বাঙালিকে বলা হয় চাতাল। যা মাতালের চা-সংস্করণ আর কী। আর বলবে না-ই বা কেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে চা, ব্রেকফাস্টের সঙ্গে চা, অফিসে গিয়ে একঘণ্টা অন্তর-অন্তর চা, বাড়ি ফেরার পথে চেনা দোকানের চা, বাড়ি ফিরে এসে মুড়ির সঙ্গে চা, সন্ধেবেলায় আড্ডায় গিয়ে চা, রাতে ডিনার সারার আগে দিনে শেষবারের মতো চা।
এখন কথা হল, চায়ের অনেক উপকারিতা আছে ঠিকই। কিন্তু দিনে চার থেকে পাঁচবার। তার বেশি খেলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতেই পারে। তাই চা খান, কেউ বারণ করছে না। তবে একটু হিসেব করে। আর জেনে নিন বেশি চা খেলে কী কী সমস্য়া হতে পারে।
মনে করা হয়, দুধ-চা হোক কি লিকার-চা, কোনওটাই অবিমিশ্রভাবে ভাল বা মন্দ নয়। দুধ চায়ে যেমন অম্বল হতে পারে, লিকার-চা বেশি খেলেও সমস্য়া হতে পারে। প্রথমে বলি, সকালে ঘুম থেকে খালি পেটে চা না-খাওয়াই ভাল। তাতে করে গ্য়াস্ট্রিকের সমস্য়া দেখা দিতে পারে। সকালে উঠে বেড-টি না-খেলে যাঁদের ঘুম ভাঙে না, তাঁদের বলি, একটা কি দুটো বিস্কুট দিয়ে চা খান। চাইলে লিকার চা খেতে পারেন, চাইলে দুধ চা-ও খেতে পারেন। আপনার যদি ল্য়াকটোজ ইনটলারেন্স থাকে অর্থাৎ যদি দুধ সহ্য় না-হয় আপনার, তাহলে লিকার চা খান। তবে এমনতিতে যদি আপনার দুধ খাওয়ার অভ্য়েস থাকে আর তাতে করে কোনও অসুবিধে না-হয়, তাহলে দুধ চা খেলে কিন্তু কোনও সমস্য়া নেই। তবে চিনিটা বাদ দিন। বা খুব কম দিন। জানবেন, দিনে যতবার চা খাই আমরা, ততবার যদি এক-দু-চামচ করে চিনি শরীরে যায়, তাহলে দিনে অন্তত বেশ কয়েকটা মিষ্টি খাওয়া হয়ে যায়। যা মোটা হওয়ার আদর্শ।
এ তো গেল সকালের কথা। তার পরেও যতবার চা খাবেন, মনে রাখবেন, খালি পেটে নয়, একটা কি দুটো বিস্কুট দিয়ে চা খাবেন। অনেকেরই খালিপেটে চা খেলে বমিভাব হয়। তার কারণ হল, চায়ে থাকা ট্য়ানিন এই বমিভাব তৈরি করে। মনে রাখবেন, চিকিৎসকরা বলছেন, দিনে চার থেকে পাঁচকাপের বেশি চা খাবেন না। চা যেমন ক্য়ানসারে ঝুঁকি কমায়, তেমন বেশি চা আবার উল্টে ক্য়ানসারে ঝুঁকি বাড়ায়। দেখা গিয়েছে, বেশি চা খেলে পুরুষদের প্রস্টেট ক্য়ানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
শুধু তাই নয়, বেশি চা খেলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া নানাভাবে পড়তে পারে শরীরে। বলা হয়, বেশি চা খেলে তা শরীরে প্রোটিন ও অন্য়সব পুষ্টি উপাদানের সক্রিয়তা কমিয়ে দেয়। অন্য়দিকে আবার আলসারের ঝঁকিও বাড়ে। তবে তা অবশ্য় খালি পেটে চা খেলে তবেই।
আবারও বলি, চায়ের কিন্তু অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই চা খেতে কেউ বারণ করছে না কিন্তু। শুধু বলা হচ্ছে, চা খান, শুধু একটু পরিমিতভাবে।