ক্লাব কাণ্ডে দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি একটি খবর হইচই ফেলে দিয়েছে বাংলার রাজ্য-রাজনীতিতে। এই প্রসঙ্গেই ভারতী ঘোষের করা টুইট নিয়ে ইতিমধ্যেই জোরদার চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
দুর্গাপুজো হোক বা খেলা, দ্বিতীয় বার বাংলার মসনদে বসেই ক্লাবগুলিকে দরাজ হস্তে দান করতে দেখা গিয়েছে মমতার সরকারকে ( CM Mamata Banerjee )। যা নিয়ে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বারেবারে বিতর্কের ঝড় উঠলেও তাতে বিশেষ কর্ণপাত করতে দেখা যানি বাংলার সরকার ( West Bengal Government ) । যদিও সরকারি অনুদান পেয়ে স্বভাবতই খুশি ক্লাব কর্তারা। কিন্তু এমতাবস্থায় এবার ক্লাব নিয়ে মমতার সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ ( Bharati Ghosh Attacks Mamata )। এমনকী এই প্রসঙ্গে কটাক্ষবান শানিয়ে ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে দফায় দফায় টুইট পোস্টও(Twitter Post) করতে দেখা যায় ভারতী ঘোষকে(BJP Leader Bharati Ghosh)। সেখানে একটি পোস্টে তিনি লেখেন, “ বড় ক্রীড়া কেলেঙ্কারি! পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২৫ হাজার ক্লাবকে খেলাধূলার কার্যকলাপ বাড়াতে আর্থিক সাহায্য হিসাবে ৫ লক্ষ করে দিয়েছে। মোট খরচ হয়েছে ১২৫০ কোটি। কিন্তু এগুলি সবই আদপে ভুয়ো স্পোর্টস ক্লাব। তারা জলসা, রাজনৈতিক কর্মসূচী, র্যালির আয়োজন করলেও খেলাধুলা সংক্রান্ত কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি।”
এদিকে ভারতীর এই টুইট নিয়ে ইতিমধ্যেই জোরদার চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অন্যদিকে আরও একটি বিস্ফোরক টুইটে ভারতীকে লিখতে দেখা যায়, “ঈশ্বর! বাংলায় ১২৫০ কোটি টাকার বড় কেলেঙ্কারি ফাঁস! দ্য প্রিন্ট রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কিভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোটি কোটি জনসাধারণের টাকা লুট করেছে। কী ভাবে সেই টাকা স্পোর্টস ক্লাবগুলিকে সাহায্যের নামে টিএমসি গুন্ডাদের দিয়েছে!” এই ক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, ক্লাব কাণ্ডে দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি একটি খবর হইচই ফেলে দিয়েছে বাংলার রাজ্য-রাজনীতিতে। পশ্চিবঙ্গ সরকারের খেলার অনুদান(Sports grant from the Government of West Bengal) বাবদ দেওয়া অর্থরাশি নিয়ে খবরটি করে ইংরাজী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’ (English media The Print)।
তাদের প্রতিবেদনেই রাজ্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দ অর্থের যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন তোলা হয়। পাশাপাশি বড় অঙ্কের আর্থিক অনুদান পাওয়ার পরেও বাংলার একাধিক ক্লাবের বেহাল অবস্থার কথা তুলে ধরা হয় তাদের প্রতিবেদনে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই এদিন দফায় দফায় বাংলার সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে দেখা যায় ভারতীকে। এদিকে দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে ডায়মন্ডহারবারের জয়দেবপুর গ্রামেই রয়েছে জয়দেবপুর মাতৃমন্দির ক্লাব(রেজিস্ট্রেশন নম্বর: S/69806)। খাতায় কলমে এই ক্লাবে দেওয়া হয় ক্রীড়া প্রশিক্ষণ। আর সেই খাতেই ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই ক্লাব পেয়েছে ৪ লক্ষ টাকারও বেশি অনুদান।
আরও পড়ুন-বাড়ছে কোভিড, সংক্রমণ ঠেকাতে মাইক্রো কন্টেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা বড় রদবদল হাওড়ায়
এদিকে ক্লাব চত্বরে গেলে দেখা যাবে কার্যত জীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে ক্লাবের মূল ঘরটি। খেলার সরঞ্জাম বলতে রয়েছে শুধুমাত্র একটি ক্যারম বোর্ড। সেটাও যদিও ভাঙা। রয়েছে দু-একটা ভাঙা চেয়ার, একটা ছোট বিছানা, আর কিছু খালি মদের বোতল। কার্যত একই অবস্থায় রয়েছে এই ক্লাব থেকেই মাত্র ২ কিলোমিটার দূরের দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের দুই কক্ষ বিশিষ্ট ইয়ং অ্যাথলেটিক ক্লাব ( রোজিস্ট্রেশন নম্বরঃ S/12/18676)। সেখানেও খেলাধূলার সরঞ্জাম তো দূর রয়েছে একটি কাঠের খাট, কিছু রান্নার সরঞ্জাম আর কিছু খালি মদের বোতল। এছাড়াও ক্লাবের অন্য ঘরে কিছু প্লাস্টিকের পাইপ, একটি ভাঙা পেডেস্টাল ফ্যান এবং কয়েকটি সবুজ চেয়ার রয়েছে। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে এই ক্লাবটিতে আবার এলইডি টিভি, একটি মিউজিক সিস্টেমও রয়েছে। রয়েছে একটা ক্যারম বোর্ড। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই ক্লাব রাজ্য সরকারের থেকে ৫ লক্ষের বেশি অনুদান পায়। কিন্তু সেই টাকার বাস্তবিক প্রয়োগ আদপে কোথায় হয়েছে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।