শুধু তাঁর মূর্তি পুজো, ইচ্ছের কোনও মুল্য দেয়নি তাঁর স্বদেশ

  • তিনি জাতির জনক হলেও তাঁর মূর্তি ভাঙা হয়
  • ১৫০তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে ভাঙা হয় কেরলে
  • গেরুয়া কাপড়ে মুখ ঢাকা ব্যক্তি মূর্তি ভাঙে, দাবি স্থানীয়দের
  • গুজরাটে গান্ধীজীর অ্যালফ্রেড হাই স্কুল চিরতরে বন্ধ

Tapan Malik | Published : Oct 2, 2020 6:55 AM IST / Updated: Oct 02 2020, 05:51 PM IST

তপন মল্লিক-তিনি জাতির জনক হলেও ১৫০তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে কেরলে তাঁর মূর্তি ভাঙা হয়। একবার নয়, একাধিকবার। তালিপরম্বা এলাকায়, গেরুয়া কাপড়ে মুখ ঢাকা এক ব্যক্তি মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি ভেঙেছিল বলে জানান স্থানীয়রা।
পাঁচ বছর আগে গুজরাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত অ্যালফ্রেড হাই স্কুল চিরতরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তখন ওই স্কুলের ১৫০জন ছাত্রের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় লিভ সার্টিফিকেট। তারা স্থানান্তরিত হয় করণ সিংজি হাই স্কুলে। ২০১৬ সালে গুজরাট সরকার স্কুলের জায়গায় জাদুঘর নির্মাণের ঘোষণা করেছিল। কিন্তু জায়গা কম হওয়ায় সংগ্রহালয় তৈরি হয়নি। 
১৮৫৩ সালের ১৭ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাজকোট ইংলিশ স্কুল। পরে সেটি হাইস্কুলে উন্নীত হয়। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পরে স্কুলের নাম হয় মহাত্মা গান্ধী হাই স্কুল। স্কুলটি অ্যালফ্রেড হাই স্কুল নামেও সমধিক পরিচিত। ১৮৮৭ পর্যন্ত এই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন মহাত্মা গান্ধী।
তিনি জাতীয় জাগরণে অসহযোগ, সত্যাগ্রহ-সহ প্রতিটি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অহিংসা ও সততার পথেই অবিচল থেকেছেন। সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শক্তির  বিরুদ্ধে শেষপর্যন্ত অহিংসার পথে অবিচল থাকার কারণে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। ভিন্ন মত থেকে তৈরি হয়েছে ভিন্ন পথ। কিন্তু আন্দোলন যখনই অহিংসা বা সত্যের পথ থেকে সামান্য সরে এসেছে গান্ধী নীরব প্রতিবাদ জানিয়ে সেই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। 

আরও পড়ুন-করোনা আবহে জিএসটি সংগ্রহে রেকর্ড, গত ছয় মাসে অগাস্টে সর্বোচ্চ কর আদায়
সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিকতা বিরোধী আন্দোলন তখনকার মতো থামিয়ে দিলেও সত্যনিষ্ঠ থেকেছেন ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় মনোভাবের বিরুদ্ধে। এমনকি সদ্য স্বাধীন হঊয়া দেশের মানুষ যখন তাঁর জন্মদিনে তাঁকে সংবর্ধনা জানাতে এসেছিল তখন দাঙ্গা বিদ্ধস্ত সদ্যোজাত স্বাধীন রাষ্ট্রে উদ্বাস্তু মিছিল লক্ষ্য করে গান্ধী বলেছিলেন, এই সময়  তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার চেয়ে শোকজ্ঞাপন করাই ভাল। কারণ এই মুহূর্তে তাঁর মৃত্যু ইচ্ছাই প্রবল।
গান্ধী মনেপ্রাণে স্বাধীন রাষ্ট্রে উদ্বাস্তু, দাঙ্গার মতো অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি মেনে নিতে পারেননি। ওই বছরই ২৩ অক্টোবর পাকিস্তানি হানাদাররা মহারাজা হরি সিংয়ের কাশ্মীরের ভারতভুক্তির আবেদন এবং শেখ আবদুল্লার আবেদনে সমর্থন জানানোর কারণে কাশ্মীর আক্রমণ করে। পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে নতুন দেশের সরকার পালটা ব্যবস্থা নেয় এবং তাদের প্রতিহত করতেও সমর্থ হয়। গান্ধী হানাদারদের এহেন আচরণ একেবারেই বরদাস্ত করতে পারেননি কিন্তু ভারত সরকার যখন উচিত শিক্ষা দিতে পূর্বশর্ত অনুযায়ী পঞ্চান্ন কোটি টাকা পাকিস্তানকে ফেরত না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, গান্ধী তখন তীব্র প্রতিবাদ করেন। সরকারের এ ধরনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের আচরণ তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েই গান্ধী বলেন, এই সিদ্ধান্ত কেবল অসৎ নয় প্রতিহিংসাপরায়ন মনোভাব। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ জেনে বুঝে কথার খেলাপ করলে যেমন প্রতিহিংসাপ্রবণ মনোভাব সামনে আসে তেমনি তা দু’টি রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে বিঘ্ন ঘটায়। 

Latest Videos

আরও পড়ুন-গান্ধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের উত্তর প্রদেশ পুলিশের, মহাত্মার জন্মদিনে লড়াইয়ের বার্তা রাহুলের
গান্ধীর মৌখিক আপত্তিতেও ভারত সরকার নিজের সিদ্ধান্তেই অচল থাকলে যথেষ্ট বিরক্ত হন গান্ধী, বাধ্য হয়েই অসত্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে হয় সত্যের পূজারীকে। এতদিন তাঁর প্রতিবাদ-আন্দোলন ছিল বিদেশি সরকারের বিরুদ্ধে এবার তাঁর প্রতিবাদ স্বদেশের সরকারের বিরুদ্ধে। নিজের দেশের সরকার হলেও ওই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি নীতিহীন এবং নিয়মহীন, তাই ১৩ জানুয়ারি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে গান্ধীকে ফের আমরণ অনশনে বসতে হয়। 
তাঁর একান্ত ইচ্ছা ছিল কিছুদিন সেবাগ্রামে থেকে অস্থায়ী ভাবে পাকিস্তানে বসবাস করবেন। তাঁর ইচ্ছার কথা জানতে পেরে জিন্না খুশি হয়ে তাঁকে স্বাগত বার্তা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ধর্মীয় মৌলবাদীদের আর রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানীদের কাজই হল মৈত্রী, সম্প্রীতি, মানবিক প্রচেষ্টাগুলিকে নস্যাৎ করে দেওয়া  পাঞ্জাবি উদ্বাস্তু মদনলাল গান্ধীকে মেরে ফেলতে বোমা ছুড়লেন। কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে গেলেন গান্ধী। কিন্তু গান্ধীর শেষ ইচ্ছে আর পূরণ হল না। 
গান্ধী কংগ্রেস দলের জন্য নতুন পথের দিশা তৈরি করেছিলেন। যেটি তাঁর জীবনের শেষ লেখা ইচ্ছাপত্র বা টেস্টামেন্ট। গান্ধী কংগ্রেস দলকে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলার কথা লেখেন। ব্যাখা করলেন, কংগ্রেস রাজনৈতিক দল হিসাবে সংগঠিত হয়েছিল স্বাধীনতার লক্ষ্যে, তা পূরণ হওয়ার পরই দলের রাজনৈতিক চরিত্র দ্রুত প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে। অতএব ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার চেয়ে শ্রেয় পথ মানুষের মধ্যে চলে আসা। কিন্তু দলের নেত্রীবৃন্দের কী তা পছন্দ হতে পারে? কখনোই নয়, কিছুতেই নয়। তাই জাতির জনক মহাত্মার ইচ্ছা বা চাওয়াকে তাঁর দেশ, কংগ্রেস দল – কেউই গুরুত্ব দেয়নি।
 

Share this article
click me!

Latest Videos

মহিলাদের সুরক্ষায় ‘অভয়া প্লাস’! রাজ্যপালের ২ বছর পূর্তিতে ৯টি প্রকল্পের সুভারম্ভ | CV Anand Bose
'ওদের টার্গেট মহিলা আর হিন্দু' তৃণমূল বিধায়কদের উপর হামলার কড়া প্রতিক্রিয়া শুভেন্দুর
'এই তৃণমূলকে উপরে ফেলব' মাদারিহাটে রাহুল লোহারের সমর্থনে প্রচারে গিয়ে হুঙ্কার শুভেন্দুর | Suvendu A
'চোর-চোর' তৃণমূলের পতাকা দেখেই জ্বলে উঠলেন শুভেন্দু! কি হল দেখুন | Suvendu Adhikari on TMC |
মহিলাদের নিরাপত্তায় বড় উদ্যোগ! ফ্রী ক্যারাটে প্রশিক্ষণ শিবির রাজ্যজুড়ে! | RG Kar