ইতিহাস 'বিকৃতিতে' শীর্ষে মমতা,বাবুল সুপ্রিয়রা শিশু

  • বিপ্লব, দিলীপে রক্ষে নেই, তার ওপর বাবুল দোসর।
  • সম্প্রতি ইতিহাস গুলিয়ে দেওয়া নিয়ে বিজেপি ব্রিগেডের ওপর সরব হয়েছে নেট দুনিয়া।
  • হাসির খোরাক হয়েছেন মন্ত্রী থেকে ভিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
  • কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে,ইতিহাস বিকৃতিতে সবাইকে পিছনে ফেলেছেন খোদ রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রী। 

Tapas Dutta | Published : Sep 27, 2019 7:24 AM IST / Updated: Sep 27 2019, 01:52 PM IST

বিপ্লব, দিলীপে রক্ষে নেই, তার ওপর বাবুল দোসর। সম্প্রতি ইতিহাস গুলিয়ে দেওয়া নিয়ে বিজেপি ব্রিগেডের ওপর সরব হয়েছে নেট দুনিয়া। হাসির খোরাক হয়েছেন মন্ত্রী থেকে ভিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে,ইতিহাস বিকৃতিতে সবাইকে পিছনে ফেলেছেন খোদ রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রী। 

সতীদাহ প্রথা বিদ্যাসাগর বন্ধ করেছেন বলায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে ট্রোল শুরু হয়েছে নেট দুনিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় রসিকাতার রসদ জোগানোর জন্য বাবুলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। তবে জানেন কি এইে 'রসবোধের' আসল কারিগর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কোনও সভায় মুখ খোলা মানেই ইতিহাস গুলিয়ে দেওয়া। এক সময় মমতার সম্পর্কে তেমনই ধারণা হয়েছিল সংবাদমাধ্য়মের। তবে মিডিয়ার এই ধারণা যে অমূলক নয় , তা জিইয়ে রেখেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি যার অন্য়তম নজির বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে তাঁর দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী পালন। যেখানে রাস্তার ফলক দেখে বিদ্যাসাগর মাইল আবিষ্কার করেছিলেন বলে জানান মুখ্য়মন্ত্রী। এমনকী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জ্যোতির্বিজ্ঞানেও পারদর্শী ছিলেন বলে মন্তব্য করেন মমতা। 

তবে ইতিহাস বলছে অন্য কথা। মাইল শব্দের উৎস নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও  ইংরেজি অথবা লাতিন শব্দই মাইল। দূরত্বের সূচক হিসাবে মাইলের উল্লেখ পাওয়া যায় রোমে। মাইলের পরিমাপ বলা হয় এক হাজার পেস। জানা যায়, রোমান সেনা কুচকাওয়াজ করার সময় প্রতি পদক্ষেপে যে দূরত্ব পেরোত তাকেই বলা হত এক পেস। সে রকম ১ হাজার পেসের সমান এক মাইল। বিদ্যাসাগরের গবেষকরা জানাচ্ছেন, আদতে বাবার সঙ্গে রাস্তায় যাওয়ার সময় মাইল ফলক গুন গুনে যেতেন তিনি। সেখান থেকেই তাঁর সংখ্যা চেনা। কোনও দিনই ফলক দেখে মাইল আবিষ্কার করেননি তিনি। 

যদিও এই প্রথমবার নয়,অতীতেও ইতিহাস গুলিয়ে দেওয়ার নিদর্শন রেখেছেন মমতা। ৩৯তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিটস ও শেক্সপিয়রের জমানার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভালো সম্পর্ক ছিল বলে মন্তব্য় করেন মুখ্য়মন্ত্রী। এখানেই থেমে না থেকে রবীন্দ্রনাথ লন্ডনে গিয়ে গীতাঞ্জলী রচনা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন মমতা। এখানেও মমতার সঙ্গে একমত নন ইতিহাসবিদরা। তথ্য বলছে, উইলিয়াম শেক্সপিয়র জন্মেছিলেন ১৫৬৪ সালে। তিনি মারা যান ১৬১৬ সালে। শেক্সপিয়রের মৃত্যুর ১৭৮ বছর পর ১৭৯৪ সালে রবীন্দ্রনাথের দাদু দ্বারকানাথ ঠাকুর জন্মেছিলেন । অন্য দিকে, জন কিটস জন্মেছিলেন ১৭৯৫ সালে। ১৮২১ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। কিটস-এর মৃত্যুর ৪০ বছর পরে ১৮৬১ সালে জন্ম হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। এই পরিসংখ্য়ানই দেখিয়ে দেয়,রবীন্দ্রনাথ কোনওভাবেই এই তিন প্রজন্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।

এ ছাড়াও রবীন্দ্রনাথের লন্ডনে গিয়ে গীতাঞ্জলি রচনার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। কারণ ১৯১০ সালে ভারতেই প্রকাশিত হয় গীতাঞ্জলী। ১৯১২ সালে কবিগুরুর লন্ডনে যাওয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে সেখানে যাননি তিনি। তাই লন্ডনে গিয়ে তাঁর গীতাঞ্জলী লেখা বা অনুবাদের কোনও সত্যতা নেই। তবে মমতা একা নন , বিজেপির নেতারাও বহুবার এই ধরনের মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন,সহজপাঠ লিখেছিলেন বিদ্যাসাগর। আদতে বর্ণ পরিচয় লিখেছেন বিদ্যাসাগর। মমতার মতো এই তালিকায় রয়েছে ত্রিপুরার মুখ্য়মন্ত্রী বিপ্লব দেবের নাম।  অতীতে তাঁর সৌজন্যে শিরোনাম পেত সংবাদমাধ্যম। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে প্রচারের আলোয় আসেন বিপ্লব দেব। তবে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে ছাপিয়ে যেতে পারেননি তিনি।  
 

Share this article
click me!