Roundup 2021: 'ম্যান মেড' নাকি ভারী বর্ষণ, রাজ্য়-কেন্দ্রের সংঘাতে ব্রাত্য হল কি একুশের বাণভাসীরা

একুশের ভোট-ভাইরাসের বছরে অন্যতম ক্যাটালিস্ট হল বন্যা। এবার প্রশ্নটা হল, সেটাকি বৃষ্টি জল বেড়ে নদী বাধ ভেঙে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বন্যা, নাকি ম্যান মেড বন্যা, আর এখানেই রাজ্য-কেন্দ্রের সংঘাত শুরু।  

Ritam Talukder | Published : Dec 31, 2021 12:02 PM IST / Updated: Dec 31 2021, 06:33 PM IST

একুশের ভোট-ভাইরাসের বছরে অন্যতম ক্যাটালিস্ট হল বন্যা (Flood)। এবার প্রশ্নটা হল, সেটাকি বৃষ্টি জল বেড়ে নদী বাধ ভেঙে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বন্যা, নাকি ম্যান মেড বন্যা (Man Made Flood)। আর এখানেই রাজ্য-কেন্দ্রের সংঘাত শুরু। প্রথমত রাজ্যে এবছর একাধিক জেলায় বন্যা হয়েছে। আর কোভিড পরিস্থিতিতে এই বন্যা হল অনুঘটক ছাড়া আর কিছুই নয়। তার অন্যতম কারণ কোভিড আবহে সর্ব প্রথম নিয়ম হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা। যা, বন্যা দুর্গতদের জন্য কার্যত প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। একদিকে সব হারিয়ে অসহায় তাঁরা। সরকারি খাবার জুটলেও কোনও এক ত্রান শিবিরে তখন জমায়েত শয়ে শয়ে মানুষ। সুতরাং কোভিড বিধি (Covid Rules) মূলত শিকেয় উঠেছিল বন্যার দিনগুলিতে। 

 একুশ সালে নিম্নচাপের জেরে টানা ভারী বৃষ্টি হয়েছে। প্রথম প্রথম চাষের জমি নিয়ে মনখারাপ হত বইকি কৃষকদের। কিন্তু চলতি বছরের মাঝে যে একটা জমিটাই জলের নিচে তলিয়ে যাবে, তা কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। শিলাবতী ও ঝুমি নদীর জল ছাড়াও বৃষ্টির কারণে ঘাটাল মহকুমা প্লাবিত হয়। নৌকা নামানো হয়।ঘাটাল মহকুমা জুড়ে ৫১ টি ত্রাণশিবির খোলা হয়। যেখানে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন উদ্ধার হওয়া ১৪৭২ জন। জলের তলাতে ট্রান্সফর্মার রয়েছে এমন অনেক এলাকাতেই।  বহু এলাকা বিদ্যুৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ঘাটাল শহর সংলগ্ন   রাজ্য সড়কে  নৌকোয় কাজে নামে এনডিআরএফ এর টিম। স্থানীয় সূত্রে তখন খবর মেলে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪,০৭,৮৭৯ জন। এদের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয় ৬৪,৭৭০ জনকে। ৮ হাজারের বেশি বাড়ি নষ্ট হয়েছে। তারপর ত্রিপল বিলি করা হয়েছে ৩০,৯৫২ টি। কিন্তু যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা, সেই আতঙ্কের জ্বরের প্রকোপ দেখা দেওয়া শুরু করে ঘাটাল জুড়ে।  অবস্থা বুঝে এলাকায় চিকিৎসকদের দিয়ে নেমে পড়ে প্রশাসন। শুধু ঘাটালই নয়, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া,  আরামবাগের ২ জায়গায়, খানাকুলে ১ এবং ২ নম্বর ব্লকে ২ টি,  হাওড়ার উদয়নারায়নপুর, বারভূমের নানুর এবং পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের বাঁধ ভেঙে জল ঢোকে।  প্রভাবিত হয় ২২ লক্ষ্যের বেশি মানুষ। প্রশ্ন ওঠে এরপরেই সবই কি বৃষ্টির জল। 

বৃষ্টির জল না আদতে এটি ম্যান মেড বন্যা অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টি করা এই বন্যার তত্ত্ব প্রথম শুনিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা যায়, সেসময় প্রবল বর্ষণ হয় বিহার ও ঝাড়খণ্ডে। তারপেরই মাইথন, পাঞ্চেত, তিলপাড়া, দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়তেই ভেসে যায় বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ডিভিসি-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ' ঝাড়খন্ডে যেহেতু অনেক বৃষ্টি হয়েছে, ওরা আমাদের না বলে রাত্রি তিনটের সময় জল ছেড়ে দিয়েছে। ফলে সেই জলের তোড়ে ভেসেছে আসানসোল, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমানে। ফলে ঝাড়খন্ড-বিহারে বৃষ্টি হলে আমাদের ফেস করতে হচ্ছে। ওরা যদি ওদের ট্য়াঙ্ক গুলি একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখে, তাহলে সেখানে অনেক জল ধরে। কিন্তু ওরা কোনও পরিষ্কার করে না। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এটা চলছে। তাই ওদের জন্য আমাদের খেসারত দিতে হচ্ছে।' সেসময় তথ্যে উঠে আসে,  জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে, ডিভিসি।মাইথন ব্যারেজ থেকে ৮০ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক। পাশাপাশি হিংলো ব্যারেজ থেকে দু লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ায়  পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রাম অজয় নদের জলে প্লাবিত হয়ে যায়। মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টি গ্রাম জলের নিচে চলে যায়। নবান্ন মারফত খবর আসে, জলে তোড়ে প্রায় ১ লক্ষের বেশি বাড়ি ভেঙে যাওয়ার কথাও।

আরও পড়ুন, Roundup 2021: বামেদের 'টুম্পা'-BJP-র 'বেলা চাও', ভোটের পরেও ফোনের রিংটোনে ফেরে মদনের 'ওহ লাভলি'

প্রসঙ্গত, গতবারও ডিভিসির জল ছাড়ার ফলে ভেসে গিয়েছিল একাধিক গ্রাম। সেটার জন্য যে শুধু মাত্র কেন্দ্রের অধীনে ডিভিসি দায়ী ছিল, পরে তা স্বীকার করে নেয় মোদী সরকার। প্রবল বৃষ্টি ইতিমধ্যেই খারাপ অবস্থা দক্ষিণবঙ্গে। আর এবার জল ছাড়ায় তা ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির রূপ নিয়েছে। আর এবার সাহায্য মিললেও  কেন্দ্রীয় সরকারে সেই স্বীকারুক্তি আর রাজ্যের ভাগ্য়ে আর মেলেনি। এদিকে রাজ্য-কেন্দ্রের সংঘাতের জল আরও এগিয়ে চলে। আর এইখানেই ক্যাটালিস্ট বন্যার বেসে বসে আছে ভোট। কারণ ততদিন হয়ে গিয়েছে একুশের বিধানসভা নির্বাচন। যেখানে বিপুল  ভোটে জিতেছে তৃণমূল। তৃতীয় সরকার গঠন করেছে মমতার সরকার। তাই প্রেক্ষাপট মোটে গেরুয়া শিবিরের পক্ষে ছিল না। আর এখানেই উসকে যায় মমতার ম্যান মেড বন্যা তত্ত্ব। 

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মোদী অভিযোগ জানানোর পর চিঠিও লেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। চিঠিতে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসি-কে দায়ী করেন মমতা। তিনি চিঠিতে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ডিভিসি অতিরিক্ত জল ছাড়ায় এবং তাঁদের জলাধারগুলিতে ড্রেজিং না করার ফলেই প্রতি বছর ভুগতে হচ্ছে বাংলাকে। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একাধিক প্রস্তাব রাখেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। এর মধ্যে পাঞ্চেত এবং মাইথনের জলাধারগুলি থেকে পলি সরানোর প্রস্তাবও রাখা হয়। পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের বালপাহাড়িতে ডিভিসি-র ষষ্ঠ বাঁধ তৈরি করার প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বাইশে পা দেওয়ার পর রাজ্য ছাড়ি ফের ভিনরাজ্যের বিধানসভা ভোট যে আরও একবার বাংলার মেন মেড বন্যা ইস্যুতে রাজ্য-কেন্দ্রে সংঘাত তৈরি করবে না, তা কেই বলতে পারে, এনিয়ে জোর চাপান উতোর রাজনৈতিক মহলে।

Share this article
click me!