তুরস্ক এবং সিরিয়ার মতো দেশে ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বলাও প্রায় ‘নিষিদ্ধ’। ফলে, পুরুষ সাহায্যকারীদের কাছে প্যাড চাওয়ার কথা একেবারেই বলতে পারেন না বিপর্যস্ত মহিলারা।
সঙ্কটের সময়েও নারীর ঋতুস্রাব বন্ধ হয় না, কারণ ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত সিরিয়া এবং তুরস্কের নারীদের জন্য দেশের প্রশাসনকে সতর্ক করল বিভিন্ন জরুরি পরিষেবাদায়ী সংস্থা। ঋতুমতী মেয়েরা শারীরিক সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল অনুসারে, ঋতুস্রাবের দারিদ্র্যে স্যানিটারি পণ্য এবং সেগুলি ব্যবহার করার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর জায়গার অভাব তৈরি হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিস্থিতিতে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলিতেই অভাব রয়েছে। যেমন, বিশুদ্ধ জল, থাকার জায়গা, উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এসময় দারিদ্র্যতা অনিবার্য।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি উত্তর সিরিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কে আঘাত হানে দুটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। লক্ষ লক্ষ অসহায় মানুষ কনকনে ঠাণ্ডায় গৃহহীন হয়ে পড়ে রয়েছেন। এই কম্পনের পর বিশ্বজুড়ে অনেকগুলি দেশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য করার জন্য কম্বল, খাবার, তাঁবু এবং ওষুধে ভরা ত্রাণ প্যাকেজ পাঠাতে শুরু করেছে।
এমনই দুটি সংস্থার মতে, মেয়েদের ঋতুস্রাবের পণ্য না পাওয়ার সমস্যাটি মিটছে না। এর একটা প্রধান কারণ হল, লিঙ্গ সমস্যার দিকে নজর না দেওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণভাবে ঋতুস্রাবকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, নারীদের চাহিদাটাকে ব্যক্তিগত সমস্যা ধরে নিয়ে মোকাবিলা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
নারীর স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে তুরস্ক এবং সিরিয়া, কারণ এই দেশগুলিতে নারীর ঋতুস্রাবের বিষয়টি নিয়ে কথোপকথন ‘নিষিদ্ধ’ বলে বিবেচিত রয়েছে। তুরস্কের সংস্থা 'উই নিড টু টক'-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বাহার আলদানমাজের মতে, বিষয়টি একেবারে নীরবতা নিয়ে দেখা হয়ে থাকে। তুরস্কে ঋতুস্রাবকে প্রায় ‘কলঙ্ক’ বলে মনে করা হয়। সেরকম একটি দেশে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়, কারণ সেখানে পণ্য, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ জল, শৌচালয় বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, কিছুই পাওয়া যায় না।
তার ওপর থাকে আরও একটি বড় সমস্যা, সেটি হল, গ্রাউন্ডে কাজ করা সাহায্যের কর্মীরা, যাঁরা সবসময় অনুদানের তালিকার তদারকি করে থাকেন, তাঁরা অধিকাংশই পুরুষ সদস্য হন। ফলে, ‘নিষিদ্ধ’ বিষয়টি নিয়ে অসুবিধায় থাকা মহিলা এবং ছোট ছোট মেয়েরা নিজেদের চাহিদা প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করেন। “আমরা দেখেছি যে, বেশিরভাগ পুরুষই অনুদানের জন্য প্রয়োজনীয় তালিকা সংগ্রহ করেন। তাঁরা পীড়িত মানুষদের জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনার কী দরকার?' কিন্তু মহিলারা নিজেদের চাহিদা জানাতে বিব্রত বোধ করেন যে, তাঁদের প্যাড দরকার। তাই, স্বাভাবিকভাবেই পুরুষরা এটিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন না। অর্থাৎ, স্যানিটারি প্যাড তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় না বলেই ত্রাণের সঙ্গে এটি পাঠানো হয় না।”
২০২০ সালে যখন তুরস্কের ইজমিরে আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল, তখন মহিলারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, ঋতুস্রাবের সমস্যা জরুরী পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতিক্রিয়াকে কতটা প্রভাবিত করে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির মতে, ঋতুস্রাবের সময় যেহেতু মহিলারা পরিষ্কার শৌচাগার পান না, ফলে সেটা তাঁদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে রয়েছে সংক্রমণ, অতিরিক্ত চাপের কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড, অত্যধিক রক্তপাত এবং তীব্র যন্ত্রণা।
“মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অংশ, আট বছর থেকে প্রায় ৫০ বছর বয়সি মেয়ে এবং মহিলারা এই মাসিক চক্রের মধ্য দিয়ে যান। নিজেদের পিরিয়ডের সাথে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক মাসে মোকাবিলা করতে হয়, যা সংকটের সময়ে বেঁচে থাকাকা কঠিন করে তোলে।”
আরও পড়ুন-
এক বছর পূর্তির আগেও যুদ্ধে বড়সড় হামলার ছক রাশিয়ার, ২৪ ঘণ্টা ধরে ইউক্রেনে চলল ধ্বংসলীলা
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বঙ্গ সফরে দেওয়া হচ্ছে জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা, ‘অহেতুক খরচা’ বলে কটাক্ষ বিরোধীদের
আজ বাংলায় আসছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী, খেতমজুর সংগঠনের সমাবেশে যোগ দেবেন পিনারাই বিজয়ন