নাম না করে অমিত শাহ-কে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এদিন রীতিমতো কড়া বার্তা দেন তিনি। বৈঠকে শুরুতে রাজ্যের হালহকিকত নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হিন্দি ভাষাটা তিনি ভালোই জানেন। ভালো করেই লিখতে ও বলতে পারেন। হিন্দি না শিখেও যারা হিন্দিভাষী তাদের থেকেও ভালো করে ভাষাটা বলতে পারেন। তাই 'উঠাকে ফেক দো'-র আক্ষরিক অর্থ তিনি ভালোই বোঝেন। এই ধরনের মন্তব্য করে মানুষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করা যেতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনি এর পাল্টা মন্তব্য করে দিতেই পারেন, কিন্তু তখন সেটা নিয়ে জলঘোলা হবে। অযথা উত্তেজনা হবে।
বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ায় অমিত শাহ সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, 'মমতার সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে। এই সরকারকে উঠাকে ফেক দো।' দুই দিনের সফরে কলকাতায় এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বুধবার রাতে তিনি কলকাতায় পৌঁছন। আর কলকাতায় পা রাখার পর থেকেই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে তদারকি শুরু করে দিয়েছেন তিনি। বিজেপি-র রাজ্য নেতাদের কাছ থেকে পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। এমনকী, বুধবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেই পূর্ব মেদিনীপুরের মৃত বিজেপি কর্মী মদন ঘোড়ই-এর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। মদনের পরিবার থেকে রাজ্যপুলিশের ভূমিকা নিয়ে নালিশ জানানো হয়। সেই সঙ্গে একটি লিখিত অভিযোগপত্রও অমিত শাহ-র হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফলে, বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে অমিতের তীব্র কটাক্ষ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের প্রতি উষ্মা প্রকাশ নির্দিষ্ট কৌশলের অঙ্গ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তবে এই প্রথম নয় এর আগেও বহুবার অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারকে উপড়ে ফেলার বার্তা দিয়েছেন। ২০১৭ সালের বিজেপি-র কর্মীসভা এসেও একই বার্তা দিয়েছিলেন। এর আগেও অমিত শাহ থেকে নরেন্দ্র মোদী সকলেই মমতা বন্দ্যোাপাধ্যায়, মুকুল রায়ের নাম করে তৃণমূল কংগ্রেসকে উৎখাতের আওয়াজ তুলেছিলেন। সেই সময় মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসেই ছিলেন। মুকুল রায় এখন অবশ্য বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতিদের একজন। এমনকী রাজ্যে মমতা বিরোধী আওয়াজের অন্যতম মুখ। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও মুকুল এখন বিজেপি-র এক গুরুত্বপূর্ণ এক্কা। মুকুলের বিজেপি যোগদানের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে তীর্যক মন্তব্যের বাক্যবাণ আরও বাড়িয়েছে বিজেপি।
মমতার সরকারকে উৎখাত করার জন্য অমিত শাহর আহ্বান যে ভালো প্রতিক্রিয়া বয়ে নিয়ে আসবে তা ভালোই বোঝা গিয়েছিল। তবে, মনে করা হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝহয় এবারও চুপ করে মন্তব্যের আক্রমণ বাউন্সারকে ডাক করবেন। কিন্তু, যেভাবে তিনি এদিন ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠকেই অমিত শাহ-র মন্তব্যে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তাতে আগামীদিনে তৃণমূল ও বিজেপি-র রাজনৈতিক আক্রমণ আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।