ভিন্ন স্বাদের সামাজিক চলচ্চিত্র নির্মাণে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তরুণ মজুমদার। তাঁর চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার দর্শকদের বিমোহিত করে।
চলে গেলেন প্রখ্যাত পরিচালক তরুণ মজুমদার। অতিমারির সময়ে খুব একটা ভালো ছিলেন না তরুণ মজুমদার। প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন তিনি। ১৫ জুন ফের তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। বার্ধক্য জনিত নানা অসুখে তিনি ভুগছিলেন। শনিবার থেকে শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। রবিবার সমস্যাটা আরও বাড়ে। জানা যায় তিনি ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। তাঁর সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তাঁর ডায়ালিসিস শুরু হয়।
প্রবীণ পরিচালকের মৃত্যুর খবরে শোক বার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছেন – “প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদারের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। ভিন্ন স্বাদের সামাজিক চলচ্চিত্র নির্মাণে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তরুণ মজুমদার। তাঁর চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার দর্শকদের বিমোহিত করে। তরুণ মজুমদার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র – বালিকা বধূ, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ফুলেশ্বরী, দাদার কীর্তি, ভালবাসা ভালবাসা, সংসার সীমান্তে, গণদেবতা, শহর থেকে দূরে, পথ ভোলা, চাঁদের বাড়ি, আলো ইত্যাদি। তিনি পদ্মশ্রী, জাতীয় পুরস্কার সহ বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন BFJA পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। তার মৃত্যু চলচ্চিত্র জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই। "
সোমবার সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে তাঁর জীবনাবসান হয়। এদিন সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বর্ষীয়ান পরিচালককে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন তরুণ মজুমদার। পদ্মশ্রী সম্মানেও সম্মানিত হয়েছেন। তবে তাঁর সেরা প্রাপ্তি বাঙালি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের ভালোবাসা। ‘দাদার কীর্তি’র স্রষ্টার রক্তচাপ ছিল নিচের দিকে। তাই স্বাস্থের খুঁটিনাটি আরও ভালভাবে খতিয়ে দেখেছিল মেডিকেল বোর্ড। এই পরিচালক দিন কয়েক আগেও এক তথ্যচিত্রের রেকি করতে পৌঁছে গিয়েছিলেন পুরুলিয়ায়। অনীক দত্তের অপরাজিত’র স্পেশ্যাল স্ক্রিনিং-এ হাজির ছিলেন, অনীকের ছবি দেখে নিজের মুগ্ধতাও প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গিয়েছে, বহু বছর ধরেই কিডনির সমস্যা ছিল বর্ষীয়ান পরিচালকের। তাঁর ডায়ালিসিস চলছিল। সেকেন্ডারি ইনফেকশনও ছিল বলে খবর। এর আগেও একবার তরুণ মজুমদারের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছিল। সেই সময় তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছিল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই ভেন্টিলেশন থেকে পরিচালককে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর রাইলস টিউবও খুলে দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে ট্র্যাকিওস্টোমি পদ্ধতির মাধ্যমে তরুণ মজুমদারের ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণত এই ধরনের পদ্ধতিতে ভোকাল কর্ড বা স্বরতন্ত্রীর নিচে ফুটো করা হয়। সেখান থেকে শ্বাসনালি পর্যন্ত ঢুকিয়ে দেওয়া হয় একটি টিউব। কিন্তু রবিবার ফের পরিচালকের স্বাস্থ্যের অবনতির খবর পাওয়া যায় এবং আবার তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়।