
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর তৃতীয় বার ক্ষমতা লাভের পর প্রথমবার গেলেন শ্রীলঙ্কা সফরে। শনিবার সেখানে পৌঁছালে তাঁকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে, দুই দেশ প্রতিরক্ষা, শক্তি, ডিজিটাল পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য এবং বাণিজ্য খাতে সাতটি সমঝোতা স্মারক (MoUs) স্বাক্ষর করেছে।
দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার করতে এবং উভয় দেশের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান, 'মিত্র বিভূষণ' প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সফর গত বছর শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমার দিশানায়েকে দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর প্রথম সফর। ২০২৪ সালে দিশানায়েকে তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনও বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের এটাই প্রথম সফর। মোদীর এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন তামিলনাড়ু কাচ্চাথিভু শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি প্রস্তাব পাশ করেছে। ২৮৫ একরের এই দ্বীপের চারপাশে মাছ ধরার অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের কারণে, এটি রাজ্যের জেলেদের জন্য একটি আবেগপূর্ণ বিষয়।
শ্রীলঙ্কার জনগণের সহনশীলতার প্রশংসা করে, প্রধানমন্ত্রী মোদী সেদেশের রাষ্ট্রপতি দিশানায়েকে পাশে রেখে বলেন, "আমি গর্বিত যে শ্রীলঙ্কা পুনরুদ্ধারের পথে ফিরে এসেছে...কোভিড হোক, সন্ত্রাসী হামলা হোক বা সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট হোক, আমরা সবসময় শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছি।"
তামিলনাড়ুর বহু মৎস্যজীবীর জন্য একটি বড় ঘোষণা ও স্বস্তির বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি জানান যে, তিনি তাঁদের উদ্বেগ উত্থাপন করেছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে শ্রীলঙ্কা যেকোনও ভারতীয় মৎস্যজীবীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে এবং তাঁদের নৌকা দ্রুত ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে।
ভারতের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ডিজিটাল কাজকর্ম ও বৃহৎ জনসংখ্যার মধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়িত ডিজিটাল সমাধানগুলি ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার ডিজিটাল অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
প্রধানমন্ত্রী তার এই শ্রীলঙ্কা এই সফরে ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কাকে পুনর্গঠনে সাহায্য করার জন্য ভারতের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। শ্রীলঙ্কাকে সংকট থেকে উদ্ধার করার জন্য ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার পরে, ভারত ঋণ পুনর্গঠন এবং ঋণের সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে সহায়তা অব্যাহত রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, "গত ৬ মাসে, আমরা ১০০ মিলিয়নেরও বেশি ঋণের টাকা অনুদানে রূপান্তরিত করেছি। আমাদের দ্বিপাক্ষিক ঋণ পুনর্গঠন চুক্তি শ্রীলঙ্কার জনগণের তাৎক্ষণিক উপকারে আসবে। আজ, আমরা সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছি। এটি প্রমাণ করে যে, আজও ভারত শ্রীলঙ্কার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উন্নয়নের জন্য প্রায় ২.৪ বিলিয়ন শ্রীলঙ্কান রুপি প্রদান করা হবে।"
প্রধানমন্ত্রী মোদী ত্রিনকোমালিতে ১২০ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন এবং শ্রীলঙ্কার সিলন ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগের চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, যা দ্বীপ রাষ্ট্রটির ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানানো পর, প্রধানমন্ত্রী মোদী শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একটি রুদ্ধদ্বার আলোচনা বসেন। যেখানে দুই দেশের প্রধানরা স্বাক্ষরিত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলি ঘোষণা করবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী দিশানায়েকের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ভার্চুয়াল প্রকল্পের উদ্বোধনও করবেন।