
গাজা শান্তি সম্মেলন ২০২৫: ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে গত ২ বছর ধরে চলা যুদ্ধের এখন থামার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সোমবার ১৩ অক্টোবর মিশরের শার্ম-আল-শেখে অনুষ্ঠিত গাজা শান্তি সম্মেলনে হামাস ও ইজরায়েল ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। এই সময় আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়াও মিশর, কাতার, তুরস্ক, পাকিস্তান সহ প্রায় ২০টি দেশের নেতাদের উপস্থিতিতে দুই পক্ষই শান্তির পথে হাঁটার ওপর জোর দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই চুক্তির পর মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরে আসবে।
গাজা শান্তি সম্মেলনের ঠিক আগে ইজরায়েল-হামাস একে অপরের পণবন্দীদের মুক্তি দিয়েছে। হামাস যেখানে ইজরায়েলের ২০ জন পণবন্দীকে ছেড়েছে, সেখানে ইজরায়েলও ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। বন্দী বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টা পরেই গাজা শান্তি সম্মেলনে ইজরায়েল-হামাস ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে।
গাজা শান্তি সম্মেলন ২০২৫-এর জন্য সারা বিশ্বের নেতারা মিশরে একত্রিত হয়েছিলেন। এই সময় চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। পরে আমেরিকা ছাড়াও মিশর, তুরস্ক এবং কাতার গ্যারান্টার হিসেবে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে। এতে গাজায় যুদ্ধবিরতির সমর্থন জানিয়ে সমগ্র অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির আবেদন করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে এই চুক্তির ফলে গত দুই বছর ধরে চলা ভয়াবহ ট্র্যাজেডির অবসান ঘটবে।
গাজায় গত দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে ৬৭,০০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সেই হিসেবে, ৭৩৭ দিনে ইজরায়েল প্রতিদিন ৯১ জনকে হত্যা করেছে। এছাড়া ১.৭০ লক্ষেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ২০,০০০-এর বেশি শিশু রয়েছে।
গত ২ বছরে ইজরায়েল গাজায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তার ভয়াবহতা এই তথ্য থেকেই অনুমান করা যায় যে ২৩ লক্ষ জনসংখ্যার এই শহরের ৮০% বিল্ডিং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার ৮৭% বাড়ি এবং ৬৮% রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে গেছে। ইজরায়েলি সেনার বিমান হামলায় উঁচু উঁচু বিল্ডিংগুলো এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিল্ডিং ভেঙে পড়ায় শহরে ৫.৪০ কোটি টন আবর্জনা জমেছে, যা সরাতে ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।
গত দুই বছরে গাজায় ইজরায়েলি বোমাবর্ষণে সেখানকার ৯০ শতাংশ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজাকে আবার একটি শহর হিসেবে গড়ে তুলতে কয়েক দশক সময় লেগে যাবে। গাজায় ১৯ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন, যাদের এখন নিজেদের কোনো ঠিকানা নেই। এছাড়া ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ অনাহারে ভুগছেন। সব মিলিয়ে, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পরেই গাজায় শান্তি এসেছে।