বাঙালির প্রিয় রাহুল দেব বর্মণ। কবি জীবনানন্দ দাশ যেমন বলেছিলেন, 'মানুষের মৃত্যু হলে তবু মানব থেকে যায়', রাহুল যেন সেই মনুষ্যেতর মানব, মৃত্যুহীন। বাঙালির শয়নে স্বপনে, প্রেমে-পুজোও আজও হট ফেভারিট তিনি। কিন্তু কলকাতা কি আদৌ তাঁকে মনে রেখেছে? খাস কলকাতায় রাহুলের বাড়িটির কেমন অবস্থা আজ?
২০০৬ সালে ক্লাস আইআইবি-র হেরিটেজ তালিকায় ঢোকানো হয় রাহুল দেববর্মনের বাড়িটিকে। ২০০৬ সালে একটি ফলকও বসানো হয় রাহুলের বাড়িতে। গত বছর ফের সরকারের নজরে এই বাড়িটি আনতে উদ্যোগী হন রাহুল দেববর্মনের পারিবারের এক সদস্য। সাউথ এন্ড পার্কে শচীন দেববর্মন ও রাহুল দেববর্মনের স্মৃতিধন্য বাড়িটি যাতে রক্ষা করা যায়, সেখানে যাতে একটি মিউজিয়াম হয়, সেই জন্যে রাহুল দেববর্মনের মামা দূরদর্শনের প্রাক্তন স্টেশন ডিরেক্টর অভিজিত দাশগুপ্ত দরবার করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হেরিটেজ কমিশনের কাছে।
তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, যদিও রাহুলের জন্ম হিন্দুস্তান পার্কে, কয়েক বছরের মধ্যেই সাউথ এন্ড পার্কে পাকাপাকি ভাবে চলে আসে বর্মন পরিবার।
সরকারের তরফেও উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এই বাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য বের করতেই লেগে যায় ১ বছর। এদিন হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নকে ফোন করা হলে তিনি জানান, " আমরা অনুরোধ পেয়েই বিশেষজ্ঞদের পাঠাই এই বাড়িটি পরিদর্শনে। সেখান থেকে ঘুরে এসে এক্সপার্ট কমিটি জানান দেয়, এই বাড়িটির মালিকানার হাতবদল হয়েছে। সেই মালিক কে তা আমরা জানতে পারিনি গত এক বছর যাবৎ। '
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, একজন বাড়ির মালিককে খুঁজতে এক বছর লেগে গেল! শুভাপ্রসন্ন উত্তরে অন্য যুক্তি সাজালেন। তাঁর দাবি, 'একটি ব্যক্তিসম্পত্তিকে তো যখন তখন নিয়ে নেওয়া যায় না। আমরা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমরা কিছু দিন আগেই ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে এক কাঠা জমি কিনে নিয়ে নিবেদিতার মিউজিয়াম করেছি। এই বাড়িতে নিবেদিকা স্কুল শুরু করেছলেন। পরে কালক্রমে সেই বাড়িও বিক্রি হয়ে যায়। এখন সরকার তো আর সব বাড়ি কিনে নিতে পারে না। আমরা বর্তমান বাড়ির মালিককে অনুরোধ করব যাতে আমাদের দুটি ঘর অন্তত দেওয়া যায় এই বাড়িটির মিউজিয়াম করার জন্যে। আমরা রাস্তার নামও রাহুল দেববর্মনের নামেই করতে চাই।'
প্রসঙ্গত এই বাড়িটি বর্তমানে একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর হস্তগত রয়েছে। রাহুল দেববর্মনের স্মৃতি কলকাতায় কতটা অটুট থাকে, তা নির্ভর করছে তাঁর বদান্যতার ওপরেই।