পুলিশের খাতায় ফেরার, সভা আলো করে জেলাশাসকের পাশেই বসে সন্দেশখালির বাবু মাস্টার

  • এদিন দেখা গেল খাকি ইউনিফর্ম পরা পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে
  • শুধু কি তাই, স্বয়ং জেলা শাসকের সঙ্গে এক মঞ্চে বসে সরকারি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত সম্বর্ধিতও হলেন তিনি
  • প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

arka deb | Published : Jun 24, 2019 12:25 PM IST / Updated: Jun 24 2019, 09:05 PM IST

উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার জেলা পরিষদে ৩৩তম প্রতিষ্ঠাতা দিবস উদযাপন হল বারাসাতের শেঠ পুকুর সংলগ্ন রবীন্দ্র ভবনে। মঞ্চে জেলা শাসকের ও মন্ত্রী আমলাদের পাশে বসে এবং সম্বর্ধিত হলেন হাসনাবাদ- সন্দেশখালির কুখ্যাত দুষ্কৃতী তথা জেলা পরিষদের ওয়াকওভার পেয়ে জেতা ফিরোজ কামাল গাজী ওরফে বাবু মাষ্টার।

সন্দেশখালীর ন্যাজাট থানার হাটগাছি গ্রামে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় এফআইআর-এ দুই দুষ্কৃতীর নাম আছে। যাদের বসিরহাটের পুলিশ এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে সাহস দেখায়নি।  আদালতের কাছে পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাবু মাষ্টার ও শেখ শাজাহান ফেরার। 

অথচ এদিন দেখা গেল খাকি ইউনিফর্ম পরা পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। শুধু কি তাই, স্বয়ং জেলা শাসকের সঙ্গে এক মঞ্চে বসে সরকারি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত সম্বর্ধিতও হলেন তিনি। খুব স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক মহলে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

বলাই বাহুল্য, বাম আমলেও তার বিরুদ্ধে বহু তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ও সমর্থকদের খুন জখম লুঠপাট ধর্ষণ তোলাবাজির অভিযোগ ছিল। বছর কয়েক আগেও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে মঞ্চে দাঁড়িয়েও বহু বার বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জ ও সন্দেশখালির ত্রাস শেখ শাজাহান ও বাবু মাষ্টারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গলা ফাটাতেন। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত সেই দুই দুষ্কৃতীরা সিপিআইএমের থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করার ফলে রাতারাতি কোন যাদুকাঠির বলে সমাজসেবী হয়ে গেলেন তা এই জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মন্ত্রীরাই জানেন।

অনেকেরই স্মরণে থাকবে, বেশ কয়েক বছর আগে এক সময় ন্যাজাট এ এক প্রশাসনিক জনসভায় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিআইএমের এই দুই কীর্তিমান দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে নাম করেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন । আবার সন্দেশখালনর ন্যাজাট থানার হাটগাছি গ্রামে রাজনৈতিক সংঘর্ষের পরে স্বয়ং  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দুই দুষ্কৃতীকে সমাজসেবক ও ভাল কর্মী সংগঠক বলে আখ্যা দেন। বসিরহাটের  সাধারণ পুরনো তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ও সমর্থকদের অভিযোগ বাবু মাষ্টার ও শেখ শাজাহানের মত খুনে দুষ্কৃতীরা যদি রাজনৈতিক দল বদল করলে সমাজসেবক হয়ে যায় আর তাতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সিলমোহর পরে তাহলে সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ও তলানিতে এসে ঠেকে। 

দুই মেদিনীপুরে দুই অত্যাচারী সিপিআইএমের নেতা লক্ষণ অধিকারী, সুশান্ত ঘোষদের তৃণমূল কংগ্রেসে অনুপ্রবেশ যদি শুভেন্দু অধিকারী রুখে দিতে পারেন, তাহলে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মন্ত্রীরা কেন আটকাতে পারল না সিপিআইএম-এর 'হার্মাদ'দের দলে অনুপ্রবেশের পথ। প্রশ্ন উঠছে, যে মেছো ভেরির আকাশ সমান অর্থকরী লাভের লালসা সিপিআইএমের চৌত্রিশ বছরের শাসনকে গ্রাস করেছে, সেই পথেই কি হাঁটছে বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। উত্তর মিলতে অপেক্ষা করতে হবে আরও দুই বছর। অর্থাৎ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত।

Share this article
click me!