লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফা শেষ হয়েছে। আর দুই দফা মিটলেই নির্ধারণ হবে রাজনৈতিক দলগুলির ভাগ্য়। এই চাপান উতরের মধ্য়েই রাজনীতি-শিল্প-ধর্ম নিয়ে ভাচু্র্য়াল যুদ্ধ শুরু হল দুই শিল্পীর মধ্য়ে। এক জন আসানসোলের বিধায়ক তথা সঙ্গীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। অন্য়জন হলেন কবীর সুমন। তাঁর সোশ্য়াল মিডিয়া পোস্ট যাঁরা নিয়মিত অনুসরণ করেন, তাঁরা কবীর সুমনের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহল।
বুধবার সকালে সুমন তাঁর ফেসবুকে বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে তাঁর লম্বা হোয়াটসঅ্য়াপ কথোপকথন শেয়ার করেন। সুমন প্রথম ফেসবুক পোস্টটিতে জানান বিজেপি নেতা বাবুল তাঁর সৃজনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি পোস্টটিতে লেখেন, "বিশেষ জরুরি! আমার একটি গান শুনে শ্রী বাবুল সুপ্রিয়, মাননীয় বিজেপি সাংসদ ও গায়ক, আমায় একের পর এক হোয়াটসঅ্য়াপ মেসেজ করতে থাকেন। আমিও জবাব দিতে থাকি। সকলের জানা দরকার। তিনি বলেছেন তিনি শিল্পী। তাই আমি তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি মঞ্চে আমার সঙ্গে রাজনৈতিক গানের ডুয়েলে নামতে। তিনি চান বিতর্ক। বিতর্ক হলেই শুধু কথার ঢেউ ওঠে, তুবড়ি ছোটে, মেজাজ চড়ে যায়। বরং গান হোক। তিনি আমার সৃজনশীলতা ও কবিত্বশক্তি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। তাহলে তিনি আসুন মঞ্চে, তাঁর ক্ষমতা দেখান।আশা করি তিনি চ্যালেঞ্জটা নেবেন।"
এর সঙ্গে বাবুলের সঙ্গে পুরো কথোপকথনটি শেয়ার করেন সুমন। সেই কথোপকথনের শুরুতেই বাবুল বলেন, "কবি(র) সুমনদাদা, যে হিন্দু ভাইয়েরা দিনের পর দিন অত্যাচারিত হচ্ছে আমাদের বাংলায়, আপনার মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রীর 'অনুপ্রেরণায়', তাদের নিয়ে কখনও কোনো কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে না? না কি 'হঠাৎ' ধর্মান্তরিত হয়ে 'কবির' কবি তার সু-মন টি হারিয়ে ফেলেছে !! 'খুব জানতে ইচ্ছে করে - তুমি কি সেই আগে মতোই আছো?" প্রনাম নেবেন।"
এর পরেই পরেই টানা একঘণ্টা ধরে দুই শিল্পীর মধ্য়ে চলতে থাকে হোয়াটসঅ্য়াপ-কলহ। শেষে কবীর সুমন প্রস্তাব রাখেন, শব্দে বা কথায় না, তর্ক হোক রাজনৈতিক গানে। রীতিমতো তিনি চ্য়ালেঞ্জ ছুড়ে দেন বাবুলের দিকে। কথোপকথনটি পড়েই বোঝা যায়, ব্যঙ্গ করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়াটা ভাল ভাবে নেননি বিজেপি বিধায়ক। সুমন একজায়গায় বলেন, "আপনি আপনার অর্কেস্ট্রা নিয়ে আসুন। আমি একাই থাকব।" এর পরেই চাপান উতর আরও বাড়তে পারে।
কিছুক্ষণের মধ্য়েই কবীর সুমন আর একটি পোস্ট করেন ফেসবুকে। তিনি এই পোস্টে লেখেন, "বড় আশা করেছিলাম মাননীয় বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় আমার চ্যালেঞ্জটা মেনে নেবেন। নিলেন না। আমি ধার্মিক লোক নই। বিজেপির মত হিন্দুধর্মসর্বস্ব পার্টির কোনো সদস্য ও সাংসদ যখন আমাকে আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলে, ভারি মধুর লাগে। হ্যাঁ, বিজেপির বিপিরীতে আমি এই রাজ্যে মমতাপন্থী। যে কেউ, দুনিয়ার যে কেউ আসুন আমার বিরুদ্ধে গান বাঁধুন, গান একই মঞ্চে। আমিও গাইব। কিন্তু মান্যবর বাবুল সুপ্রিয় রাজি হলেন না। তাহলে? তাঁর মঙ্গল হোক। তিনি জীবনে সুখী ও সফল হোন।আর কবীর সুমন কতটা কবি, মমতার কারণে কবীর সুমনের সঙ্গীতের কতটা ক্ষতি হয়েছে এসব বলার ইচ্ছে মান্যবরের হলেই তিনি যেন স্মরণে আনেন - তিনি বলেন তিনি সংগীতশিল্পী কিন্তু সংগীতের চ্যালেঞ্জটা তিনি নিতে পারলেন না। জয় সেকুলার ভারত। নিপাত যাক বিজেপি।"
এই পোস্টেই তিনি আবারও বাবুলের সঙ্গে হওয়া কথা ফেসবুকে তুলে ধরেন এবং ফের রাজনৈতিক গানের লডা়ইয়ের প্রস্তাব দেন। এই কথোপকথনের শেষে সুমন বলেন, "যাঃ! কী চমৎকার হচ্ছিল। আসুন, এমনিই গান গাই দুজনে।" এর উত্তরে বাবুল বলেন, "বেশ। করা যাক নিজেদের মতো করে। প্রণাম নেবেন।"
কিন্তু এখানেই এই ভার্চুয়াল লড়াই থামেনি। আবার একটি পোস্ট করে সুমন লেখেন, "মান্যবর বাবুল সুপ্রিয় চালিয়ে যাচ্ছেন, সঙ্গে আমিও। বিতর্ক মানে তো কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যে চেঁচামেচি, মেজাজ গরম, গালাগাল। তার চেয়ে গানের লড়াই ভাল নয়কি। উনি কত বড় শিল্পী, যাকে ইচ্ছে সঙ্গে আনতে পারেন। আমি একা থাকব। আপনারা সবাই মান্যবর, গায়কপ্রবর বাবুলসুপ্রিয়কে বোঝান! সকলে সহৃদয় থাকুন। এই কথার লেনদেন ছড়িয়ে দিন।"
এইঅ পোস্টের সঙ্গে আবার একটি ব্যক্তিগত কথোপকথন ফেসবুকে শেয়ার করেন কবীর সুমন। তবে এই কথোপকথন পড়লে বোঝা যায়, চটে গিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। এক জায়গায় তিনি বলেন, "আপনি কি ফেসবুকে ট্রল পোশেন! যদিও আমার কিছু আসে যায় না। তবুও হোয়াটসঅ্য়াপের ব্য়ক্তিগত কথোপকথন এভাবে ফেসবুকে তুলে দেওয়াটা অমার্জিত নয় কি!"
সুমনের এই পোস্ট ঘিরে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে বিতকের্র বন্যা। বিভিন্ন রকমের কমেন্টও পড়েছে সুমনের করা পোস্টগুলিতে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পরে কবীর সুমন একটি পোস্ট করেছিলেন। সেই ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, "শ্রী বাবুল সুপ্রিয় যদি একটি মন্ত্রীত্ব পান বেশ হয়। জানি অনেকেই আমায় নতুন করে গাল দেবেন এই কথাটির জন্য়। আমি বিজেপি দলকে পছন্দ করি না। কিন্তু এই যুবকটি জেতায় আনন্দ পেয়েছিলাম এবং তিনি মন্ত্রী হলে আবার আনন্দ পাব।"
এই পোস্টটির কথাও বেশ কয়েকজন নেটিজেন বাবুলের নজরে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে এই ভার্চুয়াল যুদ্ধ নিয়ে যে আরও জলঘোলা হবে তা আশা করাই যায়। ভোটের আবহে দুই শিল্পীর এই বাকযুদ্ধের জল কতদূর গড়ায় এখন সেটাই দেখার।