বারুইপুরে গণপিটুনি - চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুন কলকাতার তরুণ প্রোমোটার, জিজ্ঞাসাবাদ বান্ধবীকে

বারুইপুরে (Baruipur) চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে (Lynching) খুন কলকাতার প্রোমোটার। তদন্তে পুলিশ, জিজ্ঞাসাবাদ সঙ্গে থাকা বান্ধবীকে। 
 

Web Desk - ANB | Published : Feb 18, 2022 10:49 AM IST / Updated: Feb 18 2022, 04:27 PM IST

কলকাতার উপকন্ঠেই ভয়ঙ্কর ঘটনা। বারুইপুরে (Baruipur) চোর সন্দেহে ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে খুন করা হল কলকাতার (Kolkata) এক প্রোমোটারকে। এক বান্ধবীকে নিয়ে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই এলাকায় গিয়েছিলেন নেতাজিনগরের (Netajinagar) ওই প্রোমোটার, এমনটাই জানা গিয়েছে। তাঁর পরিবার গণপিটুনির ঘটনা মানতে পারছে না। তাঁদের সন্দেহ, এটা পরিকল্পিক হত্যা। পুলিশ এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে। তবে, শুক্রবার সকাল থেকেই ওই গ্রাম পুরোপুরি পুরুষশূন্য। 

জানা গিয়েছে নিহত ওই প্রোমোটারের নাম অভীক মুখোপাধ্যায়, বয়স ৩৫ বছর। তিনি দক্ষিণ কলকাতার নেতাজীনগরের বাসিন্দা। নেতাজিনগর, বাঘাযতীন এলাকায় তিনি প্রোমোটারি করতেন। প্রিয়ঙ্কা সরকার নামে এক বার ড্যান্সারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় দেড়টা-দুটো নাগাত তিনি প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে তিনি বারুইপুরের বেগমপুর (Begampur) এলাকার দুশো কলোনিতে গিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সেখানেই, তাঁকে ছাগল চোর সন্দেহে ধরে গ্রামবাসীরা। তারপর তাঁকে গ্রামের একটি ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে বেধড়ক পেটানো (Lynching) হয় বলে অভিযোগ। মারের চোটে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন অভীক। এরপর তাঁকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত হলে ঘোষণা করেন। 

শুক্রবার  সকাল থেকেই দুশো কলোনিতে বেশিরভাগ ঘরেই পুরুষরা পালিয়েছেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গত বছর দেড়েক ধরেই তাদের গ্রাম থেকে প্রায়ই গরু-ছাগল চুরি হয়ে যাচ্ছে। এরজন্য রাত জেগে গ্রামের পুরুষরা পাহারাও দেয়। বৃহস্পতিবার রাতে আচমকাই খুব ছাগল ডেকে উঠেছিল। অন্ধকারের মধ্যে একটি ছাগলের ঘরের পাশে দুজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের একজনের হাতে একটি ছাগল ছিল। এরপরই, 'ছাগল চোর' বলে রব ওঠে, গ্রামের অনেকেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। তারা ওই দুজনকে তাড়া করেন। ছাগলটি রেখে তারা পালাতে শুরু করে। কিন্তু, ধরা পড়ে যায় অভীক। প্রিয়ঙ্কা কীভাবে পালিয়ে গেল, তা কেউ জানে না। 

অভীকের বান্ধবী প্রিয়ঙ্কা সরকার

এদিকে, মৃত অভীকের পরিবার অবশ্য গণপিটুনির ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর মা বলেছেন, অভীকের পরণে দামী পোশাক ছিল। তাঁর মোটরবাইকটিও অত্যন্ত দামী। তাঁকে দেখে ছাগল চোর সন্দেহ হওয়ার কথাই নয়। এছাড়া, মৃত অভীকের গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্নও রয়েছে। তাঁর পরিবারের প্রশ্ন, সাধারণ গ্রামবাসীরা যদি তাঁকে মেরে থাকে, তাহলে তারা এইসব অস্ত্রশস্ত্র পেল কোথা থেকে? তাছাড়া অভীককে পিটিয়ে মারা হলেও, তাঁর সঙ্গে যাওয়া প্রিয়ঙ্কার গায়ে কোনও আঁচড়ও লাগল না কেন? তাঁদের সন্দেহ, এটা পরিকল্পিত হত্যা। এমনিতে অভীক মুখোপাধ্যায় কারোর সঙ্গে কোনও ঝামেলাতে জড়াতো না। তবে, প্রোমোটারির ব্যবসা সংক্রান্ত কোনও শত্রুতা থেকে তাকে হত্যা করা হতে পারে। 

এলাকায় তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

এদিন, দক্ষিণ ২৪ পরগণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। এর পিছনে যারা জড়িত, তাদের গ্রেফতার করা হবে। তারা জানিয়েছে, অভীক অত রাতে কেন ওই জায়গায় গিয়েছিল, সেই দিকটিও খতিয়ে দেখছে তারা। আপাতত তার বান্ধবী প্রিয়ঙ্কাকে আটক করে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করতে হবে। এই ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু  বলতে পারছে না পুলিশ। অভীকের পরিবারের অভিযোগও যাচাই করে দেখা হচ্ছে।   
 

Share this article
click me!