আড়াই দশক ধরে তালাবন্দি রাজার খাজানা, অবশেষে খুলছে সিন্দুকের দরজা

  • কলকাতা মানেই এক ইতিহাসের শহর 
  • যেখানে খেলা করে বেড়ায় হরেক রকমের কাহিনি
  • সেই কলকাতার ইতিহাসে জুড়ছে আরও এক কাহিনি
  • আর সেই কাহিনি শোভাবাজার রাজবাড়িকে নিয়ে

debojyoti AN | Published : Oct 31, 2019 11:21 AM IST / Updated: Feb 03 2020, 01:18 PM IST

খুলছে রাজার খাজানা। আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খাজানার দরজা বন্ধ হয়ে রয়েছে শোভাবাজার রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে। এই সিন্দুকের বয়স আড়াইশো বছরেরও বেশি এবং তাতে থাকা খাজানার বয়সও তেমনি। অবশেষে সেই খাজানা এবার আসতে চলেছে শোভাবাজার রাজবাড়ির উত্তরসূরিদের সামনে। যদিও, এই খাজানা-র পুরোটাই রাজপরিবারে পূজিত হওয়া দুর্গা মা এবং গোবিন্দজি-র। রাজপরিবারের ট্রাস্টি নিয়ে কিছু গণ্ডগোল তৈরি হওয়ায় এবং আইনি জটিলতায় এই সিন্দুকের দরজা বন্ধ রাখতে হয়েছিল। 

শোভাবাজার রাজবাড়ি যে ঠাকুরদালান তার দুইদিকে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া দুটি বিশাল সিন্দুক। এরমধ্যে একটি সিন্দুকের তালাবন্ধ রাখা ছিল। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি আশিষকুমার চক্রবর্তী এক নির্দেশে এই সিন্দুকের চাবি বর্তমান ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যারই ফলস্বরূপ এই সিন্দুকের চাবি শোভাবাজার রাজবাড়ির ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের হাতে ২ নভেম্বর তুলে দেওয়া হবে। 

ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান সদস্য তাপসকুমার বসু জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সালে কলকাতা হাইকোর্ট তৎকালীন ট্রাস্টিবোর্ডের বহিরাগত সদস্য-কে বরখাস্ত করেছিল এবং সেইসঙ্গে সিন্দুকের চাবি জমা নিয়ে নিয়েছিল। এরপর একটি অন্তর্বতীকালীন ট্রাস্টি বোর্ড তৈরি হলেও তা নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে এই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরাও প্রয়াত হন। যার জেরে জটিলতা চরম আকার ধারণ করে। কলকাতা হাইকোর্টের মধ্যস্থতায় অবশেষে নতুন করে একটি ট্রাস্টিবোর্ড তৈরি করা হয়েছে। আর এই ট্রাস্টিবোর্ডের আবেদন মেনে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি আশিষকুমার চক্রবর্তী যে সব অধিকার তাদের হাতে ন্যস্ত করেছেন তারমধ্যে বন্ধ থাকা সিন্দুকের চাবি হস্তান্তরের কথাও রয়েছে। 

আরও পড়ুন- ঐতিহ্যময় শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোতে, কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে হয় বোধন

২ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের একটি প্রতিনিধি দল শোভাবাজার রাজবাড়িতে গিয়ে এই চাবি বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের হাতে তুলে দেবেন। তবে, সিন্দুকের চাবি হস্তান্তরের আগে, তাতে থাকা সমস্ত গয়না, হিরে-জহরত-এর হিসেব হবে। বিশেষ সূত্রে খবর আনুমানিক ৬৫ থেকে ৭০ কিলোর স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে এই সিন্দুকে। এছাড়াও রয়েছে রাজ আমলের বহূমূল্য হিরে-জহরত। এসবই দেবোত্তর সম্পত্তি। কলকাতা শহরে খোঁজ করেও কলকাতা হাইকোর্ট এত বিপুল পরিমাণ অলঙ্কার ও হিরে-জহরত-এর বর্তমান মূল্য নির্ধারণের বিশেষজ্ঞ পায়নি। তাই কলকাতা হাইকোর্ট থেকে ভারতীয় স্টেটব্যাঙ্কের সাহায্য চাওয়া হয়। ২ নভেম্বর শোভাবাজার রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে স্টেটব্যাঙ্কের গয়না বিশেষজ্ঞদের একটি দলও থাকবে। যারা বন্ধ থাকা এই সিন্দুকের সমস্ত জিনিসের মূল্য নির্ধারণ করবেন। 

আরও পড়ুন-এবারের মতো শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে বিদায় নিলেন উমা, দেখুন ভিডিও

ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য তাপসকুমার বসুর মতে, এই মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া একদিনে শেষ হওয়া কার্যত অসম্ভব। একে এক বিপুল পরিমাণ জিনিসের মূল্য বানানো এবং সেগুলির মান খতিয়ে দেখা- বলতে গেলে এক বিশাল কর্মকাণ্ড। এছাড়াও সিন্দুকের দরজা খোলার পথে রয়েছে অন্তত ২০টি তালা। যেগুলি-তে আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে মরচে পড়ে গিয়েছে। সুতরাং তালা খোলাটাও একটা বিশাল কাজ। তালা খুললেও সিন্দুকের দরজার কলকব্জা কতটা সহজে কাজ করবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তবে, রাজার ধন- তাই এই নিয়ে যে কলকাতাবাসীর কৌতুহল চরমে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই। 

অন্তত দুশো বছর আগে ঠাকুরবাড়ির এই ভল্টগুলি তৈরি করানো হয়েছিল। এক ব্রিটিশ সংস্থা বরাত নিয়ে এই দুটি ভল্ট তৈরি করেছিল। রাজা রাধাকান্ত দেব ট্রাস্টি তৈরি করে দিলে এই ভল্টের দায়ভার ব্যক্তিমালিকানাধীন-এর আওতার বাাইরে চলে আসে। কিন্তু, এই ট্রাস্টি গঠন নিয়ে সমানে গণ্ডগোল চলতে থাকে। যার জেরে ১৮৬৪ সালে শোভাবাজার রাজপরিবারের ট্রাস্টি গঠন নিয়ে মামলা দায়ের হয়। তারপর থেকেই আইনি জটিলতায় প্রবেশ করেছিল এই ট্রাস্টিবোর্ড। ২৬ অগাস্ট, ২০১৯ সালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি আশিষকুমার চক্রবর্তীর নির্দেশে দেড়শ বছর পার হওয়া এক ঐতিহাসিক রাজকীয় মামলারও সমাপ্তি ঘটেছে। ২ নভেম্বর সিন্দুকের চাবি তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মধ্যে দিয়েও আরও এক ইতিহাসের কাহিনি তৈরি হতে যাচ্ছে তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। যদিও, এই চাবি হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে শোভাবাজার রাজবাড়ি ও ঠাকুরবাড়িকে মুড়ে ফেলার কাজও শুরু করে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। 

Share this article
click me!