ঘোরতর বিপাকে তৃণমূল কংগ্রেসের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্য়েই কল্যাণের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিলেন একদল আইনজীবী, আর সেই চিঠিকে হাতিয়ার বানিয়েই টুইটে তোপ শুভেন্দু, মালব্যদের।
ঘোরতর বিপাকে তৃণমূল কংগ্রেসের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্তত এমনটটাই দাবি বিজেপির শীর্ষ নের্তৃত্বের। ইতিমধ্য়েই কল্যাণের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিলেন একদল আইনজীবী। আর সেই চিঠিকে হাতিয়ার বানিয়েই টুইটে তোপ শুভেন্দু, মালব্যদের ( BJP Leader Suvendu Adhikari and Amit Malviya)। কোন দিকে যাবেন তৃণমূল সাংসদ। অভিষেক ইস্যুতে কল্যাণকে নিয়ে বিতর্ক প্রকাশ্য়ে আসতেই মমতা বলেছিলেন 'চ্য়াপ্টার ক্লোজড।' কিন্তু এখনতো 'শেষ হয়েও হইল না শেষ।' পরিস্থিতি কী 'চেক মেট'-র দিকে এগোচ্ছে। সেটাইতো শুভেন্দুদের ইশারায় প্রকাশ পেয়েছে। কারণ অভিষেক ইস্যুর পর এমনিতেই কল্যাণ ইস্যুতে পারদ চড়েছে তৃণমূলের অন্দরে। আর এবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অবৈধ মন্তব্যে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে দেশের প্রধানবিচারপতির কাছে চিঠি দিলেন একদল আইনজীবী। আর চিঠি দেওয়া অভিযোগকারীদের মধ্যে ১৫২ জন আইনজীবীই আবার তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য অথবা সমর্থক। আর এখানেই ঘোরতর বেকায়দায় তৃণমূল কংগ্রেসের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC MP Kalyan Banerjee)।
উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেসের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অবৈধ মন্তব্যের অভিযোগ জানিয়ে দেশের প্রধানবিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন একদল আইনজীবী। হাইকোর্টের অভিযোগকারী এই আইনজীবীরা চিঠিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সিসি করেছেন। চিঠিতে কল্যাণ বন্দ্যোাপাধ্যায়ের আচার-আচরণ এবং তাঁর রগচটা আচরণের অভিযোগকে বড় করে দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিকভাবে ছেলে এবং মেয়েকে সরকারি আইনজীবী-দের প্যানেলে স্থান করে দিয়েছেন, সে অভিযোগও চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে কীভাবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দিনের পর দিন নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সহকর্মী থেকে শুরু করে নানা মহলে অনৈতিকভাবে প্রভাব খাটিয়েছেন। সুবিধা পাইয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন, উল্লেখ করা হয়েছে এই যাবতীয় ঘটনাই। চিঠির একদম শেষভাগে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য এবং আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আর চিঠির পরেই এবার ময়দানে নেমেছেন শুভেন্দু, মালব্যরাও।
আরও পড়ুন, অভিষেক-কল্যাণ ইস্যুর পর কোন পথে দল, 'বিশেষ বার্তা'য় কী জানালেন সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্যায়
কল্যাণের বিরুদ্ধে প্রধানবিচারপতির কাছে চিঠি জমা পড়তেই মুখ খুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই চিঠিকে হাতিয়ার করে টুইটারে শুভেন্দু দাবি জানিয়ে বলেছেন, যারা এই চিঠি দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৫২ জন আইনজীবী তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য অথবা সমর্থক। সেক্ষেত্রে বলতে গেলে নিজের দলের মধ্যেই আজ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু শুভেন্দুই নয়, সরব কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। এই চিঠিকে কেন্দ্র করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কল্যাণের মন্তব্যের বিরোধিতা করে কীভাবে প্রধানবিচারপতিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে সেটাও তিনি তাঁর টুইটে তুলে ধরেছেন। যদিও এতকিছুর পরেও চুপ তৃণমূল সাংসদ। এখনও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন, Madan Mitra: 'মতুয়াদের সংঘবদ্ধতাকে নষ্ট করে দিয়েছে BJP', কল্যাণ ইস্যুতে কী বললেন মদন
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত ডায়মন্ড হারবার মডেলের বিরোধিতা করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক পুরভোটের আগে কোভিড আধিক্যের জেরে একটি ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছিলেন। অভিষেক বলেছিলেন, কোভিডের এই পরিস্থিতিতে আগামী ২ মাসের জন্য সকল কর্মসূচি বন্ধ রাখা হোক। স্বাভাবিকভাবেই তিনি পুরভোট পিছিয়ে দেবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তার ওই ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের মধ্যে দিয়ে। তখনও পুরভোটের দিন পিছোনোর কথা ঘোষণা করেনি কমিশন। এহেন পরিস্থিতিতে অভিষেককো তোপ দাগেন কল্যাণ। তিনি বলেন, অভিষেকের ব্যক্তিগত মত বলে কিছু থাকতে পারেনা। তার মত অর্থাৎ দলের বার্তাই বোঝায়। স্বাভাবিকভাবেই এইঘটনাগুলির পর দলের অন্দরে কল্যাণকে নিয়ে চাপ বাড়তে থাকে। যার জেরে প্রকাশ্য মুখ বন্ধ রাখতে বলে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। এই নিয়ে হুগলি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যেও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষগার হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সঙ্গেও বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষমেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্লোজড চ্যাপ্টার বলে কড়া বার্তা দেওয়ার পর এই কল্যাণ বনাম কুণালের বাকুযুদ্ধের ইতি ঘটে এবং অভিষেককে কোহিনূর বলে ব্যাখ্যা করেন কল্যাণ। তবে এবার কি আর প্রশংসায় নিভবে ক্ষোভের আগুন, নাকি চিঠির ছটায় কুপোকাৎ হতে পারেন তৃণমূল সাংসদ, তা সময়ই বলবে।