দ্রিয়ায় ফেরেন। কারো মতে, ক্লিওপেট্রা এবং মার্ক অ্যান্টনি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার কারো মতে, মার্ক অ্যান্টনি রোমান সাম্রাজ্যে নিজের ক্ষমতা হারানোয় ক্লিওপেট্রা তাকে হত্যা করার জন্য নাটক সাজাতে গিয়ে এসব করিয়েছেন।
রানী ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর কারণ হিসেবে আত্মহত্যাকে উল্লেখ করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে এমনটা প্রচলিত রয়েছে। অনেক ইতিহাসবিদের মতে, ছোটখাট ভাইপার কিংবা মিশরীয় গোখরার ছোবলে তার মৃত্যু হয়েছিল। আর এর সপক্ষে যুক্তি হচ্ছে, ভাইপারগুলো মিশরে রাজকীয়তার ধারক হিসেবে বিবেচিত হত। ফলে প্রাসাদে এগুলো সংরক্ষণের সম্ভাবনা ছিল প্রবল। অন্যদিকে, ক্লিওপেট্রা যে দেবীর পুজো করতেন, মিশরীয় গোখরা ছিল তার প্রিয় সাপ।
কিন্তু এই মতবাদের বিপক্ষেও কথা বলছেন আধুনিক মিশরীয় গবেষকরা। তাদের মতে, সাপের কামড়ে রানীর মৃত্যু হয়েছে এটি সহজেই প্রমাণ করার মতো নয়। গোখরা সাপ কমপক্ষে ৫ ফুট লম্বা হয় এবং বড়সড় আকৃতির হলে ৮ ফুটের কম কখনোই হয় না। যারা সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে মত দিয়েছেন তারা আরও বলেছেন সাপটি রানীর কক্ষে একটি খাবারের ঝুঁড়িতে লুকিয়ে ছিল। আবার এটাও উল্লেখ করা হয়েছিল যে খাবারের ঝুঁড়িতে ফলমূল সংরক্ষণ করা হতো। কারো কারো মতে ঝুঁড়িতে শূকরের মাংস ছিল। আর এই বাক্সটি একটি গোখরা সাপ লুকিয়ে থাকার জন্য কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। এছাড়াও ছোট আকৃতির গোখরা সাপের কামড়ে সরাসরি মৃত্যু হয় না। বরঞ্চ এর মাঝে চিকিৎসকদের ডাকার সময়-সুযোগও পাওয়া যায়।
মিশরের ইতিহাসবিদরা মনে করেন, এটি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয় যে, একটি সাপ একসঙ্গে ক্লিওপেট্রা এবং তার দুই দাসীকে হত্যা করেছে। ক্লিওপেট্রা বিষাক্ত কিছু গ্রহণ করে আত্মহত্যা করেছেন এমনটা মানতে রাজি নন লেখিকা স্ট্যাসি মেডেলিন। অন্যদিকে, প্রাচীন লেখক স্ট্রাবো জীবদ্দশায় রানীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত মদ এবং ভেষজ মিশ্রণের সঙ্গে বিষাক্ত ঔষধ মিশিয়ে পান পান করাকে দায়ী করেন।
যা-ই হোক, সত্য আজও অজানাই রয়ে গেছে। কারণ নিজের চোখে ক্লিওপেট্রার মৃত্যু দেখেছেন এমন কারো বিবৃতি আজ অবধি খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর সন্দেহের তীর বরাবরই অক্টাভিয়ানের দিকেই তাক করেন ইতিহাসবিদরা।