মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য থেকে যোগ তৃণমূলে, আড়াই মাসের মধ্যেই 'ভোলবদল' বাবুল সুপ্রিয়র

গত আড়াই মাসে প্রতিদিনই খেলা ঘুরেছে। এক একটি পোস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন তিনি। অবশেষে যবনিকা পতন হল শনিবার। তৃণমূলে নাম লেখালেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়।

Asianet News Bangla | Published : Sep 18, 2021 2:48 PM IST / Updated: Oct 25 2021, 05:40 PM IST

নাটকীয় পটপরিবর্তন বলা যেতেই পারে। গোটা বিষয়টা বদলে গেল আড়াই মাসের মধ্যেই। চলতি বছরের জুলাই মাসের শুরুতেও তিনি ছিলেন মোদী মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আর আড়াই মাসের মধ্যেই সেখান থেকে বদলে ফেললেন নিজের রাজনৈতিক পরিচিতি। নাম লেখালেন এতদিনের যুযুধান শিবিরে। গত আড়াই মাসে প্রতিদিনই খেলা ঘুরেছে। এক একটি পোস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন তিনি। অবশেষে যবনিকা পতন হল শনিবার। তৃণমূলে নাম লেখালেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। 

একুশের বিধানসভা নির্বাচন 
টালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে লড়াই করেছিলেন বাবুল। প্রতিপক্ষ ছিল অরূপ বিশ্বাস। নির্বাচনী প্রচারে দুই বিশ্বাস ভাইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। ওই কেন্দ্রে জেতার বিষয়ও বেশ আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু, ফল প্রকাশের পরই হতাশ হন। তৃণমূল প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই একটু একটু করে বিজেপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ছিল। 

আরও পড়ুন- বলেছিলেন রাজনীতি 'ছাড়বেন', হঠাৎ তৃণমূলে কেন, কী বলছেন বাবুল সুপ্রিয়

৭ জুলাই, ২০২১ 
মোদীর মন্ত্রিসভায় রদবদল। বাদ পড়েন বাবুল সুপ্রিয়। তারপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। লিখেছিলেন, "ধোঁয়া উঠলে কোথাও তো আগুন লেগেছে। এই সময় কোনও বন্ধুর ফোন ধরতে পারছি না। আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তাই আমি প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কোনও দুর্নীতির কলঙ্ক ছাড়া আমি আমার কেন্দ্রের জন্য কাজ করতে পেরেছি। ২০১৯-এ তাঁর ফলস্বরূপ তিনগুণ ভোটে আমাকে জয়ী করে আসানসোল। আমরা সহকর্মীরা যাঁরা নতুন মন্ত্রিসভায় শপথ নেবেন তাঁদের আমার শুভেচ্ছা রইল। যদিও তাঁদের নাম আমি বলতে পারব না এখানে। আমার নিজের জন্য মনখারাপ হলেও ওঁদের জন্য খুশি।" কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলার ঘটনা যে মন থেকে মেনে নিতে পারেননি তা ওই পোস্টের মাধ্যমেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে কয়েকদিন একাধিক গান ও নিজের সাংসদ এলাকার কিছু বিষয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। 

১০ জুলাই, ২০২১
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন বাবুল। কয়েকদিন একাধিক পোস্ট করতে দেখা যায় তাঁকে। কোনওটিতে তিনি বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে আক্রমণ করেন তো কোনওটায় সত্যিকারের ‘প্রপার নাউন’ বুঝিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। আবার কোনওটায় মন্ত্রিত্বে থাকার সময় তিনি কী কী করেছেন, তার উল্লেখ করেছিলেন। তার সঙ্গে গান পোস্ট করতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। 

২৯ জুলাই, ২০২১
ফের একটা নতুন পোস্ট। তৈরি হয় নতুন জল্পনা। লেখেন, "আমি লিখতে ভালোবাসি আর আপনারাই আজ আমাকে, অর্থাৎ 'গায়ক বাবুল-'কে এটি লিখতে অনুপ্রাণিত করছেন।  বেশ কিছুদিন ধরেই আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে লক্ষ্য করছি যে আমার গান নিয়ে কোনো পোস্ট করলেই আপনারা অকুন্ঠ ভালোবাসা প্রকাশ করছেন। গুটি কয়েক নেগেটিভ কমেন্ট বাদ দিলে, বাকি সবই অত্যন্ত সুন্দর সব লেখা। কখনও আনমনে বসে যখন ভাবছি তখন কোথাও যেন মনে হচ্ছে কমেন্টগুলি 'দলমত নির্বিষেশে' গায়ক বাবুলকে লেখা। কিছু নাম চিনতে পারছি যারা হয়তো অন্য সময়ে আমার রাজনৈতিক পোস্টগুলোতে আমাকে তীব্র আক্রমণ করেন বা কটু ভাষা লেখেন কিন্তু এখন সম্পর্ণ অন্যরকম লাগছে সেই একই মানুষগুলোর লেখা। বলছেন রাজনীতি ছেড়ে দিতে !! কথাগুলো গভীরভাবে ভাবাচ্ছে আমাকে। রাজনীতিতে কিছু পাওয়ার আশায় বা 'পাওয়ার'-এর আশায় তো আসিনি। তাহলে ২০১৪-তে তখন অজানা-অচেনা 'আসানসোল'-এ লড়লাম কেন? জিতেছি - মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী করেছেন, ২০১৯-এ আবার জিতেছি, উনি আবার মন্ত্রী করেছেন। আজ মন্ত্রী নেই বলে ছেড়ে চলে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?? জীবনে অনেক হার দেখেছি কিন্তু মনটাকে কখনও হারতে দিইনি - হার মানতে শেখায়নি !! কঠিন সময়েও মুখে হাসি রেখেছি - হাল ছাড়িনি কখনও।" বাবুলের এই পোস্টের পর থেকেই তাঁর রাজনীতি ছাড়ার জল্পনা শুরু হয়েছিল। 

আরও পড়ুন- 'বাবুলের তৃণমূল যোগ-অর্পিতার ইস্তফা', তৃণমূলের ত্রিকোণমিতি মেলালেন অনুপম হাজরা

৩০ জুলাই, ২০২১
তাঁর এই পোস্ট বিজেপি ছাড়ার জল্পনাকে উসকে দিয়েছিল। লিখেছিলেন, "সবাইকে খুশি করার রাজনীতি তো করিনি। সম্ভব নয়, চেষ্টাও করিনি। তাই কিছু মানুষ নিশ্চয়ই আছেন যাঁদের সঙ্গে হয়তো ভালো ব্যবহার করতে পারিনি, ভালো হতে পারিনি বা বকাবকি করেছি, রাগ চেঁচামেচি করেছি, তাঁরাও লিখেছে - আসানসোল থেকে কয়েকজন চেনা মুখও লিখেছে। বুঝেছি তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আমার রাগ/বকা বা কোনো ভুল 'মনে'করে' মনে রেখেছে। কিন্তু তাদেরই সঙ্গে ঘরে বসে 'চা-শিঙাড়া-মুড়ির' আড্ডা মেরেছি বা কাদা মাঠে ফুটবলও খেলেছি সেটা মনে রাখেনি। সেটাও গ্রহণ করলাম - কোনও অনুযোগ বা অভিযোগ নেই। লকড প্রোফাইল থেকে কিছু মানুষ লিখছেন - নেগেটিভ, অসত্য সব অভিযোগ.. তাঁরা জানে না ফুটবল মাঠে (লড়াইতে) সাত বছরে দু-তিনবার লাল কার্ড দেখলে কেউ খারাপ প্লেয়ার হয়ে যায় না। তার নিন্দা হয়, সমালোচনা হয়, সাসপেন্ড করা হয় এবং ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, সেগুলো মেনে নেয়। আবার পরের ম্যাচগুলোতে খেলতে হয়। আজ আমার রাজনীতিতে সাত বছর হয়ে গেল - কিন্তু একদিন তো একদমই আনকোরা নতুন ছিলাম। কত ভুল করেছি। ঠিক আছে জীবনে এগিয়ে যেতে হবে।"

৩১ জুলাই, ২০২১ 
সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। একইসঙ্গে লোকসভার মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ারও ঘোষণা করেন। 'আলবিদা' লিখে একটি সুদীর্ঘ পোস্ট করেন তিনি। যদিও পরে জেপি নাড্ডা ও অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর নিজের সিদ্ধান্ত বদল করেন। সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা না দিলেও কোনও সুযোগ নেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। আর ওই পোস্টের মধ্যেই স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, "সারাজীবন একটাই দলকে সাপোর্ট করেছি - মোহনবাগান আর একটাই দল করেছি বিজেপি। এটাও স্পষ্ট করে দিতে চাই যে আমি অন্য কোনও রাজনৈতিক দল যোগ দিচ্ছি না।" 

আরও পড়ুন- তৃণমূলে যোগ দিলেন বাবুল সুপ্রিয়, অভিষেকের হাত ধরে আচমকা দলবদল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর

১ অগাস্ট, ২০২১
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে আক্রমণ করেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। লিখেছিলেন, "যে যার নিজের মতো করে দেখেছেন, বুঝেছেন, সমর্থন করেছেন, তীব্র বিরোধিতা করেছেন, প্রশ্ন করেছেন, কৈফিয়ত চেয়েছেন, কিছু মানুষ নিজেদের রুচি অনুযায়ী 'ভাষার' ব্যবহার করেছেন - সবটাই শিরধার্য। কিন্তু আপনাদের প্রশ্নের জবাব আমি কাজেও তো দিতে পারি। তার জন্য মন্ত্রী বা সাংসদ থাকার কি দরকার। একটু সময় দিন না আমাকে কটা গান বা শো-তেই-বা গাইব আমি এখন। হাতে অনেকটাই সময় থাকবে।" পাশাপাশি দিলীপ ঘোষের মতো মানুষের সঙ্গে রোজ ডিল করা কতটা কঠিন সেকথাও পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন। 

২ অগাস্ট, ২০২১  
ঘোষণা করেন, তিনি বিজেপি ছেড়ে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন না।

আরও পড়ুন- বাবা রামদেবের হাত ধরে রাজনীতিতে পা বাবুলের, BJP-TMC বর্ণময় রাজনীতির ৭ বছর

১৯ অগাস্ট, ২০২১
রাজ্যের নির্বাচন পরবর্তী হিংসা নিয়ে হাইকোর্টে ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। সেই রায়কে স্বাগত জানিয়েছিলেন তিনি। লিখেছিলেন, "কলকাতা হাইকোর্টকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এই দৃষ্টান্তমূলক রায়ের জন্য। যেভাবে বিজয় উৎসব পালনের নামে নৃশংসতার উল্লাস চালিয়েছিল শাসকদল তা অবর্ণনীয়। বিজেপি কর্মীদের সাথে যারা চূড়ান্ত অমানুষিকতা করেছিল সেই অপরাধীদের অতি-কঠোর শাস্তি হবে এই আশায় রইলাম।"

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১
ভবানীপুর উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালের নাম ঘোষণা করে বিজেপি। প্রিয়াঙ্কাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট করেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। 

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ 
নাটকের যবনিকা পতন। শনিবার আচমকা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন বাবুল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ঘাসফুল শিবিরে যোগদান দেন তিনি।

Singer turned BJP MP Babul Supriyo left politics bmm

Share this article
click me!