আমাদের জীবন থেকে মেঘদূতের দিন যেমন চলে গিয়েছে, তেমনি চলে গিয়েছে জলকাদা মেখে ফুটবল খেলার দিন। খেলা বলতে এখন শৈশবময় শুধুই ইনডোর গেমস। আর ইনডোর গেমস মানে, একসাথে তুতো ভাইবোনেরা বলে সব ক্য়ারাম খেলতে বসে গেলাম, এমনটা কিন্তু নয়। মোবাইলে পাবজির মতো হরেক কিসিমের সব ভার্চুয়াল-গেমই এখন ছোটদের পছন্দ। তবে এই পছন্দের জন্য় কিন্তু আজকের প্রজন্ম নয়, বরং তার আগের প্রজন্ম দায়ী, যারা তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে যে, আনমনা দুপুরে বন্ধুর সঙ্গে পুকুর ধারে বসে ঢিল ছুড়তে ছুড়তে নিস্তরঙ্গে তরঙ্গ তোলাও এক ধরনের খেলা।
ইদানিং এই ইনডোরমুখী জীবন থেকে বেরিয়ে বাঁচার কথা বলছেন অনেকেই। বাংলার হারিয়ে যাওয়া নানারকম খেলাধুলো নিয়েও অনেক কথা শোনা যাচ্ছে এখন। ছোটরা খেলবে, এটাই তাদের ধর্ম, এই স্বাভাবিক বোধটুকু আবার ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে এখন, এটাই দুঃখজনক। তার কারণ, খেলার মতো করে খেললে, শরীর-মন দুই-ই চাঙ্গা থাকে ছোটদের। যা ওই ভিডিয়ো গেমে হার্গিস হয় না।
জানেন খেলার কী কী ভাল দিক রয়েছে?
আজকাল বাচ্চারা যে এত মোটা হয়ে যাচ্ছে, এত কমবয়সেই যে ডায়াবিটিস ধরতে শুরু করেছে অনেকের, তাকে ঠেকাতে গেলেও কিন্তু ছোটবেলায় খেলাধুলো করা দরকার। খেললে মোটা হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে। দৌড়োদৌড়ি করে খেললে ডোপামিন হরমোন ক্ষরণ হয় শরীরে, যাতে করে মন খুব চাঙ্গা থাকে। এখন তো আবার ছোটরাও বড় বেশি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। মন ভাল থাকছে না তাদের। তাই খেলাধুলোয় ফিরে আসা আজকের দিনে খুব জরুরি হয়ে উঠেছে।
খেললে স্ট্রেস কমে যায় ম্য়াজিকের মতো। শরীরের চর্চা হলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। যার ফলে এনডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয় বেশি করে। স্ট্রেস কমাতে এই হরমোন ভীষণ কার্যকরী। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত খেলা ধুলো করলে মনঃসংযোগও বাড়ে। তাতে করে আখেরে লাভই হয়। মনোনিবেশ করার অভ্য়ন্তরীণ যে সার্কিট রয়েছে আমাদের শরীরে, শরীরচর্চার ফলে তা সক্রিয় হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, স্মৃতিশস্তি বাড়াতেও খেলাধুলোর ভূমিকা রয়েছে। খেলাধুলো ছোটদের মধ্য়ে হতাশা নেওয়ার সীমা বা ফ্রাসট্রেশন টলারেন্স লিমিট বাড়ায়। খেলায় হারজিৎ আছে। ওঠাপড়া আছে। জীবনেও হারজিৎ আছে, ওঠাপড়া আছে। তাই পরবর্তীকালে জীবনে কখনও কিছু না-পেলে বা ব্যর্থ হলে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ার ভাবনাও মনে আসে না, যদি খেলাধুলোর মধ্য়ে দিয়ে সেই মনোভাব তৈর হয় ছোট থেকেই। আর সবচেয়ে বড় কথা, ইনডোর গেমসের ভার্চুয়াল জগৎ কিন্তু কোনও বন্ধু দেয় না। যা একমাত্র দেয় মাঠ কিম্বা রাস্তার খেলাধুলো।