
প্লাস্টিক দূষণ এতদিন ছিল পরিবেশগত সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু আজকের দিনে এসে তা আর শুধু প্রকৃতির ক্ষতি নয়—মানবদেহের গভীরে, কোষে, রক্তে এমনকি প্রজননতন্ত্রেও তার অস্তিত্ব মিলছে।
মস্তিস্ক এবং রক্তে প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গিয়েছিল আগেই। এবার গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সেই মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করছে মানব শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ কোষ—ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মধ্যে। অর্থাৎ ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্মের আগেই তাদের দেহে ঢুকছে প্লাস্টিক।
কী মিলেছে গবেষণায়?
‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ হিউম্যান রিপ্রোডাকশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজি‘-থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ডিম্বাশয়ের ভিতরে যে ফলিকিউলার ফ্লুইডে ডিম্বাণু বিকশিত হয়, তার মধ্যেও পাওয়া গিয়েছে প্লাস্টিকের কণা।
গবেষকেরা ২৯ জন মহিলার ফলিকিউলার ফ্লুইড ও ২২ জন পুরুষের সেমিনাল ফ্লুইড (যে তরলের মধ্যে শুক্রাণু থাকে) নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। দেখা গেছে, মহিলাদের ৬৯ শতাংশ ফলিকিউলার ফ্লুইড প্লাস্টিক কণায় ভর্তি, আর পুরুষের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৫৫ শতাংশ।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা
গবেষকদের ধারণা, রক্তস্রোতে বাহিত হয়ে জনন কোষেও প্রবেশ করছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। জলের বোতল, খাবারের প্যাকেট, দুধের প্যাকেট থেকে শুরু করে ফেসওয়াশ, কসমেটিক্স, এমনকি প্রাণদায়ী ওষুধের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করছে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক।
কিছুদিন আগেই নেদারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণাপত্রে আশঙ্কা জানিয়েছিলেন, যে মানুষের রক্তে বিপজ্জনক হারে বাড়ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পৌঁছে নানা রকম প্রাণঘাতী রোগ ডেকে আনতে পারে।
আরও চিন্তার বিষয়, ওই গবেষণাপত্রে স্পষ্টভাবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের শরীরে প্রায় দশগুণ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। এখনই প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুড়ে থাকবে প্লাস্টিকে।
ভবিষ্যৎ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত?
বিজ্ঞানীদের মতে, প্লাস্টিকের ব্যবহার এখনই বন্ধ না করলে ২০৪০ সাল নাগাদ পৃথিবীতে প্লাস্টিক বর্জ্য বেড়ে যাবে প্রায় দ্বিগুণ। দিনের পর দিন শরীরে ঢুকে রক্তে মিশতে থাকলে তা বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। আসুন দেখে নি, প্লাস্টিক কণা শরীরে কী ক্ষতি করছে?
১। হরমোন ভারসাম্য নষ্ট
মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে ঢুকে হরমোনের স্বাভাবিক কাজকে ব্যাহত করে, যার প্রভাবে বন্ধ্যাত্ব, মাসিক অনিয়ম এবং যৌন হরমোনে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
২। ডায়াবিটিসের ঝুঁকি
মাইক্রোপ্লাস্টিক ইনসুলিন নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যার ফলে টাইপ-২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
৩। ভ্রূণের বিকাশে বাধা
যদি ডিম্বাণু বা শুক্রাণু প্লাস্টিকে আক্রান্ত হয়, তবে সেই কোষ থেকে তৈরি হওয়া ভ্রূণের শরীর গঠনে জটিলতা আসতে পারে। শিশু জন্ম নিতে পারে জেনেটিক বা হরমোনাল সমস্যাসহ।
৪। বন্ধ্যত্ব ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস
জনন কোষেই যদি প্লাস্টিক জমে, তাহলে প্রজনন ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে—নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই।
সারাংশ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জন্মের আগে মায়ের গর্ভেই মুড়ে রয়েছে প্লাস্টিক কণায় - আশঙ্কা সাংঘাতিক বিজ্ঞানীদের কথায়। এখনি বিকল্প উপায় না বের করলে, ২০৪০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে প্লাস্টিক বর্জ্য বেড়ে যাবে প্রায় দ্বিগুণ।