করোনা ভাইরাসের মারণ তথ্য সামনে আনায় চাইতে হয় ক্ষমা, লি-এর কাহিনি প্রেরণা দেবে

  • করোনাভাইরাস তখনও মহামারির আকার ধারণ করেনি
  • কিন্তু তিনি তখনই সতর্ক করে দিয়েছিলেন
  • গুজব ছড়ানোর অভিযোগে হুমকি দেওয়া হয়
  • পরে তিনিই হিরো হন, আজ তিনি প্রয়াত 

করোনাভাইরাস তখনও মহামারির আকার ধারণ করেনি। কিন্তু তিনি তখনই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সার্সের মতো মহামারি আকার ধারণ করতে পারে এই নতুন ভাইরাস। তার সে কথায় পাত্তা দেয়নি তাঁর দেশ। পাল্টা তাকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে হুমকি দেওয়া হয়। এক মাস পরে সেই চিকিৎসকই সবার কাছে হিরো হয়ে ওঠেন।

আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া চিকিৎসক লি নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে অবশেষে বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু ঘটেছে। লি উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে কাজ করার সময় তিনি সাতজনের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখতে পান। প্রথমে ভেবেছিলেন, এটি সার্স ভাইরাস। পরে তিনি ফেলো চিকিৎসকদের করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক করেন। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিরোধমূলক কাপড় পরার পরামর্শ দেন।

Latest Videos

কিন্তু লি-র বিরুদ্ধে মিথ্যা মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, এ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের কথা বলে তিনি সমাজের ক্ষতি করছেন। লিকে হাতে লেখা এক চিঠিতে পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর কর্মকর্তারা হুমকি দেয়। এমনকি পুলিশও  গুজব ছড়ানোর কারণে চিকিৎসক লিকে সাবধান করে দেয়।  

এরপরও জানুয়ারি মাসে চিকিৎসক লি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা জানিয়ে একটি চিঠি দেন। তখন অবশ্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে ক্ষমা চায়। পুলিশ, প্রশাসন, পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর হুমকির মাত্র এক সপ্তাহ পরে চিকিৎসক লি গ্লুকোমায় আক্রান্ত এক মহিলার চিকিৎসা করছিলেন। তিনি জানতেন না যে ওই মহিলা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।

জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে চিনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে লি-র সঙ্গে কী কী ঘটেছে তার ব্যাখ্যা দেন। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক লির সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তার জন্য ক্ষমা চায়। কিন্তু সেই ক্ষমা চাওয়া ও নিজেদের ভুল বুঝতে পারাটা অনেক দেরিতে হয়। ততক্ষণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষ মারা গিয়েছেন।  মৃত্যুর প্রহর গুনছে কয়েক’শ মানুষ।  

সামাজিক মাধ্যমে জানা যায় লি নিজেই করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। বেঁচে থাকার সময় লি জানিয়েছিলেন, কীভাবে ১০ জানুয়ারি তার কাশি শুরু হয়। পরদিন তার জ্বর হয়। তার দু’দিন পর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তিনি আরও জানিয়েছিলেন যে, তাঁর বাবা-মাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং তাদেরও হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে।

লি-র পোস্টের ১০ দিন পর করোনাভাইরাসের বিষয়ে জরুরি অবস্থা জারি করে চিন। ৩০ জানুয়ারি লি পোস্ট করে জানিয়েছিলেন, নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্টের ফলাফল এসেছে এবং তা পজিটিভ। পোস্টে একটি কুকুরের ইমোজি যোগ করে দিয়েছিলেন তিনি। যার চোখ দুটো ধূসর এবং জিভ বেরিয়ে এসেছে।

 

মানুষের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে তার সেই পোস্ট। অনেকেই লিখেছেন, ‘লি ওয়েনলিয়াং একজন হিরো’। কেউ লিখেছেন, ‘লির সঙ্গে যা করা হয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে আর এমন ভুল কেউ করবেন না’।  কেউ লিখেছেন, ‘পৃথিবীর সব মানুষের জন্য কয়েকটা লি ওয়েনলিয়াং দরকার’।

চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ৬০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত মোট ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ৩২টির বেশি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।  চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডক্টর লি এখন হাসপাতালে চিরনিদ্রায়। কিন্তু চিনের সেই হিরোর গল্প শুনছে সারা পৃথিবীর মানুষ।  

Share this article
click me!

Latest Videos

‘অনেকদিন পর কেষ্টদা ফিরেছে তাই একটু বিশৃঙ্খলা হচ্ছে’ অদ্ভুত ব্যাখ্যা Satabdi-র! | Satabdi Roy News
‘সরকারকে প্রশ্ন করলেই সরকার উলঙ্গ হয়ে যাবে!’ বক্তব্য রাখতে না দেওয়ায় বিস্ফোরক Sajal Ghosh
‘এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে TMC টাকা তুলছে না’ Mamata-কে চরম তুলোধোনা Suvendu-র
Mamata Banerjee Live: নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা, দেখুন সরাসরি
Nadia-এ ডাম্পিং গ্রউন্ড ঘিরে বিতর্ক! থানায় আটক বিজেপি বিধায়ক! দেখুন | Nadia News Today