রাজনীতির কানাগলি থেকে রাজপথ- অবাধে বিচরণ ছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। কিন্তু তিনি পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee) - বাংলার রাজনীতিতে (Bengal Politic) একটি বর্ণময় চরিত্র। প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন। সাংসদ, বিধায়ক থেকে শুরু করে কলকাতার মেয়র- সবকটি প্রাতিষ্ঠানিক পদেই আবাধে বিচরণ করেছেন তিনি। জয়ের স্বাদ যেমন পেয়েছেন তেমনই হারও স্বীকার করেছেন হাসিমুখে। ধুতি-পাঞ্জাবিতে বাঙালির আইকনিক রাজনৈতিক চরিত্র তিনি। একটা সময় ইন্দিরা গান্ধীর অত্যান্ত প্রিয় পাত্র ছিলেন। প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির অত্যান্ত ঘনিষ্ট। গান্ধী পরিবারে অবারিত দার ছিল প্রিয়রঞ্জনের। কিন্তু তেমন দিল্লি যাতাযাত না থাকলেও ইন্দিরা গান্ধী পছন্দ করতেন তাঁকে।
রাজনীতির কানাগলি থেকে রাজপথ- অবাধে বিচরণ ছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। কিন্তু তিনি পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের সারেঙ্গাবাদে বাড়ি। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। ৬এর দশকে কলকাতায় পড়তে এসেই রাজনৈতিক জীবনে হাতেখড়ি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাপ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে। সেখান থেকেই ঘনিষ্ঠতা। যদিও প্রিয় তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু বাংলার রাজনীতিতে প্রিয়র ডান হাত হয়ে ওঠেন সুব্রত। বজবজ থেকে দক্ষিণ কলকাতার বর্ধিষ্ণ অঞ্চল বালিগঞ্জের বাসিন্দা- অনেকটা রূপকথার গল্পের মতই ছিল তাঁর জীবন। সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় মন্ত্রিসভা তথা রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের আমলে তিনি একাধিক গুরুদায়িত্ব সামলেছেন। তবে শুধুই উত্থান নয় পতনও দেখেছেন তিনি।
Subrata Mukherjee: একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান, প্রয়াত রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়
Sameer Wankhede: স্বস্তি নেই NCB কর্তা সমীর ওয়াংখেড়ের, তাঁর বিরুদ্ধে আসরে দুই দলিত দল
উত্তাল সাতের দশক। বাংলার রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রিয়-সুব্রত-সোমেন। ১৯৭১এক প্রথম নির্বাচনে লড়েন সুব্রত। প্রথম ভোটযুদ্ধে নেমেই বাজিমাত করেন তিনি। পরের বছর আবার নির্বাচন। সেখানেও অপ্রতিহত সুব্রত। তখন বয়স মাত্র ২৫। কনিষ্ট সদস্য হিসেবে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই । তারপরই জরুরি অবস্থার কালো দিন। তখন রাজ্যের তথ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রত। আলাপ হয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। কিন্তু সুব্রত থেকে যান হাত আঁকড়ে। কিন্তু ২০০০ সালে তাঁর প্রথম দলবদল। পরবর্তীকালে আবারও কংগ্রেসে ফিরে যান। সেখান থেকে আবর তাঁর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন।
কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের খাতায় নাম লেখান সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যদিও মমতার সঙ্গে বরাবরই তাঁর অম্লমধুর সম্পর্ক। তাঁর মত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও উত্থান ছাত্ররাজনীতি দিয়ে। অনেকেই বলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ই মমতার রাজনৈতি পথপ্রদর্শক। যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য সুব্রতই মমতার নাম প্রথম প্রস্তাব করেন। যদিও কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে অনেকবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশানা করেছিলেন তাকে। আবার সুব্রত যখন দল ছাড়েন মমতা তৃণমূলের দারজা খুলে দিয়েছিলেন তাঁর জন্য। মমতার হাত ধরে রাজ্যের পরপর দুবার মন্ত্রী হয়েছেন। যদিও ১৯১১সালে রাজ্যে পালা বদলের পর মমতার মন্ত্রিসভায় সুব্রতই ছিল একমাত্র ব্যক্তি যিনি একটা সময় এই রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। মমতা কেন্দ্রের মন্ত্রী থাকলেও মহাকরণের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মেটেও মধুর ছিল না। তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থেকে কলকাতার মেয়রও হয়েছিলেন তিনি। কলকাতার মেয়র থাকাকালীনই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট করেন। কলকাতা পুরসভা নির্বাচনেও লড়াই করেন। তিনি জিতলেও আর মেয়র হতে পারেননি। কলকাতা পুরসভার দখল রেখেছিল তৃণমূল। নারদকাণ্ডে সিবিআই সুব্রতকে জেরার জন্য নিয়ে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রীতিমত আন্দোলনে নেমেছিলেন।
দক্ষ সংগঠন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন সুব্রত। একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাব। এটি স্বাধীনতার আগেই তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে এই ক্লাব সুব্রতর ক্লাব হিসেবেই পরিচিত। একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবের দূর্গাপুজোও সুব্রত দূর্গাপুজো বলে পরিচিত। যাইহোক বাম-ডান সবরাজনৈতিক নেতা কর্মীদের কাছে সুব্রত ছিলেন জনপ্রিয়।