মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি যদি মানতে হয়, তাহলে তাঁর মায়ের মৃত্যু জন্য দায়ী রাজ্য সরকার! তাপস পালের মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক তরজায় এবার নয়া মাত্রা যোগ করলেন প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কুণাল ঘোষ। ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলাম। তাপস পাল, সুলতান আমেদ এবং প্রসূনদার স্ত্রী পারমিতাদির মৃত্যুর পিছনে সিবিআই মামলা এবং বন্দিজীবনে হয়রানির চাপ আছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। এই তত্ত্ব ঠিক হলে বলতে হয় আমার মা প্রয়াত মণিকা ঘোষের অতিরিক্ত অসুস্থতা ও মৃত্যুর জন্য দায়ী রাজ্য সরকার, রাজ্য পুলিশ এবং রাজীব কুমার-সহ কয়েকজন অফিসার।' তবে রাতের দিকে অবশ্য পোস্টটি ডিলিট করে দেন কুণাল।
আরও পড়ুন:সপ্তাহান্তে ফের বৃষ্টির সম্ভাবনা কলকাতায়, দেশের একাধিক জায়গায় ঝড়ের পূর্বাভাস
শেষজীবনে কেটেছিল রোগে ভুগে। সেভাবে কাউকে পাশে পাননি। অকালে চলে গেলেন অভিনেতা ও প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। মঙ্গলবার ভোরে মুম্বইয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন তিনি। রাতে প্রয়াত অভিনেতার দেহ আসে কলকাতায়। বুধবার সকালে রবীন্দ্রসদনে দলের প্রাক্তন সাংসদকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, 'এই কথাগুলি আগেও বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অনেকেই ভেবেছে আমি রাজনৈতিক কারণে হয়তো বলছি। তাপস পালের মৃত্যু আবারও সেটা প্রমাণ করল। একটা এজেন্সির দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। মৃত্য়ুর আগে জানতেও পারল না, তাঁর অপরাধটা কী ছিল? তাপস পালের মতো বাংলার ছবি সুপারস্টারকে এক বছর এক মাস জেলে রেখে দেওয়া হল।' স্রেফ তাপস পালই নন, তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ, এমনকী, সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুর জন্যও কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ি করে মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য ঘিরে বুধবার দিনভর চাপানউতোর চলে রাজনৈতিক মহলে।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন, গান স্যালুট দেওয়া হল সাহেব-কে
বুধবার বিকেলে ফেসবুকে প্রোফাইলে একটি দীর্ঘ পোস্ট দেন প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কুণাল ঘোষ। তিনি লেখেন, 'আমি জ্ঞানত কোনও দোষ করিনি। আমাকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে, মামলার পর মামলা দিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। আমাকে অনশন করে মাকে দেখার অনুমতি নিতে হয়েছে। এই চাপে মা আরও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। মা সঙ্কটজনক অবস্থায় যখন হাসপাতালে, তখন অনেক কষ্টে মাত্র ২ ঘণ্টার প্যারোল আদায় করে দেখতে গিয়েছিলাম। পুলিশের বাড়াবাড়িতে মাত্র কুড়ি মিনিটে আমাকে চলে যেতে হয়েছিল। সেটাও কলকাতা পুলিশ। পরে মা আর বেশিদিন বাঁচেননি।' শুধু তাই নয়, বিপদে সময়ে পাশে না দাঁড়িয়ে তাপস পালের মৃত্যুর পর অনেকেই শোকপ্রকাশ করছেন বলে অভিযোগ তুলেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ। শেষপর্যন্ত রাতে ওই পোস্ট ডিলিট করে ফের একটি পোস্ট দেন কুণাল। সেই পোস্টে আগের পোস্টটি ডিলিট করার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, একসময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ও আস্থাভাজন ছিলেন সাংবাদিক কুণাল ঘোষ। তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদও হন তিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোয় জেলে যেতে হয় কুণালকে। দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব। এখন জামিনে মুক্ত তিনি।