আমফানের পর মমতার মুখে ১৭৩৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ের কথা, কতটা বিধ্বংসী ছিল সেই সাইক্লোন

আমফানের দাপটে তছনছ বাংলা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি শেষ এমন ঝড় বাংলায় হয়েছিল ১৭৩৭ সালে

ঠিক কতটা বিধ্বংসী ছিল সেই সাইক্লোন

কী বলছে ইতিহাস

 

সাইক্লোন আমফানের দাপটে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তৃর্ণ এলাকা তছনছ হয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিককালে এমন অভূতপূর্ব ঝড় শুধু বাংলা কেন, ভারতেই দেখা যায়নি বলছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। বুধবার সন্ধ্যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নের ওয়ার-রুম থেকে দাবি করেছেন এমন সর্বনাশা ঝড় বাংলা শেষ দেখেছিল ১৭৩৭ সালে, অর্থাৎ প্রায় ৩০০ বছর আগে। কতটা বিধ্বংসী ছিল সেই ঝড়? কী ঘটেছিল?

বস্তুত, বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়  ১৭৩৭ সালের এই ঘূর্ণিঝড়-কে। এই ঘূর্ণিঝড়টি ইতিহাসে 'কলকাতা সাইক্লোন' নামেই বেশি পরিচিত। কেউ কেউ একে গ্রেট বেঙ্গল সাইক্লোন অব ১৭৩৭-ও বলে থাকেন। সেই সময়ে উপগ্রহ চিত্রের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। যোগাযোগ ব্যবস্থা বা হিসাব রাখার ব্যবস্থাও ছিল খুবই অনুন্নত। তাও সেই সময়ের বিভিন্ন নথি ঘেঁটে দেখা গিয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের নিম্নাঞ্চলগুলি সেই ঝড়ের দাপটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছিল।

Latest Videos

বুধবার সাইক্লোন আমফান চলাকালীন এমনই ছিল অবস্থা

ঝড়টি এসেছিল ১৭৩৭ সালের ১১ ই অক্টোবর। তখনও ব্রিটিশ-রাজ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করত না। তাই অনেকে দাবি করেন, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অর্থাৎ এখন সারা বিশ্বে যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়, সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ঝড়টি হয়েছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। যাইহোক, ওইদিন ভোরের দিকে প্রচন্ড শক্তি নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা নদীর বদ্বীপ অঞ্চল দিয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়েছিল। সাইক্লোন আমফানের ক্ষেত্রে যেমন দিঘা ও হাতিয়ার প্রায় সরাসরি উত্তরদিকেই ছিল কলকাতা শহর, সেইবারও কলকাতার সরাসরি দক্ষিণদিক দিয়েই স্থলভাগে প্রবেশ করেছিল।  

সেই সময় হাওয়ার গতিবেগ মাপামাপির বিষয়টি অতটাও উন্নত ছিল না। তাই ঝোড়ো বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ কত ছিল, তা জানা যায়নি। তবে অন্যান্য বিষয় থেকে ঝড়টি কতটা ভয়ঙ্কর ছিল তা বোঝা সম্ভব। ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায়, ওই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গঙ্গা বা হুগলী নদীতে ১০ থেকে ১৩ মিটার উঁচু অর্থাৎ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু জলোচ্ছাস তৈরি হয়েছিল। এতে করে গঙ্গায় থাকা ইংরেজদের ৮ থেকে ৯ টি জলযান তাদের বেশিরভাগ ক্রু সদস্যকে নিয়ে একেবারে হারিয়ে গিয়েছিল। ডাচদেরও ৩ থেকে ৪ টি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ২০,০০০ জলযান ধ্বংস হয়েছিল। যার মধ্যে সমুদ্রে যাত্রা করা বড় জাহাজ থেকে শুরু করে ডিঙি নৌকাও ছিল।

সাইক্লোন আসার ঠিক আগে গঙ্গার ছবি

মাত্র ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৩৮১ মিলিমিটার। ঝড়টি একেবারে শক্তি হারাবার আগে বাংলার বুকে প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার পথ পারি দিয়েছিল। সেই সময় এখনকার ধড়ের প্রায় দিন সাতেক আগে থেকে সতর্কতার কোনও ব্যবস্থা ছিল না।  আর কলকাতা শহরের বেশিরভাগ ঘরবাড়িই ছিল খড়ের ছাদের মাটির বাড়ি। সেই কাঁচা বাড়িগুলি তো ধ্বংস হয়েইছিল, সেই সঙ্গে অনেক ইটের গাঁথনির পাকা বাড়িও এতটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল যে সেগুলি মেরামত করা যায়নি। সেন্ট অ্যান'স গির্জার চূড়াটি ডুবে গিয়েছিল। ঐতিহাসিক নথি বলছে, ১৭৫১ সালে সেটি মেরামত করার অনুমোদন দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেকর্ডে কেবল কলকাতাতেই ৩,০০০ মানুষের মৃত্যুর খবর রয়েছে। মাথায় রাখতে হবে, সেইসময় জনসংখ্যা ছিল বেশ কম। সব মিলিয়ে বাংলায় মৃত্যু হয়েছিল ৩,০০,০০০ থেকে ৩,৫০,০০০ মানুষের। এর মধ্যে জাহাজের নিহত ক্রু সদস্যরাও যেমন ছিলেন, তার পাশাপাশি বাংলায় স্থানীয় মানুষরাও ছিলেন।

 

Share this article
click me!

Latest Videos

‘Chinmoy Krishna-কে আমি মুক্ত করবোই’ নির্ভীক Bangladeshi আইনজীবী Rabindra Ghosh-এর চরম প্রতিশ্রুতি
‘এক প্রভু জেলে আছেন লক্ষ্য প্রভু তৈরি হয়ে গিয়েছেন’ Suvendu Adhikari-র তীব্র হুঙ্কার
আরে ওরা কি করবে, সেদিন আমি ওদের সামনে আরতি করে বুঝিয়ে দিয়েছি : শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
বড়দিনের সন্ধ্যায় কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে জনজোয়ার | Park Street Christmas | Kolkata News
Suvendu Adhikari Live : কোলাঘাটের মঞ্চে বিস্ফোরক ভাষণ শুভেন্দু অধিকারীর, সরাসরি | Bangla News