হয় ঠিকমতো খাবার দেওয়া হচ্ছে না, নয়তো খাবারে পাওয়া গিয়েছে আরশোলা। রাজ্য়ে মিড-ডে মিল নিয়ে যখন চারপাশে শুধুই অভিযোগের পাহাড়, তখন রায়গঞ্জের হাতিয়া প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্য়ালয় যেন 'নেই রাজ্য়ের' মরুভূমিতে মরুদ্য়ান হয়ে দেখা দিল।
হাতিয়া প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্য়ালয়ের রান্নার দিদিরা গিয়েছেন একটি সরকারি কর্মশালায়। দিনচারেক ধরে সেখানে চলবে প্রশিক্ষণ । কিন্তু তাই বলে কি এই চারদিন অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাবে ছোট ছোট পড়ুয়ারা? তাই স্কুলের শিক্ষকরাই পড়ানোর ফাঁকে পালা করে করে মিড-ডে মিল রান্নার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন। একেবারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আর এই ঘটনায় একাধারে বিস্মিত ও অভিভূত শিক্ষা দফতরের কর্তা থেকে শুরু করে অভিভাবকরা, সবাই।
শনিবার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকেই রান্নার প্রস্তুতি চালাচ্ছেন শিক্ষকরা। শুধুই কি রান্না? সেইসঙ্গে কুটনো কোটা, কোটার পর সেগুলোকে ভাল করে ধোওয়া, বাটনা বাটা, বাসনকোসন পরিষ্কার করা, কত কাজ। অথচ, এত কাজের মাঝেও ক্লাস কিন্তু একদম নিয়ম মতো হয়ে চলেছে। দুই স্কুলের প্রধানশিক্ষক ভাস্কর মহালানবীশ ও জনার্দন গোস্বামীকে বেশ হন্তদন্ত অবস্থায় দেখা গেল এদিন। এই বাড়তি দায়িত্ব নিতে অসুবিধে হচ্ছে না? দুজনেই সমস্বরে বলে উঠলেন, "একেবারেই না। চারদিন ধরে রান্নার লোকেরা আসবেন না। ওঁদের প্রশিক্ষণ চলছে। এদিকে বাচ্চারা না-খেয়ে স্কুলে আসে। ওরা তো আমাদের সন্তানতুল্য়। এই চারদিন ধরে ওরা অভুক্ত থাকবে নাকি?"
শিক্ষক-পড়ুয়া সম্পর্ক যেখানে তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে, দেরিতে স্কুলে আসার জন্য় প্রধান শিক্ষককে যেখানে খুঁটিতে বেঁধে রাখছেন অভিভাবকরা, সেখানে এমন এক উদ্য়োগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন সবাই। আর মাস্টারমশাইরা, যাঁদের অনেকেরই বাড়িতে রান্না করার কোনও অভ্য়েসই নেই, তাঁরাই রেঁধেবেড়ে কার্যত খাইয়ে দিচ্ছে পড়ুয়াদের। কেমন লাগছে? ছোট্ট এক পড়ুয়ার উত্তর, "আমরা তো বাড়ি থেকে না-খেয়ে আসি। স্য়ারেরা রান্না না-করে খাওয়ালে আমাদের তো এই ক-দিন খেতেই পেতাম না।"