কলকাতা পুর ভোট, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটকে পথ দেখাবে, বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কলকাতার ভোটের হিংসার ছবি দেখিয়েই সারা দেশে তাঁর নাক কাটতে নামল বিজেপি (BJP)।
ভোটের নামে প্রহসন, লজ্জা! রবিবার, কলকাতা পুর নির্বাচন ২০২১-এ (Kolkata Municipal Election 2021) ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ধরা পড়ল, শাসক দলের হিংসার (Violence) ছবি। কোথাও পড়ল বোমা, কোথাও বিরোধী দলের এজেন্ট বসতে দেওয়া হল না, কোথাও আক্রান্ত হলেন প্রার্থী, সেই সঙ্গে ছিল বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া। কলকাতা পুর ভোটের প্রচার পর্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেছিলেন কলকাতার ভোটই, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে গোটা ভারতকে পথ দেখাবে। গণতন্ত্রকে হত্যার যে ছবি এদিন গোটা কলকাতা থেকে ধরা পড়ল, তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের (Abhishek Banerjee) মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না বলে, দাবি করেছে বিজেপি (BJP)। একইসঙ্গে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder) জানিয়েছেন, বিজেপি জায়গায় জায়গায় এর প্রতিবাদ জানাবে। একইসঙ্গে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের (State Election Commission) বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছে তারা।
বিজেপি দল ও রাজ্য বিজেপির নেতারা এদিন বেশ কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার কোনওটিতে দেখা যাচ্ছে এমএলএ হস্টেলের (MLA Hostel) বাইরে, কলকাতা পুলিশকে সারিবদ্ধভাবে প্রহরা দিতে, যাতে বিরোধী বিধায়করা সেখান থেকে বাইরে পা না রাখতে পারেন। ১১৪ নম্বর বুথের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাড়িতে এসে চড়াও হয়েছে তৃণমূল (TMC) আশ্রিত দুষ্কৃতিরা। তারা ভোটারদের বলছে, ভোট দিতে যাবেন না, গেলে বিপদ! ফেসবুক লাইভে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গিয়েও আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে বিজেপি প্রার্থী রাজর্ষি লাহিড়ীকে (Rajarshi Lahiri)। কোথাও আবার কাগজ দিয়ে বুথের ভিতরের সিসিটিভি ক্যামেরার চোখ ঢেকে দিতে, বা ক্যামেরাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতেও দেখা গিয়েছে।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) এই ধরণের একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সৌরভ দাসকে (Sourav Das) প্রতিটি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতেই হত। সেগুলিকে নিষ্ক্রিয় করেই সেই বাধ্যবাধকতা পূরণ করেছেন তিনি। তীব্র কটাক্ষ করে বিরোধী দলনেতা বলেছেন, 'তিনি (সৌরভ দাস) নিশ্চয়ই বলবেন, এগুলো লাগাতেই হত। সেগুলি কাজ করে কিনা, তা কে দেখতে যাচ্ছে?'
এই নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে এদিন কলকাতার বুকে পথ অবরোধও করে রাজ্য বিজেপি। এইভাবে ভোট লুঠ করলে, ভোট করারই বা কি দরকার ছিল? প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। এর থেকে রাজ্য সরকার, নিজেদের পছন্দ মতো পুর প্রশাসক বসিয়েই কাজ চালালে পারতেন। তিনি আরও জানান, আগেই তাঁরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বলেছিলেন, কলকাতা পুলিশকে দিয়ে কলকাতার ভোট শান্তিপূর্ণ করা যাবে না। কিন্তু কমিশন তাঁদের কথা শোনেনি। যার ফলে সকাল থেকে বেনজির হিংসার ঘটনা দেখা গিয়েছে।
এদিন কলকাতা পুরসভার বিজেপির দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর মিনা দেবী পুরোহিত অভিযোগ করেন, তৃণমূল আশ্রীত দুষ্কৃতিরা তাঁর কাপড় ছিঁড়ে দিয়েছে। সেই ঘটনার উল্লেখ করে বিজেপি সভাপতি বলেন, বাংলার জন্য এই ঘটনা চরম লজ্জার। এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও তিনি অভিযোগ করেন। দাবি করেন, খান্না হাইস্কুলের সামনে বোম পড়লেও, সেটাকে আতশবাজি বলে উড়িয়ে দিয়েছে, পুলিশ। জানিয়েছে, কোনও হতাহত হয়নি, তাই সেটা বোমা নয়। সিসিটিভির চোখ সাদা কাগজ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের এজেন্ট-প্রার্থীরা মার খেয়েছেন। এর বিরুদ্ধে তাঁরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন বলে জানান সুকান্ত।
কলকাতা পুরভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের হিংসার বিষয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপির জাতীয় সম্পাদক বিএল সন্তোষও (BL Santosh)। টুইট করে তিনি অভিযোগ করেন, কলকাতা পুর নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট করার মডেল ছিল - বঙ্গ বিজেপি কর্মীদের মারধর, শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে বোমা বিস্ফোরণ, নির্বাচনী আধিকারিকদের হুমকি দেওয়া এবং নখদাঁতহীন পুলিশ বাহিনী। আসন্ন ত্রিপুরা ও গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনেও, মমতা এই মডেলেই ভোট করতে চান বলে অভিযোগ করেন তিনি।