খাস কলকাতায় শাসকদলের অন্দরে গোষ্ঠীকোন্দল। কোন্দল এতটাই যে, তৃণমূলের কার্যালয় ভেঙে ফেলার চেষ্টা করলেন দলের কাউন্সিলর! স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের তৎপরতায় অবশ্য সে চেষ্টা সফল হয়নি। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে নিউটাউন থানার চিনার পার্ক এলাকায়। অভিযুক্ত কাউন্সিলের বিরুদ্ধে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাসকদলের স্থানীয় কর্মীরা।
পেশায় ব্যবসায়ী। গত পুরভোটে সিপিএম-এর টিকিটে জিতে বিধাননগর পুরনিগমের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন আজিজুল হোসেন মণ্ডল। মাস তিনেক আগে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। ফলে বিধাননগর পুরনিগমের ১২ নম্বর ওয়ার্ডটিও চলে যায় রাজ্যের শাসকদলের দখলে। কিন্তু কাউন্সিলর আজিজুল হোসেন মণ্ডলের কাজকর্মে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের। তাঁদের অভিযোগ, দলের কর্মীদের সঙ্গে সেভাবে কোনও যোগাযোগই রাখেননি আজিজুল। উল্টে নিজেদের রাজ্যের এক মন্ত্রীর কাছে লোক বলে প্রচার করে বেড়ান। সেই আজিজুলের বিরুদ্ধে দলেরই পার্টি অফিস ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠল!
ঘটনাটি ঠিক কী? ১৯৯৮ সালে যখন কংগ্রেস থেকে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন চিনার পার্কে দলের একটি কার্যালয় তৈরি করা হয়। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের দাবি, ওই পার্টি অফিসটি এলাকার একজনের ব্যক্তিগত জমির উপর তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে এতদিন কোনও সমস্যা হয়নি। দুর্গাপুজোর আগে হঠাৎ করেই একদিন রাতে পার্টি অফিসটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর আজিজুল হোসেন মণ্ডল। সেবারও স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরাই পুলিশের সাহায্য়ে দলের কার্যালয়টি রক্ষা করেছিলেন। শাসকদলের কর্মীদের দাবি, তখন সকলে সঙ্গে আলোচনা বসার আশ্বাস দিয়েছিলেন কাউন্সিলর। কিন্তু তা তো হয়ইনি, উল্টে রবিবার গভীর রাতে তৃণমূল কর্মীরা দেখেন, একদল শ্রমিক রীতিমতো শাবল দিয়ে পার্টি অফিসের দেওয়াল ভাঙছেন! ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় জোড়ো হন তৃণমূলকর্মীরা। অভিযোগ, তৃণমূল কাউন্সিলর আজিজুল হোসেন মণ্ডলের মদতেই তৃণমূলের পার্টি অফিস ভাঙা চেষ্টা হচ্ছিল।
কিন্তু দলের কাউন্সিলর খামোকা তৃণমূলের পার্টি অফিস ভাঙতে যাবেন কেন? স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের দাবি,নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারবেন না। তবে ব্যবসায়িক স্বার্থে হয়তো দলের পার্টি অফিসকে নিশানা করেছেন ওই তৃণমূল কাউন্সিলর। বিষয়টি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। আর কী বলছেন অভিযুক্ত কাউন্সিলর আজিজুল হোসেন মণ্ডল? যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। উল্টে তৃণমূল কাউন্সিলরের দাবি, তিনিই পার্টি অফিস ভাঙার বিষয়টি দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে জানান।
প্রসঙ্গত, বিধাননগর পুর এলাকায় একসময়ে তৃণমূলের দাপুটে নেতা ছিলেন সব্যসাচী দত্ত। পুরনিগমের মেয়রও ছিলেন তিনি। কিন্তু লোকসভা ভোটের পর সব্যসাচী বিভিন্ন কাজকর্মে দলের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেননি। শেষপর্যন্ত তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন সব্যসাচী দত্ত। বিধাননগরের মেয়র পদ থেকে দলবদলের আগেই ইস্তফাও দিয়ে দিয়েছেন তিনি।