‘করোনা চলে গেছে’ বেলাগাম কুকথা নয়, প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে মিথ্যে তথ্য ঘোষণা দিলীপ ঘোষের

  • করোনা আবহের মধ্য়েও দিলীপ ঘোষের বিতর্কিত মন্তব্য
  • বাংলায় বিজেপি সরকার আনতে নিশানায় রাজ্য পুলিশ
  • পুলিশের বিরুদ্ধে বারবার লাগামহীন মন্তব্য দিলীপের
  • লাগামহীন কুকথায় খ্যাতি অর্জন করছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি  
     

Asianet News Bangla | Published : Sep 13, 2020 11:53 AM IST

তপন মালিক-রাজ্য বিজেপির সভাপতি লাগামহীন কুকথা বলার কারণে ইতিমধ্যেই খ্যাতি লাভ করেছেন। তাঁর বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেমন ট্রোল হয় তেমন দলীয় কর্মীরা গর্ববোধও করেন। বাংলায় গেরুয়া শিবিরকে ক্ষমতায় আনতে করোনাকালেও তিনি প্রায় রোজই বিভিন্ন জায়গায় সভা করছেন। যে সভার পোশাকি নাম ‘চায়ে পে চর্চা’। দুদিন আগে বেলঘরিয়ায় পুলিশকে আক্রমণ করে দিলীপ ঘোষ বললেন, পুলিশের চাকরি ছেড়ে তাঁদের সবজি বিক্রি করা উচিত। তার আগে পানিহাটি বিধানসভায় গিয়েও পুলিশকে নিশানা করে বললেন, তাঁরা সবাই তৃণমূলের চামচাগিরি করে। বেলঘরিয়ায় দাঁড়িয়ে ওসি-আইসিকে আক্রমণ করে বললেন, ‘ওদের বউরাও মনে হয় ওদের দেখে হাসে। বলে, আমার শাড়িটা পরে যাও, ওই ড্রেস পরার কী দরকার।’ দিলীপের কথায় সভায় যে হাসির রোল ওঠে, করতালি ফেটে পড়ে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু করোনা সংক্রমণ  রুখতে যখন বারবার সামাজিক দূরত্ব পালনের কথা বলা হচ্ছে তখন এত জনসভা এবং উপচে পড়া ভীড় কেন?   
বোঝাই যাচ্ছে করোনার ভয় উপেক্ষা করেই সভা করছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি। কোনও বিধিনিষধের পরোয়া রাখেন না তিনি। শুধু কি তাই, প্রকাশ্য জনসভায় তিনি দায়িত্ব নিয়ে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস নেই, সে চলে গেছে। তার কথা সত্যি হোক, সেটা তো বিশ্ববাসী  চাইছেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণের বাড় এমন বেড়েছে যে দেশজুড়ে ত্রাহি রব পড়ে গিয়েছে। গড়ে দৈনিক ১ লক্ষ সংক্রমণ ছোঁয়ার পথে দেশ। এর বাইরে নয় পশ্চিমবঙ্গও। এ রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা নিয়ম করে ৩,০০০ ছাড়াচ্ছে। এরকম সময়ে প্রকাশ্য জনসভা করে ঘোষণার ভঙ্গিতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলছেন, ‘করোনা চলে গিয়েছে’!
রাজনীতিকরা বলছেন, এমন আশ্চর্য ঘটনা তো এই সময় স্বপ্নেও দেখা সম্ভব নয়। ঘুমে হোক কিংবা জাগরণে, দিলীপবাবু যাই দেখে থাকুন আর যাই বলে থাকুন, প্রতিদিন দেশে এবং এ রাজ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। না হয় বেফাঁস-বেলাগাম মন্তব্য করাই তাঁর অভ্যাস। তা বলে করোনাকে নির্বাচনী  হাতিয়ার করতে গিয়ে জনসভায় একটি বিরাট মিথ্যে ও বিপজ্জনক কথা বলবেন?
হুগলির ধনেখালিতে এক সভায় মেদিনীপুরের সাংসদ বলেন, ”করোনা চলে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও দিদি লকডাউন জারি করছেন। বিজেপি যাতে মিটিং-মিছিল না করতে পারে, তাই লকডাউন জারি করা হচ্ছে। আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না৷”
দিলীপবাবু আপনি শুধুমাত্র মেদিনীপুরের সাংসদ নন, একটি রাজনৈতিক দলের রাজ্য সভাপতি। এ ধরণের মিথ্যা এবং বোধবুদ্ধিহীন ঘোষণা কি প্রকাশ্য জনসভায় আপনার করা উচিত? আপনার নানান মন্তব্যে হাসি ঠাট্টার উপাদান উপকরণ ঠাঁসা থেকে, সে কারণে আপনার কথা শুনতে মানুষ ভীড় জমায়। কিন্তু তাই বলে এত বড় একটা মিথ্যা আপনি অবলীলায় বলে দিলেন? একবারও আপনার মনে হল না, কথাটা শুধু মিথ্যা নয়, মানুষকে ভুল তথ্য দেওয়া, ভুল পথে চালিত করা। দিলীপবাবুর বয়স কম হয় নি। মিথ্যা থেকে এখন বেরিয়ে আসা কঠিন।  তবে চেষ্টা করুন একটু সংযত হতে। মনে রাখবেন এটা কেবল অন্যায় নয়, ভয়ংকর অপরাধ।
বুঝতে অসুবিধা হয় না, দিলীপ ঘোষ এবং তাঁর রাজনীতি মানুষের জীবনের থেকে ভোট ব্যাঙ্ককে অনেক বেশি মূল্য দেয়। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতির রসবোধেরও নমুনা তারিফ করতে হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ২৩ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৩ জনের। স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বৃহস্পতিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩ হাজার ১১২ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ১৭৫। মৃত্যু মোট ৩ হাজার ৭৭১ জনের। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও আপনি বলছেন, করোনা চলে গেছে। চিন্তা করছেন কিভাবে কত বড় মিছিল করবেন, মিটিঙে কত লোক সমাগম করবেন।
সম্প্রতি দিলীপ ঘোষের একাধিক নিরাপত্তারক্ষীর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার পর কয়েকদিন হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন দিলীপবাবু। ফের নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে শুরু করেছেন তিনি। আর কোনও সভাতেই সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের বিধি মানছেন না তিনি। দেখা গিয়েছে, মঞ্চে ও মঞ্চের সামনে উপচে পড়ছে ভিড়। সেই সব সভার ছবি আবার ফেসবুকে পোস্ট করছেন দিলীপবাবু ও বিজেপি।
তার মানে কি ভোটের রাজনীতিতে মিথ্যে ভাষণই একমাত্র হাতিয়ার?

Share this article
click me!