'জীবনের ওঠাপড়া গায়ে লাগে না', বোরোলিন দেখিয়ে কেন এমন কথা বললেন কুণাল ঘোষ

বোরোলিনে মজেছেন কুণাল। তিনি নাকি সারাক্ষণ-ই বোরোলিন মেখে বসে থাকেন। বোরোলিন বাংলার এক আদি অন্তত্য় স্কিন কেয়ার রেমেডিতে নাম করেছে কয়েক দশক ধরে। বোরোলিন-এর মূল রহস্য নাকি লুকিয়ে রয়েছে এতে ব্যবহৃত বোরিক অ্যাসিড এবং জিঙ্ক অক্সাইডে। বোরোলিন এমনিতেই খুব তৈলাক্ত। তারপরে এটা মাখলে ত্বক বেশ পিচ্ছিলও হয়ে যায়। তাই, বোরোলিন মেখে গরমের মধ্যে বাইরে বের হতে বারণ করেন বাড়ির মা-দিদারা। না হলে ঘেমে নিয়ে একসা হতে পারে। কুণাল কি সে কথা জানেন! 
 

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের রোষানলে পড়েছেন কুণাল ঘোষ। তিনি এই মুহূর্তে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র। কিন্তু, পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের গ্রেফতারির পর থেকেই নানা ভাবে কটূ মন্তব্যের ইঙ্গিত বেরিয়ে আসছিল কুণালের মুখ থেকে। শুক্রবার পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে নিয়ে তাঁর মন্তব্য দলীয় নীতি এবং আদর্শের সমস্ত মাত্রা লঙ্ঘন করে বলেই মনে করছে শীর্ষ নেতৃত্ব। কারণ, কুণাল সাংবাদিক সম্মেলনেই বলে বসেছিলেন যে, 'পার্থ এবার জেলে ঢুকে দেখুন কেমন লাগে।'

শুক্রবার রাত থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে কুণালের এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। শনিবার এই নিয়ে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কথাও হয়। কুণালের মন্তব্য নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের অনেক নেতাও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কাছে নালিশ জানান। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে শুরু করে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। রবিবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কানে বিষয়টি তোলা হয়। এরপরই খবর যে কুণাল ঘোষকে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় নিয়ে মন্তব্যে 'সেন্সর' করা হয়।

Latest Videos

পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে নিয়ে ব্যক্তগত আক্রমণে দলের মঞ্চ ব্যবহার না করতেই কুণালকে নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁকে অযথা আলটপকা মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। মুখপাত্র হিসাবে তিনি যখন সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলছেন সেখানে যাতে কোনওভাবেই দলের নীতি এবং আদর্শ লঙ্ঘিত না হয় সে কথাও কুণালকে জানানো হয়েছে। 

এরপর ফের সাংবাদিক সম্মেলনে মুখোমুখি হয়েছিলেন কুণাল ঘোষ। পার্থ মন্তব্যে তাঁকে সতর্ক করার বিষয়টি উত্থাপন হতেই কুণাল একটি বোরোলিনের প্যাকেট বের করেন। তিনি সকলের সামনেই বলেন, 'এই হল বোরোলিন। আমি সারাদিন বোরোলিন মাখি। জীবনের ওঠা পড়া আমার গায়ে লাগে না।' 

তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের আগে থেকেই একজন বাগ্মী সাংবাদিক এবং সম্পাদক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন কুণাল ঘোষ। এমনকী সারদা চিটফান্ড মামলায় তিনি যখন গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছিলেন তখন তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। কিন্তু, সেই সময় গ্রেফতারির জন্য তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় থেকে শুরু করে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়, মুকুল রায় থেকে শুরু করে তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। এমনকী তাঁকে জেলে প্রাণে মেরে ফেলারও ষড়যন্ত্র রচিত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন কুণাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বাড়িতে চিটফান্ডের অর্থ লুকানো রয়েছে বলেও তখন অভিযোগ করেছিলেন কুণাল ঘোষ। 

পরে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও লাগাতার তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন তিনি। এমনকি একটা সময় বিজেপি-তে তাঁর যোগদানের বিষয় নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে মুকুল রায়ের বিজেপি-তে যোগদানের পর। সেই সময় দফায় দফায় কুণাল ঘোষ ও মুকুল রায়ের মধ্যে বৈঠকে রাজনৈতিক এক জল্পনার জন্মও দিয়েছিল। ২০২১ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের নাকতলার বাড়িতে লাগাতার পিকেটিং করতেও দেখা গিয়েছিল কুণাল ঘোষকে। পরবর্তীকালে দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেসে কুণাল পুনরায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, আর এই অন্তর্ভুক্তির পিছনে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বিশাল রকমের অবদান ছিল বলেও রাজনৈতিক মহলের খবর সেই সময় চাওড় হয়েছিল। 

অথচ এহেন কুণাল প্রায় বছরখানেক ধরে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়দের হাত ছেড়়ে অভিষেক লবি-র ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বলেও খবর। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার কয়েক মাস পরেই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ঘনিষ্ঠ বনাম অভিষেক ঘনিষ্ঠদের যে লড়াই এবং কুমন্তব্যের খেলা বাংলার মানুষ দেখেছিল তাতে কুণাল ছিলেন অগ্রণীর ভূমিকায়। 

পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় গ্রেফতার হতেই যেভাবে কুণাল এই এপিসোডে বারবার মন্তব্য করছিলেন তাতে রাজনৈতিক মহলে একটা গুনগুন ফিসফাস ছিলই। মনে করা হচ্ছিল কুণাল হয়তো তাঁর গ্রেফতারির দিনগুলোর কথা স্মরণ করে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের গ্রেফতারিতে বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন। আশঙ্কা যে সত্যি তার প্রমাণ মেলে শুক্রবার। যখন তিনি পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে সরাসরি আক্রমণ করে বসেন। কুণাল হয়তো সেই মুহূর্তে খেয়ালও রাখেননি, যে গ্রেফতারির পরে ৬ দিন পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পদেই বহাল ছিলেন পার্থ। তাঁকে যে পদ থেকে চট করে সরিয়ে দেওয়াটা সহজ ছিল না তা খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় পার্থ বহিষ্কারের সাংবাদিক সম্মেলনেও স্বীকার করেছিলেন। 

কখনও লাল ডায়েরি, কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বাড়িতে চিটফাণ্ডের টাকা, আবার কখনও কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার-কে জড়িয়ে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য, আসলে কুণাল মানেই বিস্ফোরণ। কিন্তু পার্থ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্যে যে তাঁকে বোরোলিন বের করে দেখাতে হবে তা কে জানত! তবে, রোজ বোরোলিন মেখেই সাংবাদিক সম্মেলনে বসেন কি না তা নিয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ করেননি কুণাল।  

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

'মোদী বাংলার কৃষকদের একটা পয়সাও দেয় না' বিতর্কিত মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)
‘অনেকদিন পর কেষ্টদা ফিরেছে তাই একটু বিশৃঙ্খলা হচ্ছে’ অদ্ভুত ব্যাখ্যা Satabdi-র! | Satabdi Roy News
‘এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে TMC টাকা তুলছে না’ Mamata-কে চরম তুলোধোনা Suvendu-র
হঠাৎ করে TMC নেতারা পুলিশের বিরুদ্ধে কেন? কী উদ্দেশ্যে? প্রশ্ন অগ্নিমিত্রার | Agnimitra Paul
Naihati-তে কার পাল্লা ভারী? ফল ঘোষণার আগে উত্তেজনা তুঙ্গে গোটা এলাকায় | Naihati By Election Results